img

ইউক্রেনে ৬৩৭ দিনে নিহত ১০ হাজার, গাজায় ৪৭ দিনে ১৪ হাজার

প্রকাশিত :  ০৫:০৭, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

ইউক্রেনে ৬৩৭ দিনে নিহত ১০ হাজার, গাজায় ৪৭ দিনে ১৪ হাজার

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং গাজায় দখলদার ইসরাইলের আক্রমণের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উভয় যুদ্ধেই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে বিশ্ব। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্থাপনা। 

মৌলিক চাহিদাগুলোর সংকট দেখা দিচ্ছে। থমকে গেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। প্রতিদিনই বাড়ছে নিরস্ত্র মানুষের মৃত্যুর মিছিল। তাদের মধ্যে রয়েছে নারী, শিশুসহ অসহায় বেসামরিকরা। 

তবে গাজায় ইসরাইলের নৃশংসতা হার মানিয়েছে প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইউক্রেনের যুদ্ধকেও। ৬৩৭ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনে ১০,০০০ মানুষ (মঙ্গলবার পর্যন্ত) নিহত হলেও গাজায় মাত্র ৪৭ দিনে মৃতের সংখ্যা ১৪,০০০ ছাড়িয়েছে (বুধবার পর্যন্ত)। আলজাজিরা, সিনহুয়া।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ইউক্রেনে গত তিন মাসে অর্ধেক মৃত্যুর ঘটনা ফ্রন্টলাইনে ঘটেছে। আর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৫৬০-এর বেশি শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৮,৫০০ জনের বেশি বেসামরিক। 

অন্যদিকে গাজার মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতার মতে, গাজায় মাত্র কয়েক দিনের যুদ্ধে প্রায় ৫,৮৪০ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত নারীর সংখ্যা ৩,৯২০। পাশাপাশি প্রায় ৩৩,০০০ বেসামরিক আহত হয়েছেন। 

এমনকি ইসরাইলের অমানবীয় তাণ্ডবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৬,৮০০ জন। যাদের মধ্যে ৪,৫০০ শিশু ও নারী বোমা হামলায় বিধ্বস্ত কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে আছে। 

অন্যদিকে ইউক্রেনে জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণের প্রধান ড্যানিয়েল বেল বলছেন, ‘ইউক্রেনের কোনো জায়গাই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। যুদ্ধ এখন ২১তম মাসে প্রবেশ করছে, এখন এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’ 

একই অবস্থা গাজায়ও। ইসরাইলিরাও গাজার বেসামরিকদের অবরুদ্ধ অঞ্চলটির এদিক-ওদিক পাঠাচ্ছে। আবার আকস্মিক হামলা চালাচ্ছে স্থানান্তর পথেই। গাজার বেসামরিকদের দাবি, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। জাতিসংঘও বলছে, গাজার কোনো স্থানই নিরাপদ নয়।

গাজার জনগণকে রক্ষায় বন্দুকের ট্রিগারেই থাকবে আঙুল-হামাস : গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইল সরকারের সঙ্গে চুক্তি করলেও জনগণের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র প্রস্তুতি থাকবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাস।

বুধবার এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, আমাদের আঙুল বন্দুকের ট্রিগারেই থাকবে। জনগণকে রক্ষায় এবং দখলদার শক্তিকে পরাজিত করতে আমাদের ‘বিজয়ী’ যোদ্ধারা তৎপর থাকবে।’ 

সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ইসরাইল ও হামাস-দুই পক্ষই নিজেদের ‘বৃহত্তর লক্ষ্য অপরিবর্তিত থাকবে’ বলে ঘোষণা দিয়েছে। রয়টার্স।

img

নেই গোলা-বারুদ, সেনাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে ইউক্রেন

প্রকাশিত :  ০৫:০২, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৫:১৯, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গোলা-বারুদের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে ইউক্রেনের। গোলা-বারুদ ঘাটতির ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সেনা সদস্যরা। ভয়েস অব আমেরিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, গোলা-বারুদের ঘাটতির ফলে ৬২০-মাইল দীর্ঘ রণাঙ্গনে ইউক্রেনের অবস্থান হুমকির মুখে পড়ছে। পুরো রণাঙ্গন এখন রুশ গোলন্দাজ বাহিনীর মারাত্মক আক্রমণের মুখে।

খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যূহ হুমকির মুখে। গত চার মাস ধরে প্রতিদিন তিন দিক থেকে রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনীয় বাহিনী পূর্বাঞ্চলে দোনেৎস্ক এলাকার আভদিভকা শহর থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।

রুশ সীমান্ত থেকে দূরে, ইউক্রেনের বেশ অভ্যন্তরে আভদিভকায় ইউক্রেনীয় বাহিনী ব্যাপক প্রতিরক্ষা গড়ে তুলেছিল। রাশিয়া ২০১৪ সালে যখন প্রথম আক্রমণ চালায়, তখন থেকে আভদিভকা একটি রণাঙ্গন। আভদিভকার সুরক্ষিত সুরঙ্গ আর ট্রেঞ্চ নেটওয়ার্ক আরও পশ্চিমে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পথগুলোকে নিরাপত্তা দেয়।


আরও পড়ুন: রাশিয়ার ৩ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করল ইউক্রেন


আভদিভকা দখলের ফলে রাশিয়ার মনোবল চাঙ্গা হবে এবং এই যুদ্ধে তাদের সৈন্যরা চালকের আসনে আছে বলে ক্রেমলিনের দাবিকে সমর্থন করবে। অন্যদিকে, শহরের পতন ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য হতাশা নিয়ে আসবে, যারা গত বছরের পাল্টা অভিযানের পর শুধুমাত্র কিছু এলাকা উদ্ধার করেছে।

বাইডেন প্রশাসন আভদিভকার পতনের জন্য ইউক্রেনের জন্য ৬০০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য অনুমোদন করতে কংগ্রেসের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন যে, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে শনিবার টেলিফোনে আলাপের সময় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য অবশেষে চলে আসবে। ইউক্রেন আভদিভকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর বাইডেন জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন।

তবে সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞেস করেন, ইউক্রেন আরও এলাকা হারানোর আগেই কংগ্রেসে সমঝোতা হবে বলে তিনি আত্মবিশ্বাসী কি না, বাইডেন উত্তর দেন, ‘না’।

আভদিভকার পতনের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে রণাঙ্গনের সবচেয়ে সক্রিয় অংশে এসোসিয়েটেড প্রেস গোলন্দাজ ইউনিটের প্রধানসহ এক ডজনের বেশি ইউক্রেনীয় কমান্ডারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা বলছেন, অস্ত্র-সরঞ্জামের ঘাটতিগত শরৎকাল থেকে আরও তীব্র হয়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রের ঘাটতির মুখে পড়ে ইউক্রেন।

পশ্চিমাদের দেওয়া দূর-পাল্লার আরটিলারির সরবরাহ অনেক কমে গেছে। এর ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পক্ষে রুশ বাহিনীর গভীরে, যেখানে তাদের ভারী সরঞ্জাম আর সৈন্য সমবেত করা হয়, সেখানে আক্রমণ করা সম্ভব হচ্ছে না।


আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না’


কয়েক সপ্তাহ ধরে রণাঙ্গন জুড়ে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা গোলা-বারুদের মারাত্মক অভাবের অভিযোগ করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আরটিলারি ইউনিট তাদের প্রয়োজনের মাত্র ১০ শতাংশ সরবরাহ নিয়ে লড়াই করছে। শেল বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে তারা তাদের ইউনিটগুলোকে শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার নির্দেশ দিচ্ছে।

তবে রণাঙ্গনে কমান্ডাররা বলেন, এই নীতি দিয়ে তাদের শত্রুপক্ষকে থামিয়ে দেয়া সম্ভব না, যাদের অনেক বেশি গোলা-বারুদ সরবরাহ আছে। নতুন সামরিক সাহায্য ছাড়া আভদিভকার পতনের পুনরাবৃত্তি অন্য জায়গায় দেখা যাবে বলে উদ্বেগ এখন বাড়ছে।

অত্যন্ত সুরক্ষিত শহর থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা গত বছরের বাখমুতের জন্য লড়াইয়ের পর রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় বিজয় নিয়ে এসেছে। এর ফলে, ক্রেমলিনের বাহিনী আরও পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারবে, কম সুরক্ষিত ইউক্রেনীয় এলাকার আরও গভীরে। সামরিক ব্লগারদের মতে, আরও পূর্বে রেলওয়ে জংশন পক্রভস্ক রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে।

রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তা এবং ব্লগাররা বলছে, আভদিভকা দখলের ফলে রুশ-দখলকৃত দোনেৎস্ক শহরের উপর হুমকি কমিয়ে দিয়েছে।

