সিলেট মহানগর বিএনপি: লোদী-ই থাকছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে, নাসিম নয়
ক’দিন ধরেই বিতর্ক দেখা দিয়েছিলো সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ নিয়ে। এ পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন দুই নেতা। অবশেষে সভাপতি পদ নিয়ে ধোঁয়াশা কেটেছে।
রেজাউল হাসান কয়েস লোদীই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রের পরবর্তী নির্দেশনা আসা পর্যন্ত নাসিম হোসাইন দলীয় কোন পদে থাকছেন না।
জানা যায়, সভাপতি পদ নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে বুধবার নাসিম হোসাইন ও রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও দলটির সিলেট-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।
ওই বৈঠকে তিনি দুই নেতাকে জানান, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কয়েস লোদীই সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন।
দুই নেতাকে নিয়ে বসার কথা জানিয়ে বুধবার রাতে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সিলেটটুডেকে বলেন, নাসিম হোসাইনের নামে দলের পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে তাকে সভাপতির দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ফলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কয়েস লোদীই সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন এটাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত।
এ প্রসঙ্গে নাসিম হোসাইন সিলেটটুডেকে বলেন, আমি তো সভাপতি আছিই। কিন্তু কেন্দ্রের দুটি চিঠি নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমাকে সভাপতির দায়িত্বও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া এখন ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শরীরও খারাপ। তাই এমন পরিস্থিতিতে এই ইস্যু নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলাপেরও সুযোগ নেই। ফলে কেন্দ্রের নির্দেশনা আসার পূর্ব পর্যন্ত কয়েস লোদী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী সিলেটটুডেকে বলেন, নাসিম হোসাইন মহানগর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি। তবে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি এখন দায়িত্বে নেই। তাই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কয়েস লোদী দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্র থেকে নাসিম হোসাইনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কয়েস লোদীই দায়িত্ব পালন করে যাবেন, আজকে খন্দকার মুক্তাদিরের সাথে বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই হয়েছে।
জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্র থেকে আসা দুটি বিজ্ঞপ্তির কারণে সভাপতি পদ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। গত বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে নাসিমের পদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধনী দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও বিষয়টি খোলাসা হয়নি। এ অবস্থায় সভাপতি হিসেবে নাসিম হোসেইন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, নাকি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান লোদী কয়েস দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন– তা নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন নেতাকর্মীরা।
২০২৩ সালের ১০ মার্চ ভোটে মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে নাসিম হোসেইন, সাধারণ সম্পাদক পদে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সৈয়দ সাফেক মাহবুব নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বিদেশে চলে যান নাসিম হোসেইন। ওই বছরের ১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ৪ নভেম্বর নাসিম হোসেইনকে বাদ দিয়ে সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে ১৭০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এ অবস্থায় গত বুধবার রাতে রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আগে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসেইনের দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁর পদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
যদিও নাসিমের কোনো পদ স্থগিত করেনি বিএনপি।
বিষয়টি জানার পর বৃহস্পতিবার রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে নতুন আরেকটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, ভুলবশত সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে তাঁর দলীয় পদ স্থগিত ছিল না।
তবে মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সবশেষ মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাসিম হোসাইনকে রাখা হয়নি।



















