img

মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত: ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত

প্রকাশিত :  ১২:২১, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১২:২২, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত: ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত

লন্ডন, ৫ অক্টোবর ২০২৫: বৃটেনের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম সংগঠন মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ)-এর দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) রবিবার (৫ অক্টোবর ২০২৫) লন্ডন মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৫–২০২৭ সেশনের জন্য ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ সরাসরি ভোটে পুনরায় এমসিএ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল মতিন চৌধুরী। পবিত্র কোরআন থেকে দারস পেশ করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাইখ আব্দুল কাইয়ুম।

সভায় নতুন সদস্যদের শপথ পাঠ করান নবনির্বাচিত সভাপতি হামিদ আজাদ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংগঠনের সদস্যদের ত্যাগ ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আমাদের দায়িত্ব শুধু সংগঠন পরিচালনা নয়, বরং আল্লাহর বান্দা হিসেবে সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা।” তিনি ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

শাইখ আব্দুল কাইয়ুম তাঁর বক্তব্যে ইসলামী নেতৃত্বের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “ইসলামী ঐতিহ্যে নেতৃত্বের পদ চাওয়া নিষিদ্ধ—এটি দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার পথ খুলে দেয়।”

অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সুশৃঙ্খল ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া।

এই নির্বাচন পরিচালনা করেন বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনার হাবিবুর রহমান। নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন —

ড. আব্দুল বারী, আয়ুব খান, ড. আশরাফ মাহমুদ, এবং রাহেলা চৌধুরী।

সকল প্রার্থী ও সদস্যরা নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও দক্ষতার প্রশংসা করেন।

উপস্থিত প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা জানান, এবারের নির্বাচন ছিল এমসিএ’র ইতিহাসে অন্যতম সুশৃঙ্খল ও অংশগ্রহণমূলক একটি প্রক্রিয়া।

দুপুরের বিরতির পর সভাপতি হামিদ হোসেন আজাদ সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং দ্বিবার্ষিক রিপোর্টের উপর আলোচনা হয়, যা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।

পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও রিজিয়ন সভাপতি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে।

২০২৫–২০২৭ সেশনের শুরা কাউন্সিল সদস্যগণ:

আবদুদ দাইয়ান মোহাম্মদ ইউনুস, আনসার মুস্তাকিম, দিলোয়ার হোসেন খান, ড. আবদুস সালাম আজাদি, ড. দিলদার চৌধুরী, হাফিজ আবুল হোসেন খান, হাসান সিরাজুস সালেকিন, হাসান কাওসার আহমেদ, মোঃ আব্দুল মুমিন, মনোয়ার হোসেন, মুহাম্মদ মুস্তাক আহমেদ, মুসাদ্দিক আহমেদ, নেসার আহমেদ, নজমুল হোসেন, নুরুল মতিন চৌধুরী, রাজু মোহাম্মদ শিবলী, সিরাজুল ইসলাম হীরা, সৈয়দ জামিরুল ইসলাম বাবু, ড. মাহেরা রুবি, আসমা খান, ড. শিরিন সোবহানি, রওশনারা কবির, এবং আনজুমারা বেগম।

এছাড়াও ১৬ জন রিজিয়ন সভাপতি এমসিএ’র সংবিধান অনুযায়ী শুরা কাউন্সিল সদস্য হিসেবেও নির্বাচিত হন।

২০২৫–২০২৭ সেশনের রিজিয়ন সভাপতিগণ:

এফ.কে.এম শাহজাহান – লন্ডন নর্থওয়েস্ট,

সৈয়দ আহমেদ – লন্ডন ওয়েস্ট,

কাজী ফয়জুল ইসলাম পারভেজ – লন্ডন সাউথইস্ট,

আবুল হোসেন (রায়হান) – লন্ডন ইস্ট,

মোহাম্মদ জুবায়ের মিয়া – লন্ডন নর্থইস্ট,

হাসানুল বান্না – মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনালস অ্যান্ড স্টুডেন্টস,

মোঃ জয়নাল আবেদীন (লিটন) – লন্ডন সাউথওয়েস্ট,

কামাল উদ্দিন – সাউথইস্ট ইংল্যান্ড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন,

গিয়াস উদ্দিন – সাউথওয়েস্ট ইংল্যান্ড ইসলামিক সোসাইটি,

শরীফুর রহমান – ইস্ট অব ইংল্যান্ড,

রেজাউল করিম চৌধুরী – ইস্ট মিডল্যান্ড,

এস. বদরুল আলম – নর্থওয়েস্ট,

আসাদ আহমেদ – ওয়েলস,

ফরিদ মিয়া – ওয়েস্ট মিডল্যান্ড,

মাসুদুল হাসান – ইয়র্কশায়ার অ্যান্ড হাম্বার,

জাহিদ ইসলাম – নর্থইস্ট।

সভায় ২০২৩–২০২৫ সেশনের বিভিন্ন রিজিয়নের কার্যক্রমের ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এছাড়া এমসিএ ইয়ুথ কার্যক্রমের ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়, যা উপস্থিতদের প্রশংসা অর্জন করে।

উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতিদের বক্তব্য, সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান জিলু বলেন, “এমসিএ বর্ণবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এজন্য সকলকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে হবে।”সাবেক সভাপতি দিলোয়ার হোসেন খান নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন “ইয়ুথদের উন্নয়নে সময়, মেধা ও সম্পদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।”উপদেষ্টা পরিষদের সেক্রেটারি শায়েখ মুসলেহ ফারাদি স্থানীয় দাওয়াহ কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

সমাপনী বক্তব্যে নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ বলেন, “আগামী সেশনে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, গুণগত মান ও যোগ্যতার উপর গুরুত্ব দিয়ে এমসিএকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। এমসিএ’র ‘ভিশন ২০৩০’ আমাদের কাজের মূল দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।”

কমিউনিটি এর আরও খবর

img

গাজায় গণহত্যা বন্ধে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের আবেগঘন ও জোরালো বক্তব্য

প্রকাশিত :  ১৪:২০, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৪৫, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

"আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা কখনো দেখিনি: মেয়র লুৎফুর

"আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা কখনো দেখিনি: মেয়র লুৎফুর

- "ফিলিস্তিনী জনগণ কি এমন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়, যে রাষ্ট্র তাদেরকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে?"

- প্রয়োজন প্রকৃত অর্থে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা⁠

- দুই বছরে প্রায় ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত, যার মধ্যে অন্তত ১৮,৫০০ শিশু 

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বুধবার ফুল কাউন্সিল মিটিং-এ গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে এক আবেগঘন ও শক্তিশালী বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তেও নারী ও শিশুরা অবিরামভাবে বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছে। তাদের যন্ত্রণার গভীরতা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার জীবদ্দশায় মানবজীবনের প্রতি এমন অবহেলা আমি কখনও দেখিনি।

মেয়র জানান, গত দুই বছরে প্রায় ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে অন্তত ১৮,৫০০ শিশু, নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেস্কা আলবানেসের মতে, প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত ৬৮০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি বলেন, এটিকে গণহত্যা হিশেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের পরও গাজায় যা ঘটছে তাকে গণহত্যা বলতে লেবার সরকার এখনো অস্বীকার করছে। বরং ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আমাদের দরকার বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং প্রকৃত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা।

মেয়র আরও বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সরকার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করেছে। এই স্বীকৃতি আসতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ৭৮ বছর। কিন্তু ফিলিস্তিনী জনগণ কি এমন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়, যে রাষ্ট্র তাদেরকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে?

তিনি জোর দিয়ে বলেন,গাজার গণহত্যাকে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জরুরি প্রয়োজন এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হওয়া। আমাদের যা কিছু করার সামর্থ্য আছে, তা দিয়ে আমাদের এই গণহত্যা থামাতে হবে।

মেয়র লুৎফুর স্মরণ করিয়ে দেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল প্রথম সংস্থাগুলোর একটি, যারা কর্মজীবী মানুষের অবসর তহবিলকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত কোম্পানি থেকে মুক্ত রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইহুদি ও মুসলিম কমিউনিটির প্রতি সংহতি: 

মেয়র একই সময়ে ম্যানচেস্টারের হিটন পার্ক সিনাগগে সংঘটিত ইহুদি-বিরোধী হামলা এবং ইস্ট সাসেক্সের একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, ইহুদিদের সর্বাপেক্ষা পবিত্র দিন ইয়োম কিপুরে এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়। একইভাবে ইসলামবিদ্বেষমূলক ঘৃণাজনিত অপরাধও আমাদের সমাজে কোনো স্থান পেতে পারে না। 

তিনি নিহতদের পরিবার এবং যুক্তরাজ্যের ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ঐক্যের বার্তা: বিভাজনের মুখেও ঐক্যবদ্ধ টাওয়ার হ্যামলেটস: 

মেয়র বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৈচিত্র্যময় বারা, কিন্তু একই সঙ্গে অন্যতম ঐক্যবদ্ধও। এখানে ৯০% মানুষ বলেন, ভিন্ন পটভূমির মানুষদের সঙ্গে তারা ভালোভাবে মিশে চলেন। 

সম্প্রতি কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত টাউন হল ওপেন ডে ও ব্রিক লেন কারি ফেস্টিভ্যালে প্রায় ২২,৫০০ মানুষ একত্রিত হয়েছেন — যা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন মেয়র।

বাসিন্দাদের জন্য বিনিয়োগ, কাউন্সিলের অঙ্গীকার: 

মেয়র তার কিছু উন্নয়ন কাজের কথাও তুলে ধরেন। বলেন, ২০২২ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমার লক্ষ্য একটাই — আমাদের বাসিন্দাদের জন‍্য বিনিয়োগ করা। 

তিনি উল্লেখ করেন, কাউন্সিল ইতিমধ্যে সার্বজনীন বিনামূল্যের স্কুল খাবার, বিনামূল্যে ইউনিফর্ম অনুদান, বিনামূল্যে হোম কেয়ার, সাশ্রয়ী হাউজিং, শীতকালীন জ্বালানি ভাতা, বিনামূল্যে সাঁতারসহ নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

কমিউনিটি এর আরও খবর