img

তারক মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে কমিউনিটি ওপেন ডে অনুষ্ঠিত: ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের স্বত:স্ফুর্ত উপস্থিতি

প্রকাশিত :  ১০:৩৭, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

ভবিষ্যতে আরও বৃহৎপরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা

তারক মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে কমিউনিটি ওপেন ডে অনুষ্ঠিত: ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের স্বত:স্ফুর্ত উপস্থিতি
গত ৫ই অক্টোবর (রবিবার), তারক মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত কমিউনিটি ওপেন ডে এক প্রাণবন্ত ও আনন্দঘন পরিবেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের স্বত:স্ফুর্ত উপস্থিতিতে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলা এই দিনব্যাপী আয়োজনটি স্থানীয় মুসলিম ও অমুসলিম কমিউনিটির মানুষের সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধির এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে স্থান পায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলরবৃন্দ, পুলিশ কর্মকর্তা, চিকিৎসক, সমাজসেবী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী এবং কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সকলে পরিবার-পরিজনসহ এসে দিনটি উৎসবমুখরভাবে উপভোগ করেন।

বহুমুখী আয়োজন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ
ওপেন ডে উপলক্ষে ছিল ১৪টি খাবার ও কাপড়ের স্টল, যেখানে স্থানীয় উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবীরা অংশগ্রহণ করেন। দর্শনার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পরিবেশিত হয় বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খাবার, যা সবাই অত্যন্ত উপভোগ করেন ও প্রশংসা করেন।
শিশুদের জন্য ছিল বাউন্সি ক্যাসেল, মেহেদি, গেমস কর্নারসহ নানা বিনোদনের আয়োজন, যা ছোটদের মধ্যে উৎসাহ ও আনন্দের সঞ্চার করে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা ও মানবসেবার উদ্যোগ
এবারের ওপেন ডের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা স্টল (ঋৎবব ঐবধষঃয ঈযবপশ-ঁঢ় ঝঃধষষ)। স্থানীয় ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা উপস্থিত থেকে রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বিএমআইসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
এই মানবিক উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ অত্যন্ত উৎসাহ ও ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন, যা কমিউনিটির কল্যাণমূলক ও জনসেবামূলক কার্যক্রমের প্রতি আস্থার প্রতিফলন।

অমুসলিমদের অংশগ্রহণ ও সম্প্রীতির বার্তা
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অমুসলিম অতিথিরা মসজিদ পরিদর্শন করেন এর বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেন। তারা মসজিদের সামাজিক, শিক্ষামূলক ও মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এমন উন্মুক্ত আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।

সমাপনী বক্তব্য ও শুভেচ্ছা বার্তা
অনুষ্ঠানের শেষে তারক মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সিরাজ আলী উপস্থিত সকল অতিথি, স্বেচ্ছাসেবক ও সহযোগীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমরা গর্বিত যে আমাদের মসজিদ আজ পুরো কমিউনিটির মিলনস্থল হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।”
বিখ্যাত আলেম মুফতি আব্দুল মুন্তাকিম ওপেন ডের সফল আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, “এই ধরনের কার্যক্রম সমাজে সম্প্রীতি, বোঝাপড়া ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবেশ সৃষ্টি করে। আমি তারক মুসলিম সেন্টারের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।”

বিশিষ্ট অতিথি ও কমিটির উপস্থিতি
তারক মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সিরাজ আলী ও জয়েন্ট সেক্রেটারী নাফি আহমেদ চৌধুরীর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুফতি আব্দুল মুনতাক্বিম, তারক কাউন্সিলের সাবেক মেয়র কাউন্সিলর কায়সার আব্বাস, তারক মুসলিম সেন্টারের ভাইস-চেয়ারম্যান মুরাদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান শায়েস্তা মিয়া, এসিস্টেন্ট ট্রেজারার সাখাওয়াত হোসাইন চৌধুরী, অর্গানাইজিং সেক্রেটারী বদরুল আলম, ইমাম হাফিজ মাওলানা সৈয়দ আসিফ আহমদ, মোহাম্মাদ ওয়াহিদ হক, সাহাব মিয়া, আজির উদ্দিন, ডা: মোহাম্মদ আকরাম, ডা: মোহাম্মদ নূর বাশার, ডিষ্ট্রিক নার্স হোসনা বেগম হক, জাহিদ আলী, সাইফুল ইসলাম, আবু বিহারী, তোফায়েল আহমেদ রাসেল, মি: কণা, সাদিক চৌধুরী, আইটি স্পেশালিস্ট মাওলানা নোমান আহমদ ও দ্যা সানরাইজ টুডে’র ডিজিটাল নিউজ এডিটর ফজলু মিয়াসহ মসজিদ কমিটি ও কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের দ্বায়িত্বশীলবৃন্দ।

কমিউনিটি এর আরও খবর

img

গাজায় গণহত্যা বন্ধে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের আবেগঘন ও জোরালো বক্তব্য

প্রকাশিত :  ১৪:২০, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৭:২২, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

"আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা কখনো দেখিনি: মেয়র লুৎফুর

-  “ফিলিস্তিনী জনগণ কি এমন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়, যে রাষ্ট্র তাদেরকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে?”

