ভিশন-২০৩০

img

সৌদি আরবে খোলা হচ্ছে নতুন দুই মদের দোকান

প্রকাশিত :  ০৬:১১, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

সৌদি আরবে খোলা হচ্ছে নতুন দুই মদের দোকান

মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরব তার চলমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে আরও দুটি মদের দোকান চালু করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে একটি রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর বিদেশি কর্মীদের জন্য এবং অন্যটি কূটনীতিকদের জন্য তৈরি করা হবে। একে ডি-ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে বাস্তবায়ন করা ‘ভিশন-২০৩০’ কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই পরিকল্পনা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন সংস্কার–প্যাকেজের আরেকটি বড় ধাপ, যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে এবং দেশকে আরও উন্মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

গত বছর সৌদি আরব রাজধানী রিয়াদে অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য একটি মদের দোকান চালু করে—যা ৭৩ বছর আগে নিষেধাজ্ঞা জারির পর প্রথম এমন উদ্যোগ। কূটনৈতিক মহলে দোকানটির অবস্থান ‘বুজ বাঙ্কার’ নামে পরিচিত।

সূত্রগুলোর একজন জানান, ধাহরানে নতুন দোকানটি আরামকোর মালিকানাধীন একটি কম্পাউন্ডে স্থাপন করা হবে এবং সেখানে আরামকোতে কর্মরত অমুসলিম বিদেশিরাই প্রবেশাধিকার পাবেন।

আরেকটি দোকান জেদ্দায় কনস্যুলেটসমূহের কূটনীতিকদের জন্য চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

দুটি দোকানই ২০২৬ সালে খোলার কথা থাকলেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সময় জানানো হয়নি। সৌদি সরকারের গণমাধ্যম শাখা বা আরামকো—কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।

রিয়াদে চালু হওয়া দোকানটিতে সাম্প্রতিক সময়ে অমুসলিম প্রিমিয়াম রেসিডেন্সি–ধারীদেরও গ্রাহক হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। এই রেসিডেন্সি উদ্যোক্তা, বড় বিনিয়োগকারী এবং বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দেওয়া হয়।

রিয়াদ স্টোর খোলার আগে অ্যালকোহল পাওয়া যেত কূটনৈতিক ব্যাগেজ, কালোবাজার বা বাসায় নিজের তৈরি ব্যবস্থার মাধ্যমে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কুয়েত ছাড়া বেশিরভাগ দেশেই কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে অ্যালকোহল বৈধ।

অ্যালকোহল এখনও অধিকাংশ সৌদি নাগরিকের জন্য নিষিদ্ধ। তবুও বিন সালমানের সামাজিক সংস্কারের ফলে সিনেমা, কনসার্ট, মরুভূমিতে ডান্স ফেস্টিভ্যালসহ বহু কার্যক্রম এখন উন্মুক্ত হয়ে গেছে। নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি থেকে শুরু করে নারী–পুরুষের জনসমাগমে কড়াকড়ি শিথিল—সবই এই পরিবর্তনের অংশ।

অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে এবং পর্যটক ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী আকর্ষণে এই শিথিলতা সৌদি আরবের বৃহত্তর কৌশলের অংশ।

আগে একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে পর্যটন এলাকায় অ্যালকোহল বিক্রি চালুর পরিকল্পনা আছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ সে সময় এই দাবি অস্বীকার করে। তবুও বিষয়টি দেশটিতে তীব্র অনলাইন বিতর্ক সৃষ্টি করে—কারণ সৌদি রাজা ইসলামের দুই পবিত্র মসজিদের ‘খাদেম’ হিসেবেও পরিচিত।

সামাজিক উন্মুক্ততা দ্রুত এগোলেও অ্যালকোহলে শিথিলতা এখনো ধীরে ও সতর্ক গতিতে চলছে।

রেড সি গ্লোবাল প্রকল্পের অধীনে আগামী মে মাসের মধ্যে ১৭টি নতুন হোটেল খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এসব বিলাসবহুল রিসর্টে অ্যালকোহল দেওয়া হয় না।

এ মাসে পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আল-খাতিবকে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে অ্যালকোহল নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝি অনেক আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী অ্যালকোহল চান, তবে এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি।’

যখন জিজ্ঞেস করা হয় ‘এখনো হয়নি’ মানে ভবিষ্যতে পরিবর্তন আসছে কি না, তখন তিনি বলেন, ‘এটা আপনি যেভাবে ব্যাখ্যা করতে চান, করতে পারেন।’

আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

img

কী এজেন্ডা নিয়ে ভারত সফরে পুতিন?