ইউক্রেনের একটি আরটিলারি ইউনিটের কমান্ডার খরব্রাই বলেন, ‘এই মুহূর্তে গোলাবারুদের ঘাটতি বেশ সিরিয়াস। আমাদের সব সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে আরও আসছে, কিন্তু আমরা সেটা আসতে দেখি না। ইউনিটের প্রয়োজনের মাত্র ৫-১০ শতাংশ গোলা-বারুদ অবশিষ্ট আছে।

তিনি বলেন, এই অবস্থা তার বাহিনীর কার্যকরভাবে আক্রমণ করে হারানো এলাকা পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। আরও মারাত্মক, পদাতিক সৈন্যদের জন্য আরটিলারি সাপোর্ট না থাকায় আরও বেশি সৈন্য হতাহত হচ্ছে।


আরও পড়ুন :জেলেনস্কির কঠোর সমালোচনায় ইউক্রেনের সেনাপ্রধান


এই রিপোর্টের জন্য এপি যেসব অফিসারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের পুরো নাম প্রকাশ করা হয়নি। একটি হাউইটযার ইউনিটকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভ্যালেরি। যুদ্ধ করার মত অস্ত্র নেই বলে জানান তিনি। এই বাহিনী ন্যাটো-ব্যবহৃত ১৫৫ মিলিমিটার শেল ব্যবহার করে। কোনো রুশ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তাদের প্রতি ইউনিটের প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০টি শেল দরকার। এখন তাদের কাছে প্রয়োজনের ১০ শতাংশ রয়েছে মজুদ রয়েছে।

আভদিভকায় মোতায়েন ইউক্রেনীয় সৈন্যরা বলছে, শহরের পতনের আগে রাশিয়া গোলা-বারুদের ঘাটতি কাজে লাগাতে তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। সাঁজোয়া গাড়ির কলাম দিয়ে আক্রমণ না করে তারা পদাতিক সৈন্যর ছোট ছোট গ্রুপ পাঠিয়ে ইউক্রেন বাহিনীর সাথে আরও কাছ থেকে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। এর ফলে, তাদেরকে আটকে রাখতে ইউক্রেন বাহিনীকে পাঁচ গুন বেশি গোলা-বারুদ ব্যবহার করতে হয়েছে।

ইউক্রেনের ১১০ ব্রিগেডের একজন সেনা চাকলুন বলেন, ‘শত্রু বাহিনী আমাদের সক্ষমতা বুঝতে পারে এবং সেটা দিয়ে তারা সফল হতে পেরেছে।’

রণাঙ্গনের অন্যান্য সেক্টরে এই গোলাবারুদের ঘাটতি কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুপিয়ান্সক লাইন বেশ দুর্বল। গত কয়েকমাস ধরে রাশিয়া এই এলাকা লক্ষ্য করে তাদের আক্রমণ জোরদার করছে। তারা চেষ্টা করছে এই গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র আবার দখল করতে, যেটা তারা ২০২২ সালের শরৎকালে হারিয়েছিল।


আরও পড়ুন : ইউক্রেন সংঘাতকে দুই ভাইয়ের গৃহযুদ্ধ বললেন পুতিন


কুপিয়ান্সক-এ ৪৪ ব্রিগেডের কমান্ডার ইউরি বলছেন, তার গোয়েন্দা বিমান ইউনিটগুলো অনেক দূর-পাল্লার লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে, যাদের মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার মর্টার আর গ্রেনেড নিক্ষেপের কামান। কিন্তু যথেষ্ট গোলা-বারুদ তাদের নেই, তাই তারা সেই লক্ষ্যগুলোতে আঘাত হানতে পারছে না। সেটা না করে, তার শত্রু কিভাবে সৈন্য সমবেত করছে, সেটা দূর থেকে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

অলেক্সান্দের বলেন, এই মুহূর্তে তার যথেষ্ট পরিমাণ গোলাবারুদ আছে। তিনি কুপিয়ান্সক-এ ৩২ ব্রিগেডের একটি ব্যাটালিওনের কমান্ডার। তিনি বলেন, ‘কিন্তু সব নির্ভর করছে রাশিয়ার দিক থেকে তীব্রতার উপর। তারা যদি মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এই লাইন ধরে রাখা সম্ভব হবে না।’

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ এর আরও খবর