আগামীকাল রোববার বাজারে আস্থার প্রত্যাবর্তন: কেন বাড়তে পারে ASIATICLAB–সহ বহু শেয়ারের দাম
✍️ রেজুয়ান আহম্মেদ, ২৯ নভেম্বর ২০২৫: বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের নীরবতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে—লেনদেনের কমতি, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট এবং সামগ্রিক আর্থিক পরিবেশের অনিশ্চয়তা বাজারকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ধীরে ধীরে যে ইতিবাচক সেন্টিমেন্ট তৈরি হচ্ছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে কয়েকটি শক্তিশালী ফান্ডামেন্টাল–সমৃদ্ধ কোম্পানি। বিশেষত আসিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড (ASIATICLAB)–এর সাম্প্রতিক আর্থিক তথ্য ও মূল্য আচরণ বিশ্লেষণ করে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে—আগামীকাল রোববার শেয়ারটির দামে স্বাভাবিক একটি উত্থান দেখা যেতে পারে।
বাজারে সামান্য অস্থিরতা থাকলেও বিভিন্ন সূচক ও পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে—ASIATICLAB–সহ অন্যান্য ভ্যালু শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে পারে। কেন বাড়তে পারে এবং কোন তথ্য সেই সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করছে—সবকিছু নিয়েই আজকের এই বিশ্লেষণ।
১) শক্তিশালী মূল্যসংশোধন—‘ডিপ–বায়’ সুযোগ তৈরি
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারটির সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৫১.৮০ টাকায়, যা আগের দিনের তুলনায় ১.১৫% কম।
গত—
৩০ দিনে মোট পতন: ১০%,
১৫ দিনে: ৭%,
৩ মাসে: প্রায় ৪%।
অর্থাৎ শেয়ারটি টানা একটি স্বাস্থ্যকর সংশোধনের মধ্য দিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিকে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা “ডিপ–বায় জোন” হিসেবে বিবেচনা করেন—যখন শেয়ারের মূল্য তার প্রকৃত ফান্ডামেন্টাল ভ্যালুর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে আসে।
শেয়ারটির ৫২–সপ্তাহের সর্বোচ্চ ছিল ৬৫ টাকা; বর্তমান মূল্য তার তুলনায় প্রায় ২০% কম।
ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বাভাবিক মনস্তত্ত্ব তৈরি হয়—
“আগে না কিনলেও সমস্যা নেই, এখন তো সস্তা—একটু কিনে রাখা যায়।”
এ কারণে রোববার ক্রয়চাপ বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
২) ছয় মাস ও এক বছরের অসাধারণ গ্রোথ ট্রেন্ড
স্বল্পমেয়াদে সংশোধন থাকলেও মধ্য–দীর্ঘমেয়াদি পারফরম্যান্স এখনো শক্তিশালী—
৬ মাসে বৃদ্ধি: +৫২%,
১ বছরে বৃদ্ধি: +৬৬%।
এটি প্রমাণ করে কোম্পানির মৌলিক ভিত্তি দুর্বল নয়, বরং প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল। তাই সংশোধনের পর স্বাভাবিকভাবেই রিবাউন্ডের প্রত্যাশা তৈরি হয়।
৩) দৃঢ় ফান্ডামেন্টাল—P/E, EPS ও NAV বিনিয়োগ–বান্ধব
ডিএসইর তথ্য:
P/E Ratio: ১০.৪৪ → ফার্মা সেক্টরে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য,
EPS (শেষ ৪ কোয়ার্টার): ৪.৯৬ → আয়ের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি,
NAV প্রতি শেয়ার: ৫৫.৩৩ টাকা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—
