img

পাকিস্তানে আধাসামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে বন্দুকধারীদের হামলা, নিহত ৩

প্রকাশিত :  ০৪:৫১, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৫:০৫, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানে আধাসামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে বন্দুকধারীদের হামলা, নিহত ৩

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারে আধাসামরিক বাহিনীর একটি সদর দফতরে বন্দুকধারীরা সোমবার হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনকে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পেশোয়ারে ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারি–এফসি সদর দপ্তরে হামলা হয়েছে।

পেশোয়ার ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ অফিসার ডা. মিয়ান সাঈদ আহমদ বলেন, ‘এফসি সদর দপ্তর হামলার মুখে। আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছি এবং পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলা হয়েছে।’

নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানায়, এফসি সদর দপ্তরের মূল ফটকে এক আত্মঘাতী হামলাকারী নিজের শরীরে বাঁধা বিস্ফোরক নিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে। বিস্ফোরণের পর গুলির শব্দও শোনা গেছে। সূত্রগুলো আরও জানায়, এ পর্যন্ত দুই জন সশস্ত্র হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, ‘প্রথম আত্মঘাতী হামলাকারী সদর দপ্তরের মূল প্রবেশপথে আক্রমণ চালায়, আর দ্বিতীয়জন ভেতরে প্রবেশ করে।’

সম্প্রতি পাকিস্তানে বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেছে। ২০২২ সালের নভেম্বর সরকার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তান–টিটিপি নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের ওপর হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর এসব ঘটনার হার আরও বাড়ে।

গত সেপ্টেম্বর খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু জেলায় এফসি সদর দপ্তরে হামলার চেষ্টা নস্যাৎ করে ছয়জন সৈন্য নিহত এবং পাঁচজন হামলাকারী মারা যায়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, এ হামলা ‘ইন্ডিয়ান প্রক্সি ফিতনা–আল–খাওয়ারিজ’ নামের একটি গোষ্ঠী চালায়। সরকার যেটিকে নিষিদ্ধ টিটিপি–সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের বর্ণনা করতে ব্যবহার করে।

আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

img

কী এজেন্ডা নিয়ে ভারত সফরে পুতিন?

প্রকাশিত :  ০৯:১৬, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ইউরোপের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে থাকা সময়ে ভারত সফরে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দিনের এই সফরে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত তেল ও অস্ত্র বিক্রি-সংক্রান্ত আলোচনাকেই কেন্দ্র করেই পুতিনের এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভারতের মাটিতে পা রাখার আগেই ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক সামরিক চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়ার পার্লামেন্ট। চুক্তিটি বলছে, দুই দেশের সামরিক বাহিনী একে অপরকে লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দেবে। অর্থাৎ এক দেশের বাহিনী অপর দেশে গিয়ে সামরিক পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে।

ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত সামরিক সহায়তা তথা ভারতের বিশাল বাজার ধরতেই এই রাষ্ট্রীয় সফর। রাশিয়ার জন্য ভারতের অর্থনীতি, বাজার ও কৌশলগত দিক থেকে বড় সুযোগ। ১.৪ বিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা, আঞ্চলিক অবস্থান এবং সাম্প্রতিক জটিলতার কারণে দেশটি রাশিয়ার দিকে বেশি ঝুঁকেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন। জানা গেছে, দুই দেশের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনেও অংশ নেবেন। সফরের সময় দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে একাধিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি সই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এই সফর এক উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে হচ্ছে। যেখানে দুটি দেশেই পশ্চিমা চাপে আছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর জন্য ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। একই সময়ে ওয়াশিংটন প্রশাসন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রায় দশক ধরে ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। পুতিন ও মোদির সম্পর্কও ব্যক্তিগতভাবে উষ্ণ। রাশিয়ার পণ্য ও জ্বালানির বিশাল বাজার বিশেষত তেলের ক্ষেত্রে ভারত বড় বাজার। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারতের মাত্র ২.৫% তেল আমদানি ছিল রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও মূল্যছাড়ের সুযোগ নিয়ে সেই পরিমাণ বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছায়। এতে ভারত লাভবান হলেও ওয়াশিংটন ক্ষুব্ধ হয়।

গত অক্টোবরে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করে, যুক্তি দেয়—রাশিয়া থেকে তেল কিনে ক্রেমলিনের যুদ্ধ তহবিলকে শক্তিশালী করছে ভারত। ফলে ভারতের রুশ তেল অর্ডার কমে আসে। এই সফরে পুতিন তেল রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়টিও অগ্রাধিকার দিতে পারেন।

সোভিয়েত আমল থেকেই ভারত রাশিয়ার বৃহৎ অস্ত্রগ্রাহক। এবারও মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর এসেছে, দেশটি রাশিয়া থেকে আধুনিক যুদ্ধবিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে পারে।

এছাড়া রাশিয়ায় শ্রম সংকট দেখা দেওয়ায় ভারতীয় দক্ষ কর্মীদেরও একটি সম্ভাব্য উৎস হিসেবে দেখছে মস্কো। অন্যটি হচ্ছে ভূমির অবস্থান। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ক্রেমলিন এর পাল্টা বার্তা দিতে চায় এশিয়াকে কাছে টেনে। পুতিনের ভারত সফর ঠিক সেই বার্তাই বহন করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মাস তিনেক আগে পুতিন চীন সফরে গিয়ে শি জিন পিং ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একসঙ্গে ছবি তুলেছিলেন। বিশ্লেষক আন্দ্রি কোলেসনিকভ মনে করেন, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়া রাশিয়ার জন্য ‘বড় ব্যর্থতা ও বড় ক্ষতি।’ তবে দিল্লি ও মস্কোর নেতারা তেল, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও শ্রমসহ বিভিন্ন খাতে সমঝোতা জোরদার করার চেষ্টা করবেন—এমনটিই অনুমান বিশ্লেষকদের।