img

মাগুরছড়া পুঞ্জিতে রঙিন সমাগম : ঐতিহ্যের টানে 'খাসি সেং কুটস্নেম ২০২৫'

প্রকাশিত :  ০৯:১৮, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

মাগুরছড়া পুঞ্জিতে রঙিন সমাগম : ঐতিহ্যের টানে 'খাসি সেং কুটস্নেম ২০২৫'

সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পাহাড় এলাকায় অবস্থিত মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি। 

সবুজে মোড়া এই পাহাড়ি গ্রামটিতে শনিবার (২২ নভেম্বর ) সকাল থেকেই নেমে আসে এক উৎসবের আমেজ। পাহাড়ি বাতাসে ভেসে আসে ঢোলের ছন্দ, বাঁশির সুর আর হাসির কলতান। বছরজুড়ে অপেক্ষার পর আজ সেই দিন—খাসি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম ২০২৫’।

পুঞ্জির সরু পাহাড়ি পথ ধরে সকাল ৯টার পর থেকেই আসতে শুরু করেন বিভিন্ন পুঞ্জি থেকে খাসিয়া পরিবার, প্রবীণরা, যুবক-যুবতী এবং শিশুরা। রঙিন পোশাকে সজ্জিত মানুষের পদচারণায় পাহাড় যেন হয়ে ওঠে উৎসবের মঞ্চ।

সংস্কৃতির রঙে রঙিন এক দিন

উৎসবের সূচনায় ছিল খাসিয়া সমাজের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা। প্রবীণরা তুলে ধরলেন তাদের পূর্বপুরুষের জীবনসংগ্রাম ও ঐতিহ্য রক্ষার গল্প। তরুণেরা শোনে মনোযোগ দিয়ে—কারণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাঁধেই তো ঐতিহ্য বহনের দায়িত্ব।

মাঠে তখন রংমেলার উৎসব—খাসিয়া নারীদের পরিচিত রঙিন পোশাক, গলায় অলঙ্কার, আর শিশুদের দৌড়ঝাঁপে ভরে ওঠে পুরো পরিবেশ।

জিং শাদ—ছন্দে ছন্দে উৎসবের প্রাণ

বিকেলের দিকে শুরু হয় খাসিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘জিং শাদ’। ঢোল, টাল-ডম আর বাঁশির সুরে নৃত্যশিল্পীরা যখন গোল হয়ে তাল মিলিয়ে নাচে, দর্শকের চোখে-মনে জমে ওঠে পাহাড়ি সংস্কৃতির মোহময়তা।

এর পাশাপাশি খাসি লোকগীতি, ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনা, সেলফ-হেল্প গেমস, লেহকাই প্রতিযোগিতা, লাকি কুপন ড্র—সব মিলিয়ে দিনটি হয়ে ওঠে খাসি সংস্কৃতির বহুমাত্রিক উৎসব।

শুধু উৎসব নয়—অস্তিত্বের প্রকাশ

উৎসবের আয়োজক খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল (KSC) জানায়, ‘সেং কুটস্নেম’ তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অন্যতম প্রধান প্রতীক।

পুঞ্জির এক প্রবীণ বলেন,

“এই উৎসব আমাদের শেকড়কে মনে করিয়ে দেয়। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার শক্তি এখান থেকেই আসে।”

সংগ্রামের ভেতর ঐতিহ্য রক্ষার গল্প

মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি বহু বছর ধরে নিজের সংস্কৃতি ও পাহাড়ি পরিবেশ রক্ষায় সংগ্রাম করে আসছে। ভাষা, নৃত্য, গান, পোশাক—এসবের মধ্যেই টিকে আছে তাদের স্বাতন্ত্র্য। তাই ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ কেবল আনন্দ নয়; এটি একটি সাংস্কৃতিক অবস্থান, আত্মপরিচয়ের ঘোষণা।

দিনশেষের আলোয় পাহাড়ি শান্তি

বিকেল ৫টা নাগাদ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও পুঞ্জির ভেতর তখনো রয়ে যায় উৎসবের রঙ। শিশুদের হাসি, ঢোলের প্রতিধ্বনি আর লোকগানের সুর যেন বাতাসে গেঁথে থাকে। একটি ছোট্ট খাসিয়া শিশু উৎসবমুখর মাঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল—

“আগামী বছরও আবার হবে, তাই না?”

এই প্রশ্নেই যেন খাসি সংস্কৃতি টিকে থাকার প্রতিশ্রুতি খুঁজে পায়।

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

শ্রীমঙ্গলে কারখানায় ট্রলি চাপায় নারী কর্মীর মৃত্যু, এলাকায় উত্তেজনা

প্রকাশিত :  ০৫:৩৪, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৫:৫০, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে একটি পলি ফাইবার কারখানায় ট্রলির চাপায় মার্জিয়া বেগম নামে এক নারী কর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালেই ভূনবীর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকায় রশনী পলি ফাইবার কারখানায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত মারজিয়া খাতুন তেপাড়া গ্রামের আকরাম আলীর স্ত্রী। তিনি চার মেয়ে ও এক ছেলের জননী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালবেলা কাজের এক পর্যায়ে কারখানা চত্বরে চলন্ত ফর্কলিফটের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মারজিয়া। এ সময় আহত হন আরেক নারী শ্রমিক এবং ফর্কলিফটচালক। সহকর্মীরা তাদের দ্রুত উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।

দুর্ঘটনার পর কারখানা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।

নিহতের স্বামী আকরাম আলী বলেন, “আমি আমার স্ত্রীর মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার সন্তানরা এতিম হয়ে গেল। তাদের ভবিষ্যতের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।”

শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনার কারণ ও কারও অবহেলা ছিল কি না—তদন্তে তা খতিয়ে দেখা হবে।

ঘটনার পর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারখানাটি পরিদর্শন করেন এবং শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।