অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কায় রাজনৈতিক অস্থিরতা, কোন পথে ব্রিটেন?
রেজুয়ান আহম্মেদ
ব্রিটেনের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ উদ্বিগ্ন। একসময়ের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশটি আজ চরম সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। মুদ্রাস্ফীতি, চরম ব্যয়বৃদ্ধি, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা—সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মহল, সকলেই আতঙ্কিত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে।
অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে জ্বালানি, সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। সাধারণ মানুষ মাসিক ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা প্রতিদিনই নতুন করে চাপে পড়ছে। সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এখনও পর্যন্ত তা বাস্তব সুফল দিতে পারেনি।
অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অত্যন্ত অস্থির। সাম্প্রতিককালে সরকার পরিবর্তন, পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, এবং নীতি-নির্ধারণে জটিলতা দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা নাজুক করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভা বারবার সমালোচনার মুখে পড়ছেন। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ, এবং জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
ব্রেক্সিটের পর থেকেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট বাড়তে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্রিটেনের বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়েছে। নতুন বাণিজ্য নীতিমালা এবং ইউরোপের সাথে বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে বহু কোম্পানি ব্রিটেন থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে এবং বেকারত্বের হার বেড়েছে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও গভীরতর হয়েছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর। বিরোধী দলগুলি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, এবং অনেক অঞ্চলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। সাধারণ মানুষও সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।
সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, সাধারণ জনগণের আস্থা সরকারের প্রতি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বেশিরভাগ নাগরিক বিশ্বাস করে যে, বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে আগাম নির্বাচন এবং সরকারের পুনর্গঠন নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এমনকি কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, খুব শিগগিরই একটি নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন হতে পারে।
ব্রিটেনের এই সংকটময় পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলেও প্রভাব ফেলছে। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ব্রিটেনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই সংকট যদি অব্যাহত থাকে তবে এর প্রভাব শুধু ব্রিটেন নয়, গোটা ইউরোপের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।
ব্রিটেনের এই সংকট মুহূর্তে, সঠিক নেতৃত্ব এবং কার্যকর অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, দেশটির রাজনীতিবিদরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভুলে, অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার দিকে মনোযোগ দেবে এবং দেশের মানুষকে এই কঠিন সময় থেকে বের করে আনতে সক্ষম হবে।
এই পরিস্থিতিতে গোটা ব্রিটেন আজ একটি সিদ্ধান্তের মোড়ে দাঁড়িয়ে। অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন করা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়, ইংল্যান্ড কি এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে? নাকি আরও গভীর অস্থিরতায় ডুবে যাবে?