img

চীন কি আসলেই ভারতের সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে?

প্রকাশিত :  ১৮:৩৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:৫৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চীন কি আসলেই ভারতের সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে?

রেজুয়ান আহম্মেদ

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে যে, চীন ভারতের সিকিম অঞ্চলের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। এই খবরটি নিয়ে ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এই খবরটি কতটা সত্য? এবং আসলেই চীন ভারতের সিকিমের অংশ দখল করেছে কিনা?

ভারত ও চীনের সীমান্ত সংঘাত দীর্ঘদিনের। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ বহু পুরনো, বিশেষ করে লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিম অঞ্চলে। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা অনেক বেড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সিকিমে চীনা বাহিনীর ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখলের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি।

ভারত সরকার চীনের সঙ্গে সীমান্ত সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখে। সিকিমে চীনের কোনো প্রকার অগ্রগতি নিয়ে এখন পর্যন্ত ভারত সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সরকার এমন কোনো খবর নিশ্চিত করেনি যে, চীন সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে।

যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটত, তাহলে তা ভারতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হতো। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের বড় ঘটনা চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে আরো জটিল করতে পারে। ফলে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লুকিয়ে রাখার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

চীনও সিকিম দখলের বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। সীমান্ত নিয়ে চীন এবং ভারতের মধ্যে আলোচনা চলছে, এবং উভয় দেশই কূটনৈতিক উপায়ে এই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। সিকিম নিয়ে চীনের দাবির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যা এই দখলের দাবি সমর্থন করে।

ভারত ও চীনের সীমান্তে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। দুই দেশের মধ্যে মাঝে মাঝেই সীমান্ত সংঘর্ষ এবং ছোটখাটো ঘটনার খবর পাওয়া যায়। তবে সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখলের মতো বড় ধরনের ঘটনা ঘটলে তা বিশ্ব রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারত। এমন খবর এখনো বিশ্বমানের সংবাদমাধ্যমে উঠে আসেনি, যা প্রমাণ করে যে এই খবরটি গুজব হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে ভিত্তিহীন খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক কারণে গুজব তৈরি করা হয়। চীন ও ভারতের মধ্যকার সীমান্ত সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কিত খবর ছড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। বিশেষ করে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরো জটিল করার জন্য এমন ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হয়ে থাকতে পারে।

চীনের সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখলের খবরটি এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নিশ্চিত করা যায়নি। ভারত সরকার কিংবা চীন সরকারও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ ধরনের কোনো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি যা এই দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে পারে। ফলে, এই খবরটি গুজব এবং ভিত্তিহীন বলে মনে হচ্ছে। তবে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রের উপর নির্ভর করে যে কোনো তথ্য বিশ্বাস করা উচিত।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে করিম চাচার খোলা চিঠি

প্রকাশিত :  ১৫:৫৭, ১৫ মার্চ ২০২৫

বিষয়: বেঁচে থাকার আকুতি—আমাদের দুঃখ দেখুন, আমাদের কষ্ট শুনুন!

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্যার,  

আমার নাম করিম মিয়া। বয়স ষাট পেরিয়েছে। গাজীপুরের এক বস্তির কুঁড়েঘরে বাস করি। জীবনের চল্লিশ বছর কাটিয়েছি গার্মেন্টসের যন্ত্রপাতির সাথে সংগ্রাম করে। দুই সন্তানকে মানুষ করেছি এই শ্রমের অর্থে। কিন্তু আজ? আজ আমি নিঃস্ব, কাজহারা এক বৃদ্ধ। শুধু আমি নই, পাশের ঘরের লতিফ, সামনের বস্তির জাহানারা—সবাই আজ অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে। আমাদের চুলোয় আগুন জ্বলে না, বাচ্চারা ক্ষুধায় কাঁদে, মায়েরা কষ্টে চোখের জল চেপে রাখে, আর পুরুষরা দিনরাত ঘুরে বেড়ায় এক মুঠো ভাতের আশায়।  

মাননীয় মহোদয়, এই গাজীপুর শহর একদিন কত প্রাণবন্ত ছিল! টঙ্গী, কালিয়াকৈর, নারায়ণগঞ্জ—সারাদিন মেশিনের আওয়াজে মুখরিত থাকত। আমরা কাজ করতাম, মজুরি পেতাম, সংসার চালাতাম। এখন? এখন সেই কারখানাগুলো শুধু মাকড়সার জালে আবৃত। মালিকেরা দেশ ছাড়ছেন, বিনিয়োগকারীরা দূরে সরে যাচ্ছেন। গত বছরেই গাজীপুরে ৩০০টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়েছে। পঞ্চাশ হাজার শ্রমিক রাস্তায়—এটা কি মানুষের বাঁচার উপায়?  

আমার মেয়ে রেশমা এইচএসসি পাস করে ঘরে বসে আছে। ওর স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। এখন তো দুই বেলা ভাত জোটানোই দায়। ছেলে শফিকের চাকরির খোঁজে পাগলের মতো ঘুরি। কারখানার গেটে দাঁড়ালে শুধু বলে, \"দেশের অবস্থা খারাপ, পরে আসুন।\" মহোদয়, \"পরে\" বলতে কী বোঝায়? আমাদের তো আজই ভাত চাই!  

আমার পাশের বস্তির অমিতের কথা শুনেছেন? সেও গার্মেন্টসে কাজ করত। কারখানা বন্ধ হওয়ার পর স্ত্রী চলে গেল, দুটি সন্তান নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। গত মাসে শুনলাম, ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মহোদয়, এভাবে কত জীবন নিভে যাবে? কত করিম-অমিত মরবে?  

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আমরা কখনো রাজনীতির দাবিদার হইনি। চাইনি সোনার বাংলা। শুধু চেয়েছি ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র। সন্তানদের মুখে ভাত দিতে পারলেই হয়। কিন্তু এখন তো সেই ভাতের গ্রাসও হাতছাড়া। আমাদের ঘামে-রক্তে গড়া এই দেশের অর্থনীতি, অথচ আমরা কেন এভাবে মরছি?  

আপনার কানে কী আমাদের কান্না পৌঁছায় না? আপনি কি জানেন, রাতের বস্তিতে কত মা অভুক্ত সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর গান গায়? আমরা তো আর কিছু চাই না—শুধু একটি সুযোগ চাই। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎটুকু বাঁচান।  

আপনার পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছি। কারখানার তালা খুলুন, বিনিয়োগকারীদের ডাকুন, আমাদের হাতে কাজ দিন। আমরা রাজনীতি বুঝি না, বুঝি শুধু ক্ষুধার যন্ত্রণা। আমাদের ভোট না পেতে চান, তাতেও আপত্তি নেই—শুধু বাঁচতে দিন।  

আপনি আমাদের শেষ ভরসা, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। এই ভরসার প্রদীপ নিভিয়ে দেবেন না।  


করিম মিয়া  

(একটি ক্ষুধার্ত, আশাহত বাতাসে দোল খেয়ে চলা জীবন)  

গাজীপুর বস্তি, ১৫ মার্চ ২০২৫