img

দুবছর ধরে লিবিয়ায় বন্দি আসলামকে ৪৮ লাখেও ফেরাতে পারেনি পরিবার

প্রকাশিত :  ০৬:৫৭, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

দুবছর ধরে লিবিয়ায় বন্দি আসলামকে ৪৮ লাখেও ফেরাতে পারেনি পরিবার

মাদারীপুরের যুবক আসলাম অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন । দালালের প্রলোভনে পড়ে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে লিবিয়ায় বন্দি আছেন তিনি। মুক্তির আশায় দফায় দফায় ৪৮ লাখ টাকা দিয়েও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি তাকে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের হুগলী এলাকার মানবপাচারকারী দালাল জামাল প্রামাণিকের হাতে এই বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে দিয়েও কোনো ফল হয়নি। উল্টো ছেলের মুক্তির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসহায় বাবা-মা। সর্বশেষ আরও টাকা দাবি করলে বাধ্য হয়ে দালালের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন আসলামের মা আসমা আক্তার।

এদিকে, দালাল জামাল প্রামাণিক ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পরিবারটি। তারা দালালকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন এবং প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন সন্তানের মুক্তির জন্য।

আসলাম ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া এলাকার দিনমজুর আব্দুল হালিম চৌকিদারের ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার বড়। দেশে থাকতে দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি।

পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দালাল জামাল প্রামাণিক আসলামের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকায় ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখান। ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি জামালের মাধ্যমেই আসলাম লিবিয়ায় পৌঁছান। কিন্তু এরপর শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন। তাকে মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, এবং মুক্তির নামে দফায় দফায় আদায় করা হয় মোট ৪৮ লাখ টাকা।

এই টাকা তুলতে গিয়ে পরিবারটি জমি বিক্রি ও ধার-দেনা করে সর্বস্ব হারিয়েছে। এখন সেই ধার শোধ করতে না পেরে পাওনাদারদের চাপের মুখে দিন কাটছে তাদের। এত টাকা দেওয়ার পরও জামাল আবারও নতুন করে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এতে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে আসলামের মা আসমা আক্তার আদালতে চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

আসলামের মা আসমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, জমি বিক্রি আর ধার করে ৪৮ লাখ টাকা দিয়েছি ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য। দালাল জামাল দুই বছর ধরে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় রেখে অমানুষিক নির্যাতন করছে। এখন আবার নতুন করে টাকা চাইছে, না দিলে ভয় দেখায়। সরকারের কাছে অনুরোধ, দালালের বিচার চাই এবং আমার ছেলেকে যেন জীবিত ফিরে পাই।

গতকাল পরিবারটি জামালের বাড়িতে গেলে দেখতে পায়, সে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে জামাল প্রামাণিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কোনো টাকা নেই নাই, টাকা নিয়েছে মামুন নামের এক ছেলে, তার বাড়ি আলগী গ্রামে। তবে পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে বললেও বিস্তারিত কিছু জানাননি। উল্টো সাংবাদিকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায়ে ফোন কেটে দেন।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে, আমরা তদন্ত করছি। এখন পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, প্রতিটির ক্ষেত্রেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

img

মোটরসাইকেলে এসে বিএনপি কর্মীকে গুলি করে হত্যা

প্রকাশিত :  ১৬:১২, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় বিএনপির কর্মী আবদুল হাকিম চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তার সঙ্গে থাকা আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত ব্যক্তির পরিচয় এখনও জানা যায়নি। মঙ্গলবার (সন্ধ্যা) রাউজানের মদুনাঘাট ব্রিজ সংলগ্ন হাটহাজারী এলাকায় এই হামলা ঘটে।

নিহত হাকিম রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচ খাইন এলাকার মৃত আলী মদন চৌধুরীর ছেলে। তিনি বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী অনুসারী ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে দলীয় কোনো পদ ছিল না। হাকিম ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাউজানের বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানা, আজ বিকেল পাঁচটার দিকে হাকিম তার গ্রামের খামারবাড়ি থেকে অপর একজনসহ তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কাপ্তাই সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি চালকের পাশের আসনে বসা ছিলেন। মদুনাঘাট এলাকায় পৌঁছালে একদল মোটরসাইকেল আরোহী অস্ত্রধারী তার গাড়ির পিছু নেয়। এরপর পানি শোধনাগার এলাকায় পৌঁছালে তারা আবদুল হাকিমের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকেন। এ সময় দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ দুজনকে উদ্ধার করে নগরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুল হাকিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহম্মদ বলেন, নিহত আবদুল হাকিম বিএনপির সমর্থক ও একজন ব্যবসায়ী। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। 

একটি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে নিহত আবদুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। ২০২২ সালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভূপেষ বড়ুয়ার হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পুনরায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে সক্রিয় হন। কর্ণফুলী এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। 

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাটি হাটহাজারী থানা অংশে হয়েছে, আবার রাউজান থানার শেষ অংশে। দুই থানা-পুলিশ যৌথভাবে খুনিদের আটকে চেষ্টা করছে।


বাংলাদেশ এর আরও খবর