img

বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমে এআই প্রযুক্তির সমন্বয়: প্রয়োজনীয়তা ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

প্রকাশিত :  ১৩:৪৬, ০১ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমে এআই প্রযুক্তির সমন্বয়: প্রয়োজনীয়তা ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

রেজুয়ান আহম্মেদ

বিশ্ব দ্রুত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করছে। উন্নত দেশগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ দমন, তদন্ত, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এখন বাংলাদেশের পুলিশের কার্যক্রমেও এআই প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে, যা অপরাধ দমন থেকে নাগরিক সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম। এই নিবন্ধে, এআই প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা, কার্যকারিতা, এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশে এর প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করা হবে।

কেন এআই প্রযুক্তি প্রয়োজন বাংলাদেশ পুলিশের জন্য?

 ১. অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং নগরায়নের কারণে অপরাধের ধরণ ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। এআই প্রযুক্তি অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণ করে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।

 ২. দক্ষতা বাড়ানো

এআই প্রযুক্তি পুলিশের প্রচলিত পদ্ধতিগুলোকে আরও দ্রুত, নির্ভুল এবং কার্যকর করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যানুয়াল অনুসন্ধানের পরিবর্তে ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করলে সময় এবং শ্রম উভয়ই কমে আসে।

 ৩. সাইবার অপরাধ দমন

বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এআই প্রযুক্তি এসব অপরাধ দ্রুত শনাক্ত এবং দমন করতে সহায়তা করতে পারে।

 ৪. বৈশ্বিক মানদণ্ড অর্জন

আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক করতে হলে এআই প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক।

কিভাবে এআই প্রযুক্তি পুলিশের কার্যক্রমে যুক্ত করা সম্ভব?

 ১. অপরাধ পূর্বাভাস সিস্টেম

এআই-এর মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা বিশ্লেষণ করে কোনো এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাব্য সময় ও স্থান পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব।

 ২. সিসিটিভি অ্যানালিটিক্স এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন

সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর সঙ্গে এআই চালিত ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হলে সন্দেহভাজনদের দ্রুত শনাক্ত করা যাবে।

 ৩. ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং ক্রাইম ম্যাপিং

অপরাধের ধরণ ও এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণ করে একটি ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি করা যায়। এর মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারবে কোন এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

 ৪. চ্যাটবট এবং নাগরিক সেবা উন্নয়ন

নাগরিকদের জন্য এআই-চালিত চ্যাটবট তৈরি করা যেতে পারে, যা অভিযোগ গ্রহণ, তথ্য প্রদান এবং সাধারণ সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।

 ৫. স্মার্ট পেট্রোলিং এবং ড্রোন ব্যবহার

ড্রোন এবং এআই প্রযুক্তির সাহায্যে জনবহুল এলাকায় নজরদারি করা এবং পুলিশ টহল কার্যক্রম আরও সুশৃঙ্খল করা সম্ভব।

 ৬. ডিজিটাল ফরেনসিকস

ডিজিটাল ডিভাইস এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সংগঠিত অপরাধের তদন্তে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।

যেসব দেশে পুলিশ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই পুলিশের কার্যক্রমে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলতা অর্জন করেছে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

 ১. যুক্তরাষ্ট্র

Predictive Policing System (পূর্বাভাসমূলক পুলিশিং) ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এআই ব্যবহার করে অপরাধের সময় ও স্থান নির্ধারণে সাহায্য করে।

 ২. যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ পুলিশ ফেসিয়াল রিকগনিশন এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে অপরাধী শনাক্তকরণ এবং অপরাধ প্রবণতা বিশ্লেষণ করে।

 ৩. চীন

চীন ব্যাপকভাবে এআই চালিত সিসিটিভি এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় জনসমাবেশ এবং অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে নজরদারি করে।

 ৪. ভারত

ভারতের পুলিশ সিসিটিভি এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধীদের শনাক্ত করছে।

 ৫. সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুর সাইবার অপরাধ দমন এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশে এআই প্রযুক্তি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান

চ্যালেঞ্জ:

 ১. প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব

 ২. উন্নত অবকাঠামোর ঘাটতি

 ৩. তথ্য গোপনীয়তার ঝুঁকি

সমাধান:

 ১. প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: পুলিশের সদস্যদের এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করতে প্রশিক্ষণের আয়োজন।

 ২. অবকাঠামো উন্নয়ন: উন্নত সাইবার নিরাপত্তা ও ডেটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

 ৩. বিশেষ বাজেট বরাদ্দ: সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ।

এআই প্রযুক্তি বাংলাদেশের পুলিশের কার্যক্রমে যুক্ত হলে অপরাধ দমন, তদন্ত, এবং নাগরিক সেবার মান বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশেও একটি আধুনিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর পুলিশ বাহিনী তৈরি করা সম্ভব। এর মাধ্যমে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি নয়, বরং একটি নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে গাজার আকাশে মার্কিন ড্রোন

প্রকাশিত :  ০৯:৩৮, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার আকাশে নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের  সামরিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ছে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ড্রোন অভিযান ইসরাইলের সম্মতিতেই পরিচালিত হচ্ছে এবং এলাকাটির স্থল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এবং দুজন ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরাত দিয়ে জানানো হয়, নজরদারির মূল লক্ষ্য হলো দক্ষিণ ইসরাইলে অবস্থিত সিভিল-মিলিটারি কোঅর্ডিনেশন সেন্টার-কে সহায়তা করা।

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ওই সমন্বয় কেন্দ্রে প্রায় ২০০ জন মার্কিন সেনা কাজ করছেন। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এর আগেও মার্কিন সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার আকাশে বিশেষ ধরনের এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন উড়িয়েছিল।  ইসরাইলি বাহিনীকে জিম্মিদের অবস্থান শনাক্ত করতে সহায়তা করার জন্য এ অভিযান চালানো হয়। 

নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হয়তো যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি থেকে সরে যেতে পারেন।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর আরও খবর