বর্তমান দাম NAV–এর নিচে, অর্থাৎ কোম্পানিটি অবমূল্যায়িত অবস্থানে রয়েছে। NAV–এর নিচে থাকা শেয়ার সাধারণত দ্রুত বিনিয়োগকারীদের নজরে আসে।
৪) ইপিএস–এর ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি
EPS–এর সাম্প্রতিক ডেটা:
Q1–২০২৫: ১.২৪
Q3–২০২৫: ০.৭৫
EPS বৃদ্ধি মানে কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে ভালো ব্যবসা করছে—যা ভবিষ্যৎ আয়, ক্যাশ ফ্লো ও লভ্যাংশ সম্ভাবনা শক্তিশালী করে। বাজার খোলার পর এমন তথ্য ক্রয়চাপ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫) শক্তিশালী লেনদেন—লিকুইডিটি সক্রিয়
ভলিউম: ৫,৮৫,৩৭৬ শেয়ার,
উচ্চ লিকুইডিটি মানে শেয়ারটি কেনা–বেচা সহজ—যা বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আস্থা দেয়।
৬) শেয়ারহোল্ডিং প্যাটার্ন—পাবলিক শেয়ার বৃদ্ধি
পাবলিক শেয়ার বৃদ্ধি: +০.৩৩%,
ইনস্টিটিউশনাল কমেছে: −০.৩৩%,
পরিচালক: ৪০.৭১%।
পাবলিক শেয়ারহোল্ডিং বৃদ্ধি সাধারণত বাড়তি চাহিদার ইঙ্গিত দেয়—যা বাজারে ইতিবাচক সেন্টিমেন্ট তৈরি করে।
৭) সার্কিট লো–এর কাছে অবস্থান—রিভার্সালের সম্ভাবনা বেশি
সার্কিট লো: ৪৭.২০
বর্তমান মূল্য: ৫১.৮০
অর্থাৎ শেয়ারটি নিচের সীমার কাছাকাছি। বিনিয়োগকারীদের ধারণা—এ অবস্থান থেকে শেয়ার খুব বেশি নিচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে “বটম–ফিশিং” প্রবণতা সক্রিয় হয়।
৮) ওভারসোল্ড রেঞ্জ—টেকনিক্যাল রিবাউন্ড সম্ভাবনা
৩০ দিনে ১০% ও ১৫ দিনে ৭% পতনের ফলে RSI ও MACD–এর মতো সূচকে ওভারসোল্ড সিগন্যাল দেখা যাচ্ছে। টেকনিক্যাল ট্রেডাররা সাধারণত এমন অবস্থায় নতুন এন্ট্রি নেন—যা রোববার ক্রয়চাপ বাড়াতে পারে।
৯) সেক্টরাল সাপোর্ট—ফার্মা সেক্টরের স্থিতিশীলতা
ASIATICLAB ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত—বাংলাদেশের সবচেয়ে স্থিতিশীল ও লাভজনক সেক্টরগুলোর একটি। অনিশ্চয়তার সময়ে বিনিয়োগকারীরা এই সেক্টরকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করেন।
১০) সপ্তাহান্তের আগের বিশ্লেষণ—রোববার বাড়তে পারে ক্রয়চাপ
সাপ্তাহিক ছুটির সময়ে বিনিয়োগকারীরা—
ডেটা বিশ্লেষণ করেন,
গ্লোবাল মার্কেট পর্যবেক্ষণ করেন,
পরবর্তী সপ্তাহের পরিকল্পনা ঠিক করেন।
এই সময়ে ভ্যালু–পিক শেয়ারগুলো তাদের নজরে পড়ে। ASIATICLAB–এর বর্তমান দাম সস্তা হওয়ায় রোববার সকাল থেকেই ক্রয়কিউ দেখা যেতে পারে।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণ: রোববার উত্থানের সম্ভাবনা শক্তিশালী
ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে—
NAV–এর নিচে → অবমূল্যায়িত,
EPS বাড়ছে → শক্তিশালী আয়,
লেনদেন সক্রিয় → ভালো লিকুইডিটি,
৬ মাস–১ বছরের গ্রোথ → স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি,
সেক্টর শক্তিশালী → ফার্মা Safe Zone,
টানা সংশোধন → ডিপ–বায় জোন,
টেকনিক্যাল ওভারসোল্ড → রিবাউন্ড সম্ভাবনা,
পাবলিক শেয়ার বৃদ্ধি → চাহিদা বাড়ছে।
➡ সব মিলিয়ে, আগামীকাল রোববার ASIATICLAB–সহ বেশ কয়েকটি ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের দামে শক্তিশালী উত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।
➡ বাজার সার্বিকভাবে সবুজ থাকলে স্বল্পমেয়াদে ২–৪% পর্যন্ত রিবাউন্ড দেখা যেতে পারে।


















