img

‘তুমি সবসময় নেগেটিভ’ — ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর উত্তপ্ত ফোনালাপ

প্রকাশিত :  ০৬:৩৫, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:২২, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

‘তুমি সবসময় নেগেটিভ’ — ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর উত্তপ্ত ফোনালাপ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে গাজা যুদ্ধ শেশের উদ্দেশ্যে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত ফোনালাপ হয়েছে। ট্রাম্প আংশিক সম্মতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও ইহুদিবাদী নেতানিয়াহু তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গাজা যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের আংশিক সম্মতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ট্রাম্প নিজে। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিষয়টিকে একেবারেই ভিন্নভাবে দেখেছেন। এই মতভেদ নিয়েই দুজনের মধ্যে এক পর্যায়ে উত্তপ্ত ফোনালাপ হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, গত শুক্রবার হামাস যখন ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে আংশিক সম্মতি জানায় তখনই ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ফোন করে বলেন, এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু নেতানিয়াহু জবাবে বলেন, ‘এটা উদযাপনের কিছু নয়, এর কোনো অর্থ নেই।’

এতে ট্রাম্প চরম বিরক্ত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি বুঝি না, কেন তুমি সবসময় এত নেতিবাচক।’ এর মধ্যে একটি অশালীন শব্দও ব্যবহার করেন তিনি। পরে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেন, ‘এটা একটা জয়, এটা গ্রহণ করো।’ (I don't know why you're always so f***ing negative. This is a win. Take it.)

একজন মার্কিন কর্মকর্তা এক্সিওস-কে বলেন, এই সংলাপ দেখিয়েছে—নেতানিয়াহুর আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্প যুদ্ধ শেষের দিকে এগোতে এবং হামাসের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করতে কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

হামাস তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি, তবে যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে প্রস্তাবের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে বলেও জানায় সংগঠনটি।

অন্যদিকে নেতানিয়াহু তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘প্রত্যাখ্যান’ হিসেবে দেখছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করতে চান, যাতে হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখানোর সুযোগ না পায়।

কিন্তু ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, হামাস হয়তো পরিকল্পনাটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবে। তাই আংশিক সম্মতিকে তিনি ‘চুক্তির সুযোগ’ হিসেবে দেখেন।

দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ফোনালাপে নেতানিয়াহুর শীতল প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পকে হতাশ করে। তাই তিনি কঠোর সুরে প্রতিক্রিয়া জানান। পরে এক্সিওস-এর সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নেতানিয়াহুকে বলেছিলাম, এটি তোমার জয়ের সুযোগ। শেষ পর্যন্ত সে এতে রাজি হয়েছে। তার রাজি হওয়া ছাড়া উপায়ও নেই—আমার সঙ্গে থাকলে রাজি হতেই হয়।’

ফোনালাপের অল্প সময় পরই ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বিমান হামলা বন্ধের আহ্বান জানান। তিন ঘণ্টা পর নেতানিয়াহু বিমান হামলা বন্ধের নির্দেশ দেন।

যদিও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা পরে বলেন, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর অবস্থান এখন সম্পূর্ণ এক। নেতানিয়াহু এক ভিডিওবার্তায় ট্রাম্পকে প্রশংসা করেন এবং তার বক্তব্যের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান মেলানোর চেষ্টা করেন।

তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, ফোনালাপের পরিবেশ ছিল ‘উত্তপ্ত ও কঠিন’। তবুও দুই নেতা শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছান। তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘অবশেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি চান, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এ লক্ষ্য অর্জনে।’

হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

শনিবার ট্রাম্প আবারও দুই পক্ষকে দ্রুত চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানান এবং হামাসকে সতর্ক করেন—যদি তারা বিলম্ব করে, পুরো চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।

একইদিন ইসরায়েল গাজার কিছু অংশ থেকে প্রাথমিক সেনা প্রত্যাহারের হালনাগাদ মানচিত্রে সম্মত হয়। সোমবার মিশরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার অংশ নেবেন।

কমিউনিটি এর আরও খবর

img

গাজায় গণহত্যা বন্ধে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের আবেগঘন ও জোরালো বক্তব্য

প্রকাশিত :  ১৪:২০, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৪৫, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

"আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা কখনো দেখিনি: মেয়র লুৎফুর

"আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা কখনো দেখিনি: মেয়র লুৎফুর

- "ফিলিস্তিনী জনগণ কি এমন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়, যে রাষ্ট্র তাদেরকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে?"

