img

অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কায় রাজনৈতিক অস্থিরতা, কোন পথে ব্রিটেন?

প্রকাশিত :  ১৪:২১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৫৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কায় রাজনৈতিক অস্থিরতা, কোন পথে ব্রিটেন?

রেজুয়ান আহম্মেদ


ব্রিটেনের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ উদ্বিগ্ন। একসময়ের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশটি আজ চরম সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। মুদ্রাস্ফীতি, চরম ব্যয়বৃদ্ধি, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা—সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মহল, সকলেই আতঙ্কিত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে।

অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে জ্বালানি, সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। সাধারণ মানুষ মাসিক ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা প্রতিদিনই নতুন করে চাপে পড়ছে। সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এখনও পর্যন্ত তা বাস্তব সুফল দিতে পারেনি।

অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অত্যন্ত অস্থির। সাম্প্রতিককালে সরকার পরিবর্তন, পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, এবং নীতি-নির্ধারণে জটিলতা দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা নাজুক করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভা বারবার সমালোচনার মুখে পড়ছেন। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ, এবং জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

ব্রেক্সিটের পর থেকেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট বাড়তে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্রিটেনের বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়েছে। নতুন বাণিজ্য নীতিমালা এবং ইউরোপের সাথে বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে বহু কোম্পানি ব্রিটেন থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে এবং বেকারত্বের হার বেড়েছে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও গভীরতর হয়েছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর। বিরোধী দলগুলি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, এবং অনেক অঞ্চলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। সাধারণ মানুষও সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।

সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, সাধারণ জনগণের আস্থা সরকারের প্রতি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বেশিরভাগ নাগরিক বিশ্বাস করে যে, বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে আগাম নির্বাচন এবং সরকারের পুনর্গঠন নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এমনকি কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, খুব শিগগিরই একটি নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন হতে পারে।

ব্রিটেনের এই সংকটময় পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলেও প্রভাব ফেলছে। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ব্রিটেনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই সংকট যদি অব্যাহত থাকে তবে এর প্রভাব শুধু ব্রিটেন নয়, গোটা ইউরোপের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।

ব্রিটেনের এই সংকট মুহূর্তে, সঠিক নেতৃত্ব এবং কার্যকর অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, দেশটির রাজনীতিবিদরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভুলে, অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার দিকে মনোযোগ দেবে এবং দেশের মানুষকে এই কঠিন সময় থেকে বের করে আনতে সক্ষম হবে।

এই পরিস্থিতিতে গোটা ব্রিটেন আজ একটি সিদ্ধান্তের মোড়ে দাঁড়িয়ে। অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন করা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়, ইংল্যান্ড কি এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে? নাকি আরও গভীর অস্থিরতায় ডুবে যাবে?


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

যুক্তরাজ্য এর আরও খবর

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ডুবে শিশুসহ নিহত ৫ | JANOMOT | জনমত

img

মৃত্যুর ১০ বছর পর হ্যারডসের প্রাক্তন মালিক ফায়েদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশিত :  ২১:৫৬, ০১ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ২২:১৫, ০১ অক্টোবর ২০২৪

মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, লন্ডন: বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি হ্যারডস এর সাবেক মালিক মৃত মোহাম্মদ আল ফায়েদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন কোম্পানিতে কাজ করা বিশ জনের বেশি সাবেক নারী কর্মী। যৌন নির্যাতনের শিকার বিশ জন নারীর মধ্য থেকে পাঁচ জন নারী গত ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার বিবিসি ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই অভিযোগ তুলে সে সময়কার নির্যাতনের গল্প করেন। বাকিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে হ্যারডসে কর্মরত থাকাকালীন অবস্থায় কি ভাবে ফায়েদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তার বিবরণ দেন। তাঁদের মধ্যে নির্যাতনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া লিন্ডসে নামক একজন নারী বলেন, কাজের কথা বলে তাঁকে প্যারিসের হ্যারডসে পাঠানো হয়। সেখানে ফায়েদ তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।

বিবিসির গল্পে একজন নারী অভিযোগ করেন, ফায়েদ প্যারিসের হ্যারডসে তাঁর কামড়ায় তাঁকে ডেকে নিয়ে তাঁর পরিধেয় কাপড়ের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেন। ফায়েদ তাঁকে ভাল ও দামি পোষাক কেনার কথা বলে তাঁর সাথে যৌন নির্যাতনমূলক আচরণ করেন এবং এক পর্যায়ে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বিবিসি প্রাথমিক তদন্তে বিশজনেরও বেশি নারীর সাথে কথা বলে তাঁদের বক্তব্য গ্রহণের কথা জানায়। এই বিশজনের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ফায়েদ তাঁদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে যৌন হয়রানী এবং ধর্ষণ করেছেন। প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ আল ফায়েদ ১৯৮৫ সাল থেরেক ২০১০ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হ্যারডসের মালিক ছিলেন।

নারীদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে হ্যারডসের বর্তমান মালিকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, আল ফায়েদের মালিকাধীন হ্যারডস আর বর্তমান মালিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হ্যারডস এক নয়। বর্তমানের সাথে তুলনা করতে গেলে আগের সংস্থাটির চেয়ে বর্তমান সংস্থাটি সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁরা জানান, হ্যারডসে কর্মরত সকল স্তরের কর্মীদের কল্যাণে তাঁরা সব কিছুই করে থাকেন। তবে, তারা এটাও বলেন, নির্যাতিত নারীদের জন্য দীর্ঘ আইনি লড়াই এড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্যাতনের দাবিটি নিষ্পত্তি করতে চান তাঁরা।

যুক্তরাজ্য এর আরও খবর