- “প্রয়োজন প্রকৃত অর্থে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা⁠।”

- “দুই বছরে প্রায় ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত, যার মধ্যে অন্তত ১৮,৫০০ শিশু।”

-------------------------------------------------------------------------------------

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বুধবার ফুল কাউন্সিল মিটিং-এ গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে এক আবেগঘন ও শক্তিশালী বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তেও নারী ও শিশুরা অবিরামভাবে বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছে। তাদের যন্ত্রণার গভীরতা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা আমি কখনও দেখিনি।

মেয়র জানান, গত দুই বছরে প্রায় ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে অন্তত ১৮,৫০০ শিশু, নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেস্কা আলবানেসের মতে, প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত ৬৮০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি বলেন, এটিকে গণহত্যা হিশেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের পরও গাজায় যা ঘটছে তাকে গণহত্যা বলতে লেবার সরকার এখনো অস্বীকার করছে। বরং ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আমাদের দরকার বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং প্রকৃত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা।

মেয়র আরও বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সরকার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করেছে। এই স্বীকৃতি আসতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ৭৮ বছর। কিন্তু ফিলিস্তিনী জনগণ কি এমন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়, যে রাষ্ট্র তাদেরকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে?

তিনি জোর দিয়ে বলেন,গাজার গণহত্যাকে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জরুরি প্রয়োজন এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হওয়া। আমাদের যা কিছু করার সামর্থ্য আছে, তা দিয়ে আমাদের এই গণহত্যা থামাতে হবে।

মেয়র লুৎফুর স্মরণ করিয়ে দেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল প্রথম সংস্থাগুলোর একটি, যারা কর্মজীবী মানুষের অবসর তহবিলকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত কোম্পানি থেকে মুক্ত রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইহুদি ও মুসলিম কমিউনিটির প্রতি সংহতি 

মেয়র একই সময়ে ম্যানচেস্টারের হিটন পার্ক সিনাগগে সংঘটিত ইহুদি-বিরোধী হামলা এবং ইস্ট সাসেক্সের একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, ইহুদিদের সর্বাপেক্ষা পবিত্র দিন ইয়োম কিপুরে এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়। একইভাবে ইসলামবিদ্বেষমূলক ঘৃণাজনিত অপরাধও আমাদের সমাজে কোনো স্থান পেতে পারে না। 

তিনি নিহতদের পরিবার এবং যুক্তরাজ্যের ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ঐক্যের বার্তা: বিভাজনের মুখেও ঐক্যবদ্ধ টাওয়ার হ্যামলেটস

মেয়র বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৈচিত্র্যময় বারা, কিন্তু একই সঙ্গে অন্যতম ঐক্যবদ্ধও। এখানে ৯০% মানুষ বলেন, ভিন্ন পটভূমির মানুষদের সঙ্গে তারা ভালোভাবে মিশে চলেন। 

সম্প্রতি কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত টাউন হল ওপেন ডে ও ব্রিক লেন কারি ফেস্টিভ্যালে প্রায় ২২,৫০০ মানুষ একত্রিত হয়েছেন — যা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন মেয়র।

বাসিন্দাদের জন্য বিনিয়োগ, কাউন্সিলের অঙ্গীকার

মেয়র তার কিছু উন্নয়ন কাজের কথাও তুলে ধরেন। বলেন, ২০২২ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমার লক্ষ্য একটাই — আমাদের বাসিন্দাদের জন‍্য বিনিয়োগ করা। 

তিনি উল্লেখ করেন, কাউন্সিল ইতিমধ্যে সার্বজনীন বিনামূল্যের স্কুল খাবার, বিনামূল্যে ইউনিফর্ম অনুদান, বিনামূল্যে হোম কেয়ার, সাশ্রয়ী হাউজিং, শীতকালীন জ্বালানি ভাতা, বিনামূল্যে সাঁতারসহ নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

কমিউনিটি এর আরও খবর