img

বারোতম মুসলিম চ্যারিটি রান ১২ অক্টোবর : চলছে প্রস্তুতি, কমিউনিটিতে উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত :  ০৬:৫৯, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

বারোতম মুসলিম চ্যারিটি রান ১২ অক্টোবর : চলছে প্রস্তুতি, কমিউনিটিতে উৎসবের আমেজ

লন্ডন, ৩ অক্টোবর ২০২৫: ইস্ট লন্ডন মসজিদের গ্রীষ্মকালীন সবেচেয়ে বড় আয়োজন মুসলিম চ্যারিটি রান এই বছর ১২ বছর উদযাপন করছে। আগামী ১২ অক্টোবর রোববার পূর্ব লন্ডনের ভিক্টোরিয়া পার্কে অনুষ্ঠিত হবে ১২তম চ্যারিটি রান । চ্যারিটি রান সফল করতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে । প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষ নাম রেজিস্ট্রেশন করছেন।

৩ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এক প্রেস ব্রিফিং। এতে বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল হাই মুর্শেদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুনায়েদ আহমদ, সিনিয়র ইমাম সৈয়দ আনিসুল হক ও ফান্ডরেইজিং ম্যানেজার তজম্মুল আলী।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আগামী ১২ অক্টোবর রোববার কমিউনিটির ছেলে, বুড়ো, যুবা সকল বয়সের পুরুষ এবং অনুর্ধ ১২ বছর বয়সী মেয়েদের সপরিবারে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ভিক্টোরিয়া পার্কে সমবেত হওয়ার আহবান জানানো হয়।

মসজিদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মুর্শেদ বলেন, এই বছরের চ্যারিটি রানে দেড় হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি। তবে অংশগ্রহণ করলেই যে দৌড়াতে হবে এমন নয়, আপনারা পরিবার-পরিজন নিয়ে পার্কে আসবেন এবং দর্শক হয়ে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দেবেন । তিনি বলেন এটা শুধু চ্যারিটি রানই নয়, এটি কমিউনিটির একটি বড় উৎসব। পুরুষ ও সব বয়সের ছেলেদের পাশাপাশি এবার ১২ বছরের কম বয়সী মেয়েরাও অংশগ্রহণ করতে পারবে। তিনি বলেন, চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণ করে যে সাওয়াব অর্জন করবেন, দর্শকের সারিতে দাঁড়ালেও আল্লাহ তায়ালা সেই সাওয়াবের অংশীদার করবেন বলে আমরা আশাবাদী । 

মসজিদের সিইও জুনায়েদ আহমদ বলেন, মুসলিম চ্যারিটি রানের মাধ্যমে আমরা এ পর্যন্ত ১.২ মিলিয়ন পাউণ্ড সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। শুধু গত বছরের (২০২৪ সাল) চ্যারিটি রানে ৩৫টি সংগঠন মিলে ১৯৫ হাজারের বেশি ফান্ডরেইজ করেছে।

তিনি বলেন, শুধু দৌড়ে অংশগ্রহণ আর ফান্ডরেইজিংয়ের মধ্যেই মুসলিম চ্যারিটি রানের কার্যকারিতা সীমাবদ্ধ নয়, বরং এই চ্যারিটি রানে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে শতাধিক রানার পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের ম্যারাথমে অংশগ্রহণ করেছে । আমরা আশা করছি, ১২ অক্টোবর কমিউনিটির মানুষ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্কে সমবেত হবেন এবং উৎসবে মেতে ওঠবেন। তিনি বলেন, এই রান শুধু একটি ফান নয়, এতে নিয়মিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানুষ স্বাস্থ্যকর জীবন-যাবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠতে পারছে।

ইমাম সৈয়দ আনিসুল হক বলেন, শুধু মসজিদে বসে উপাসনা করা কিংবা ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার মধ্যেই ইসলাম সীমাবদ্ধ নয়। বরং আমরা বিভিন্নভাবে ইসলামের কাজ করতে পারি। মুসলিম চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণও একটি ইসলামিক কাজ। কারণ এই চ্যারিটি রানের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কমিউনিটির মানুষের  মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে পারছি । তাছাড়া মানুষের যদি নিয়ত সঠিক থাকে তাহলে প্রতিটি পদক্ষেপে সে সাওয়াব অর্জন করে।

ফান্ডরেইজিং ম্যানেজার তজম্মুল আলী চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণে আগ্রহীদের যথাশীঘ্র নাম রেজিস্ট্রেশনের আহবান জানান । তিনি ১২ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে সকলকে ভিক্টোরিয়া পার্কে জড়ো হওয়ার হওয়ার আহবান জানান, যাতে মূল দৌড় শুরু হওয়ার আগে ওয়ার্ম-আপ সেশনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

তিনি বলেন আগ্রহীরা মাত্র ১০ পাউণ্ড ফি পরিশোধ করে যে কোনো চ্যারিটির পক্ষে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করে ফান্ডরেইজ করতে পারবেন। এই ১০ পাউণ্ডের বিনিময়ে তাঁকে দেওয়া হবে মুসলিম চ্যারিটি রানের ব্র্যান্ডেড টি-শার্ট, মেডেল, বিজয়ীদের ট্রফি ও অন্যান্য লজিস্টিক সেবা। চ্যারিটি রানে শিশুদের জন্য থাকবে বাউন্সি ক্যাসল,বাঞ্জি রান, গ্ল্যাডিয়েটর গেইম, ফুটবল শুটিংসহ নানা ধরনের স্টল।