- প্রয়োজন প্রকৃত অর্থে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা⁠

- দুই বছরে প্রায় ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত, যার মধ্যে অন্তত ১৮,৫০০ শিশু 

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বুধবার ফুল কাউন্সিল মিটিং-এ গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে এক আবেগঘন ও শক্তিশালী বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তেও নারী ও শিশুরা অবিরামভাবে বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছে। তাদের যন্ত্রণার গভীরতা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা আমি কখনও দেখিনি।

মেয়র জানান, গত দুই বছরে প্রায় ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে অন্তত ১৮,৫০০ শিশু, নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেস্কা আলবানেসের মতে, প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত ৬৮০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি বলেন, এটিকে গণহত্যা হিশেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের পরও গাজায় যা ঘটছে তাকে গণহত্যা বলতে লেবার সরকার এখনো অস্বীকার করছে। বরং ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আমাদের দরকার বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং প্রকৃত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা।

মেয়র আরও বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সরকার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করেছে। এই স্বীকৃতি আসতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ৭৮ বছর। কিন্তু ফিলিস্তিনী জনগণ কি এমন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়, যে রাষ্ট্র তাদেরকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে?

তিনি জোর দিয়ে বলেন,গাজার গণহত্যাকে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জরুরি প্রয়োজন এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হওয়া। আমাদের যা কিছু করার সামর্থ্য আছে, তা দিয়ে আমাদের এই গণহত্যা থামাতে হবে।

মেয়র লুৎফুর স্মরণ করিয়ে দেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল প্রথম সংস্থাগুলোর একটি, যারা কর্মজীবী মানুষের অবসর তহবিলকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত কোম্পানি থেকে মুক্ত রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইহুদি ও মুসলিম কমিউনিটির প্রতি সংহতি: 

মেয়র একই সময়ে ম্যানচেস্টারের হিটন পার্ক সিনাগগে সংঘটিত ইহুদি-বিরোধী হামলা এবং ইস্ট সাসেক্সের একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, ইহুদিদের সর্বাপেক্ষা পবিত্র দিন ইয়োম কিপুরে এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়। একইভাবে ইসলামবিদ্বেষমূলক ঘৃণাজনিত অপরাধও আমাদের সমাজে কোনো স্থান পেতে পারে না। 

তিনি নিহতদের পরিবার এবং যুক্তরাজ্যের ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ঐক্যের বার্তা: বিভাজনের মুখেও ঐক্যবদ্ধ টাওয়ার হ্যামলেটস: 

মেয়র বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৈচিত্র্যময় বারা, কিন্তু একই সঙ্গে অন্যতম ঐক্যবদ্ধও। এখানে ৯০% মানুষ বলেন, ভিন্ন পটভূমির মানুষদের সঙ্গে তারা ভালোভাবে মিশে চলেন। 

সম্প্রতি কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত টাউন হল ওপেন ডে ও ব্রিক লেন কারি ফেস্টিভ্যালে প্রায় ২২,৫০০ মানুষ একত্রিত হয়েছেন — যা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন মেয়র।

বাসিন্দাদের জন্য বিনিয়োগ, কাউন্সিলের অঙ্গীকার: 

মেয়র তার কিছু উন্নয়ন কাজের কথাও তুলে ধরেন। বলেন, ২০২২ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমার লক্ষ্য একটাই — আমাদের বাসিন্দাদের জন‍্য বিনিয়োগ করা। 

তিনি উল্লেখ করেন, কাউন্সিল ইতিমধ্যে সার্বজনীন বিনামূল্যের স্কুল খাবার, বিনামূল্যে ইউনিফর্ম অনুদান, বিনামূল্যে হোম কেয়ার, সাশ্রয়ী হাউজিং, শীতকালীন জ্বালানি ভাতা, বিনামূল্যে সাঁতারসহ নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

কমিউনিটি এর আরও খবর