img

বাংলাদেশি নই বলা টিউলিপ বাংলাদেশের এনআইডি-পাসপোর্টধারী

প্রকাশিত :  ০৫:৫৩, ২২ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশি নই বলা টিউলিপ বাংলাদেশের এনআইডি-পাসপোর্টধারী

জুলা্ই অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য। ২০১৭ সালে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশি নই, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি।’ তবে সরকারি নথি বলছে—টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক একজন বাংলাদেশি নাগরিক। তার নামে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)। এমনকি তিনি জমা দিয়েছেন আয়কর রিটার্নও। এসব প্রমাণপত্র বলছে, তিনি একজন বাংলাদেশি নাগরিক ও ভোটার। 

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ১০ সদস্যের এনআইডি ‘লক’ করা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর- ৫০৬৬.....৮।

এটি ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি ইস্যু করা হয়েছিল। এনআইডি অনুসারে তার নাম টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (TULIP RIZWANA SIDDIQ)। বাবার নাম শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মাতার নাম রেহানা সিদ্দিক। জন্ম তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮২।

রক্তের গ্রুপ- বি (+) পজিটিভ। ঠিকানা লেখা রয়েছে বাসা/হোল্ডিং : ৫৪, গ্রাম/রাস্তা- ০৫, ধানমণ্ডি আ/এ, ডাকঘর : নিউ মার্কেট-১২০৫, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা। যা কিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনের হোল্ডিং নম্বর।

এনআইডি ছাড়াও টিউলিপ সিদ্দিক নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত ঢাকার ভোটার। ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বরের হালনাগাদ তথ্যানুসারে তার ভোটার নম্বর ২৬১৩.......৯।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের রয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্টও। তার বাংলাদেশি প্রথম পাসপোর্ট নম্বর- কিউ .....৯৯ (Q .....99)। ২০০১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইস্যু হওয়া প্রথম পাসপোর্টে জন্মস্থান ও পাসপোর্ট প্রদানের স্থানে লন্ডন, ইউকে (যুক্তরাজ্য) উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ লন্ডনে থাকা অবস্থায় পাসপোর্টটি করা হয়। যেখানে উচ্চতা পাঁচ ফুট, পেশা- শিক্ষার্থী, নাম রিজওয়ানা সিদ্দিক, বাবা ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মাতার নাম রেহানা সিদ্দিক উল্লেখ আছে। 

ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ২০০৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হলে ২০১১ সালে নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়। সেই পাসপোর্টের নম্বর- এএ ......৪ (AA ......4)। এটি ইস্যু করা হয় ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি। পাসপোর্টের টাইপ অর্ডিনারি (ORDINARY) এবং পাসপোর্ট প্রদানের স্থান ছিল আগারগাঁও। অর্থাৎ বাংলাদেশে বসেই পাসপোর্টটি নেওয়া হয়েছে। সেখানে ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট পারসন হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকের নাম ও ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনার শাসন আমলের নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ বড় পরিসরে তদন্ত শুরু করে দুদক। তার অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে সংস্থাটি।

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর পদ থেকে পদত্যাগ  করেন। প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগের মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার একটি আদালত।

বাংলাদেশে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে লন্ডনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনো এর জবাব দেয়নি।’


যুক্তরাজ্য এর আরও খবর

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ডুবে শিশুসহ নিহত ৫ | JANOMOT | জনমত

img

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি ব্রিটেনের

প্রকাশিত :  ০৭:২১, ০৯ জুলাই ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সংকট অব্যাহত থাকলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি মঙ্গলবার পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির বৈঠকে এ মন্তব্য করেন।

ডেভিড ল্যামি তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে গঠিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএফএইচ) নামের ত্রাণ সরবরাহব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। “আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি—এই ফাউন্ডেশনকে আমরা সমর্থন করি না। এটা কার্যকরভাবে কাজ করছে না। অনেক মানুষ এখনো অনাহারে, অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন,” বলেন ল্যামি।

গত কয়েক সপ্তাহে জিএফএইচ-এর সহায়তা নিতে গিয়ে বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

বৈঠকে এক আইনপ্রণেতা ল্যামিকে প্রশ্ন করেন—‘গাজায় এই সহ্য করা অসম্ভব পরিস্থিতি চলতে থাকলে যুক্তরাজ্য কি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?’ জবাবে ল্যামি বলেন, ‘হ্যাঁ, নেব।’

গত মাসে যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের সঙ্গে একযোগে ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার দায়ে তাদের ওপর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়।

এর আগেই যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা স্থগিত করে। গাজা অবরোধ ঘিরে খাদ্যসংকট শুরু হলে লন্ডন থেকে কিছু অস্ত্র রপ্তানিও বন্ধ রাখা হয়।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এসব পদক্ষেপ এখনো প্রতীকী পর্যায়ে রয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর চাপ তৈরিতে তা যথেষ্ট নয়।

ল্যামি বৈঠকে বলেন, পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ ও দখলদারি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। তবে যুক্তরাজ্যের চাপ প্রয়োগে তেল আবিবের আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে কি না—এমন প্রশ্নে ল্যামি স্বীকার করেন, এখনো পরিবর্তন ‘অপর্যাপ্ত’।

তবুও তিনি যুক্তরাজ্যের অবস্থানকে অন্য জি–৭ দেশ বা ইউরোপের মিত্রদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী বলে দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হয়তো এককভাবে পুরো অঞ্চলকে পাল্টে দিতে পারি না, কিন্তু যা করছি, তার সঙ্গে তুলনীয় কেউ নেই।’

প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং ইসরায়েলের একটি বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। পাশাপাশি গাজায় আটক ইসরায়েলিদের অবস্থান শনাক্তে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স বহু নজরদারি অভিযানও পরিচালনা করেছে।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্য নিজ দেশেও ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে। সম্প্রতি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামের একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং বহু কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ল্যামি বলেন, যুক্তরাজ্য একতরফাভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এই স্বীকৃতি এমন এক সময়ে আসুক, যখন তা বাস্তব সমাধানের পথ তৈরি করতে সহায়ক হবে।’

তবে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ার এমিলি থর্নবেরি বলেন, অব্যাহত দখলদারি ও বসতি সম্প্রসারণের বাস্তবতায় যদি যুক্তরাজ্য আর অপেক্ষা করে, তাহলে ‘স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কিছু থাকবে না’।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ শুরু করতে পারি। না হলে, এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।’


যুক্তরাজ্য এর আরও খবর