উল্লেখ্য, এবারের চ্যারিটি রানে পার্টনার ও স্পনসর হিসেবে রয়েছে আমানাহফাই, লন্ডন ম্যারাথন, হিউম্যান আপিল, সুন্নাহ মাস্ক, সরকার সলিসিটর্স, কুরআন বাউন্ড, গ্লোবাল এহসান রিলিফ, এম.এ.টি.ডাব্লিউ প্রজেক্ট, মুসলিম হেল্প ইউকে, সালাম চ্যারিটি, আগোশ ইউকে, হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন, জিআরটি ইউকে, মুসলিম চ্যারিটি, আল খায়ের ফাউন্ডেশন, হেল্প ইয়াতীম ও মুসলিম এইড।

কমিউনিটি এর আরও খবর

img

গাজায় গণহত্যা বন্ধে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের আবেগঘন ও জোরালো বক্তব্য

প্রকাশিত :  ১৪:২০, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৪৫, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

"আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা কখনো দেখিনি: মেয়র লুৎফুর

"আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা কখনো দেখিনি: মেয়র লুৎফুর

- "ফিলিস্তিনী জনগণ কি এমন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়, যে রাষ্ট্র তাদেরকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে?"

- প্রয়োজন প্রকৃত অর্থে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা⁠

- দুই বছরে প্রায় ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত, যার মধ্যে অন্তত ১৮,৫০০ শিশু 

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বুধবার ফুল কাউন্সিল মিটিং-এ গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে এক আবেগঘন ও শক্তিশালী বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তেও নারী ও শিশুরা অবিরামভাবে বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছে। তাদের যন্ত্রণার গভীরতা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা আমি কখনও দেখিনি।

মেয়র জানান, গত দুই বছরে প্রায় ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে অন্তত ১৮,৫০০ শিশু, নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেস্কা আলবানেসের মতে, প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত ৬৮০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি বলেন, এটিকে গণহত্যা হিশেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের পরও গাজায় যা ঘটছে তাকে গণহত্যা বলতে লেবার সরকার এখনো অস্বীকার করছে। বরং ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আমাদের দরকার বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং প্রকৃত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা।

মেয়র আরও বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সরকার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করেছে। এই স্বীকৃতি আসতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ৭৮ বছর। কিন্তু ফিলিস্তিনী জনগণ কি এমন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়, যে রাষ্ট্র তাদেরকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে?

তিনি জোর দিয়ে বলেন,গাজার গণহত্যাকে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জরুরি প্রয়োজন এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হওয়া। আমাদের যা কিছু করার সামর্থ্য আছে, তা দিয়ে আমাদের এই গণহত্যা থামাতে হবে।

মেয়র লুৎফুর স্মরণ করিয়ে দেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল প্রথম সংস্থাগুলোর একটি, যারা কর্মজীবী মানুষের অবসর তহবিলকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত কোম্পানি থেকে মুক্ত রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইহুদি ও মুসলিম কমিউনিটির প্রতি সংহতি: 

মেয়র একই সময়ে ম্যানচেস্টারের হিটন পার্ক সিনাগগে সংঘটিত ইহুদি-বিরোধী হামলা এবং ইস্ট সাসেক্সের একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, ইহুদিদের সর্বাপেক্ষা পবিত্র দিন ইয়োম কিপুরে এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়। একইভাবে ইসলামবিদ্বেষমূলক ঘৃণাজনিত অপরাধও আমাদের সমাজে কোনো স্থান পেতে পারে না। 

তিনি নিহতদের পরিবার এবং যুক্তরাজ্যের ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ঐক্যের বার্তা: বিভাজনের মুখেও ঐক্যবদ্ধ টাওয়ার হ্যামলেটস: 

মেয়র বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৈচিত্র্যময় বারা, কিন্তু একই সঙ্গে অন্যতম ঐক্যবদ্ধও। এখানে ৯০% মানুষ বলেন, ভিন্ন পটভূমির মানুষদের সঙ্গে তারা ভালোভাবে মিশে চলেন। 

সম্প্রতি কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত টাউন হল ওপেন ডে ও ব্রিক লেন কারি ফেস্টিভ্যালে প্রায় ২২,৫০০ মানুষ একত্রিত হয়েছেন — যা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন মেয়র।

বাসিন্দাদের জন্য বিনিয়োগ, কাউন্সিলের অঙ্গীকার: 

মেয়র তার কিছু উন্নয়ন কাজের কথাও তুলে ধরেন। বলেন, ২০২২ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমার লক্ষ্য একটাই — আমাদের বাসিন্দাদের জন‍্য বিনিয়োগ করা। 

তিনি উল্লেখ করেন, কাউন্সিল ইতিমধ্যে সার্বজনীন বিনামূল্যের স্কুল খাবার, বিনামূল্যে ইউনিফর্ম অনুদান, বিনামূল্যে হোম কেয়ার, সাশ্রয়ী হাউজিং, শীতকালীন জ্বালানি ভাতা, বিনামূল্যে সাঁতারসহ নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

কমিউনিটি এর আরও খবর