img

দেশেই ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ, সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত :  ০৬:১৪, ০৮ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫৩, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

দেশেই ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ, সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন এক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। আক্রান্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। এমন পরিস্থিতিতে দেশেই ডেঙ্গুর ভ্যাক্সিন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও আইসিডিডিআরবি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাক্সিন তৈরির এই উদ্যোগ সফল হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, দেশে এখন আর বৃষ্টির মৌসুমে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব হয়ে থাকে তা নয়, সারা বছর কমবেশি ডেঙ্গুতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে বৃষ্টির মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। এ সময় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার দুটোই ব্যাপক হারে বাড়ছে। ডেঙ্গু জ্বরের বংশ বিস্তারকারী এডিস মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। আর এখন ডেঙ্গু মশা শুধু কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, সব বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা থেকে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে। তবে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব রাজধানীসহ শহরকেন্দ্রিক সর্বাধিক। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটিই বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বছরে ডেঙ্গু মৌসুমে আক্রান্ত অর্ধ লক্ষাধিক ও ২১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রাজধানীর দুইটি সিটি করপোরেশনে মশক নিধনে বিশেষজ্ঞ কমিটি রয়েছে। এ বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নিয়ে বছরের দুই-এক বার বৈঠক হলেও তাদের সুপারিশ কখনো আলোরমুখ দেখেনি বলে একাধিক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য এ সত্যতা স্বীকার করেছেন। ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশনগুলোতে মশা নিধন কর্মসূচির একই অবস্থা। এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে মে মাস থেকে শীত আশার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ বৃষ্টি মৌসুমে এডিস মশার বংশ বিস্তার শুরু হয়। ঐ সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম বলা হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুরহার বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে বিছানা পাওয়া দুষ্কর। শুধু ডেঙ্গু নয়, অন্যান্য রোগী  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দৈনিক শুধু শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এ ছাড়া ২ হাজার ৬০০ বেডের এ হাসপাতালে রোগী ৪ সহস্রাধিক। ডেঙ্গুর পাশাপাশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা সামাল দেওয়া চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের আইসিইউর প্রয়োজন হয়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অন্যান্য রোগীদের প্রচণ্ড চাপ প্রতিদিন থাকে। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগীদের চাপ যুক্ত হয়েছে। ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যেও রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া মুগদা, কুর্মিটোলা ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ সারা দেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা একই।

মশা নিধন কার্যক্রম একাই সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা ঠিক নয়। বাড়ির মালিক, বাসাবাড়ি বাসিন্দাদের এর দায়িত্ব কম নয়। বাসাবাড়িতে ও আঙ্গিনায় জমা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। নিজেরাই নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা সম্ভব।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়ে চলছে। বৃষ্টির মৌসুম ছাড়া সারা বছর ডেঙ্গুতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও আইসিডিডিআর,বির সহযোগিতায় একটি ওষুধ কোম্পানি ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। কার্যক্রম চলমান বলে জানা যায়। এ ছাড়া বিশ্বের কয়েকটি দেশে ডেঙ্গুর ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল চলমান। কার্যকর ভ্যাক্সিন বাজারজাত শুরু হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু জ্বর একটি চিহ্নিত মশার কামড়ে হয়। এ মশার বংশ বিস্তার নিধন করলে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এডিস মশা নিধনে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। অন্যথায় প্রতি বছরে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। একই মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া হয়। প্রতিরোধ ও প্রতিকারে উত্তম ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটিই ব্যাপক হারে বাড়তে থাকবে বলে তিনি জানান। ভ্যাক্সিন যদি কার্যকরভাবে বাজারজাত করা হয় এটা হবে বাংলাদেশের জন্য সফল।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয় একটি কমিটি রয়েছে। বছরে দুই-এক বার মিটিং হয়। ঐ মিটিংয়ে অনেক সুপারিশ করা হয়। একটিও বাস্তবায়ন হয়নি বলে একাধিক সদস্য জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শেফালি বেগম উক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য।

উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছে মশক নিধন সংক্রান্ত জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি। তিন সদস্যের কমিটির অন্যতম সদস্য হলেন—মহাখালী জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার। এই সিটি করপোরেশনে বিশেষজ্ঞ কমিটি অনেক পরামর্শ দিয়ে থাকে। একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে এক জন সদস্য জানান। তা-ও বছরের দুই-এক বার সভা হয়। মশক নিধনের ব্যবস্থাপনার করুণ অবস্থা—তা সহজে বোঝা যায় বলে একজন সদস্য জানিয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শ্যামলী ২৫০ বেডের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালের প্রধান ডা. আয়েশা আকতার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধই উত্তম ব্যবস্থা। কার্যকর টিকা যখন বাজারজাত করা হবে তখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে তিনি জানান।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন বলেন, দেশে ডেঙ্গু প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন তৈরির উদ্যোগ একটি সুখবর। এটা সফল হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর আরও খবর

img

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন মার্কিন বিজ্ঞানী

প্রকাশিত :  ১০:৪৩, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩৪, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

পদার্থ বিজ্ঞানে এবছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন তিন বিজ্ঞানী। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর)পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। 

বৈদ্যুতিক বর্তনীর মধ্যে‌ ‌‌‌স্থূল কোয়ান্টাম যান্ত্রিক টানেলিং এবং ‌শক্তির কোয়ান্টাইজেশন আবিষ্কারের জন্য জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরেট এবং জন এম. মার্টিনিসকে এই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। তারা ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক।

নোবেলজয়ী এই বিজ্ঞানীরা পাবেন একটি নোবেল মেডেল, একটি সনদপত্র এবং ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর অর্থমূল্য প্রায় ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। যেসব বিভাগে একাধিক নোবেলজয়ী থাকবেন, তাদের মধ্যে এই অর্থ সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। 

এর আগে  সোমবার (৬ অক্টোবর) চিকিৎসায় নোবেল প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ বছর চিকিৎসায় যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন ম্যারি ই. ব্রুনকো, ফ্রেড রামসডেল ও শিমন সাকাগুচি। মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যপ্রণালী বিষয়ে গবেষণার জন্য দুই মার্কিন ও এক জাপানি গবেষক এই পুরস্কার পেয়েছেন।