প্রকাশিত :  ০৯:১৬, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ইউরোপের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে থাকা সময়ে ভারত সফরে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দিনের এই সফরে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত তেল ও অস্ত্র বিক্রি-সংক্রান্ত আলোচনাকেই কেন্দ্র করেই পুতিনের এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভারতের মাটিতে পা রাখার আগেই ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক সামরিক চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়ার পার্লামেন্ট। চুক্তিটি বলছে, দুই দেশের সামরিক বাহিনী একে অপরকে লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দেবে। অর্থাৎ এক দেশের বাহিনী অপর দেশে গিয়ে সামরিক পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে।

ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত সামরিক সহায়তা তথা ভারতের বিশাল বাজার ধরতেই এই রাষ্ট্রীয় সফর। রাশিয়ার জন্য ভারতের অর্থনীতি, বাজার ও কৌশলগত দিক থেকে বড় সুযোগ। ১.৪ বিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা, আঞ্চলিক অবস্থান এবং সাম্প্রতিক জটিলতার কারণে দেশটি রাশিয়ার দিকে বেশি ঝুঁকেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন। জানা গেছে, দুই দেশের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনেও অংশ নেবেন। সফরের সময় দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে একাধিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি সই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এই সফর এক উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে হচ্ছে। যেখানে দুটি দেশেই পশ্চিমা চাপে আছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর জন্য ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। একই সময়ে ওয়াশিংটন প্রশাসন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রায় দশক ধরে ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। পুতিন ও মোদির সম্পর্কও ব্যক্তিগতভাবে উষ্ণ। রাশিয়ার পণ্য ও জ্বালানির বিশাল বাজার বিশেষত তেলের ক্ষেত্রে ভারত বড় বাজার। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারতের মাত্র ২.৫% তেল আমদানি ছিল রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও মূল্যছাড়ের সুযোগ নিয়ে সেই পরিমাণ বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছায়। এতে ভারত লাভবান হলেও ওয়াশিংটন ক্ষুব্ধ হয়।

গত অক্টোবরে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করে, যুক্তি দেয়—রাশিয়া থেকে তেল কিনে ক্রেমলিনের যুদ্ধ তহবিলকে শক্তিশালী করছে ভারত। ফলে ভারতের রুশ তেল অর্ডার কমে আসে। এই সফরে পুতিন তেল রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়টিও অগ্রাধিকার দিতে পারেন।

সোভিয়েত আমল থেকেই ভারত রাশিয়ার বৃহৎ অস্ত্রগ্রাহক। এবারও মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর এসেছে, দেশটি রাশিয়া থেকে আধুনিক যুদ্ধবিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে পারে।

এছাড়া রাশিয়ায় শ্রম সংকট দেখা দেওয়ায় ভারতীয় দক্ষ কর্মীদেরও একটি সম্ভাব্য উৎস হিসেবে দেখছে মস্কো। অন্যটি হচ্ছে ভূমির অবস্থান। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ক্রেমলিন এর পাল্টা বার্তা দিতে চায় এশিয়াকে কাছে টেনে। পুতিনের ভারত সফর ঠিক সেই বার্তাই বহন করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মাস তিনেক আগে পুতিন চীন সফরে গিয়ে শি জিন পিং ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একসঙ্গে ছবি তুলেছিলেন। বিশ্লেষক আন্দ্রি কোলেসনিকভ মনে করেন, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়া রাশিয়ার জন্য ‘বড় ব্যর্থতা ও বড় ক্ষতি।’ তবে দিল্লি ও মস্কোর নেতারা তেল, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও শ্রমসহ বিভিন্ন খাতে সমঝোতা জোরদার করার চেষ্টা করবেন—এমনটিই অনুমান বিশ্লেষকদের।