img

বাংলাদেশের জন্ম - ১ : ইমরান চৌধুরী বি, ই,এম

প্রকাশিত :  ১৩:২৫, ২৮ অক্টোবর ২০২১

বাংলাদেশের জন্ম - ১ : ইমরান চৌধুরী বি, ই,এম

আসছে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করে একান্ন বছরে পদার্পণ করবে, ছুটে চলবে শত বর্ষ পূর্তির মাইল ফলক অর্জনের উদ্দীপনায়। শত বর্ষ আসার আগেই হয়ত স্বাধীনতা আহরণকারী প্রজন্ম বিদায় নিবে উদযাপন না দেখেই । আজকের যে যুবক, তরুণ কিংবা মধ্যবয়সী তাদের অনেকেই হয়ত ভুলে যেuতে বসেছে – বাংলাদেশের জন্মটি কিভাবে হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালের সেই কালোদিন গুলো কেমন ছিল! কি পরিমাণ ত্যাগ শিকার এর মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল – বাংলাদেশ। আমি  ১৯৭১ সালের একজন ১১ বয়সী রিফ্যুজি ( শরণার্থী )  কিশোর আজ ৫০ বছর পর ১৯৭১ সালের সেই ত্রিপার্শ্ব (প্রিজমের) কাঁচ এর  ভিতর দিয়ে অবলোকন করে বর্ণনা করতে চেষ্টা করছি সেই বাংলাদেশের জন্ম । বাংলা পড়ুয়া  জনগোষ্ঠী প্রবাসে দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে – বাংলাদেশের জন্ম আর আমাদের বাংলা ভাষা একে অপরের সাথে যুক্ত সম্পূরক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে। তাই, আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসঃ

এক এক করে সব শহর – বন্দর – থানা –  ইউনিয়ন দখল করতে লাগলো পাকিস্থানী জান্তারা – থেমে থাকলো না বাংলা মায়ের দুর্দম সন্তানেরা – ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট – ই, পি, আর ( ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ), আনসার, মুজাহিদ, ছাত্র, জনতা ব্রাক্ষনবাড়িয়া,  চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা, শমশেনগর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোহর এ  করলো পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হাজার হাজার ছাত্র, জনতা দলে দলে যোগ দিলো – শুরু হলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে  বাংলার আবাল বৃধ বনিতাদের মুক্তির সংগ্রাম এর অগ্রদূত দল – মুক্তি বাহিনী। রাইফেল, এক এবং দুই নলা বন্ধুক, টু টু বোর রাইফেল, বল্লম, তীরধনুক, থ্রি নট থ্রি রাইফেল, কুচ, বল্লম, বেলচা, কোদাল, সাবল, রামদা, তলওয়ার , মূলী বাঁশের বানানো এক ধরণের বল্লম যা পেয়েছিলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারযোগ্য তাই নিয়েই শুরু হলো বাঙ্গালী সৈন্য দের সঙ্গে  জনগনের সম্পৃক্ততার বহিঃপ্রকাশ শত্রুকে প্রতিহত করার প্রয়াস। 

অন্য দিকে পাকিস্থানী বাহিনীর গনহত্যা – রেপ – আগুন দিয়ে শহরের পর শহর – বন্দরের পর বন্দর এ ছড়িয়ে পরতে থাকলো। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা সহ সকল শহর ছেড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে যা পরনে ছিল তাই নিয়ে সর্বশ ফেলে ঘর ছেড়ে পালাতে লাগলো গ্রামের দিকে। সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন বাংলা – শহরের দোকান পাঠ, অফিস আদালত সব বন্ধ – কোর্ট কাচারি সব নিস্তব্ধ, সকল যানবাহন, ট্রেন – বাস – লঞ্চ – স্টিমার সব বন্ধ। সারা রাত দিন কারফ্যিউ – চব্বিশ ঘণ্টা ধরে। সাড়ে সাত কোটী মানুষ বাংলার গৃহবন্দী – পাকিস্তানী বাহিনী প্রধান বাংলার কসাই নামে পরিচিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এর ধ্বংসযজ্ঞকে ঐ পিশাচ নাম দিয়েছিল  অপারেশন জ্যাকপট  - ওদের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল বাংলার সবুজ মাটি কে বাঙ্গালীদের লাল রক্ত দিয়ে লাল রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দিবে। এসব অনেকের কাছেই নিছক বাড়ানো গল্প মনে হতে পারে – আবার অনেককেই শিখানো হয়েছে অনেক হাল্কা ভাবে বর্ণিত গল্প দিয়ে কাড়ন গল্প বর্ণনাকারী চায়নি তার আগামী প্রজন্মের সন্তানেরা জানুক আসল ঘটনা – কি জানি আবার ওরা জেনে না যায় আসল কথা – জেনে গেলে আবার সমূহ বিপদ – কারণ অনেক পিতামাতারা চায়নি তাদের সন্তানেরা জানুক একই ধরমের মানুষ দ্বারা আনয়নকৃত এই জঘন্যতম জেনোসাইড সম্পর্কে ; তাহলে তাদের প্রচারিত বেদবাক্য গুলোতে ফাঁক ফোকর থেকে জেতে পারে। তাই বাংলাদেসের মুসলিমদের উপর পাকিস্থানী মুসলিমদের এই বর্বরতাকে পানি ঢেলে তরলায়ন করে বলা হয়েছে এক শ্রেণীর প্রজন্মকে – কিন্তু এখন সময় এসেছে ওদের সত্য কথাটি জানার – তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। 

বাংলার দামাল ছেলেদের ক্ষুদ্র খন্ড খন্ড যুদ্ধ এবং সেই প্রাগৈতিহাসিক আমলের যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে এই সমর জেতা বা ওদের কাবু করা হয়ে পরেছিল অসম্ভব – নেই অস্ত্র, নেই গুলি, নেই কামান, নেই ট্যাঙ্ক, নেই বোমা, নেই এক্সপ্লোসিভ, নেই যানবাহন, নেই বেতার যোগাযোগ এর ব্যবস্থা তার পরও এপ্রিল মাস পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া এবং আরও বেশ কয়টি শহর দখল করতে দেয় নি বাংলার বীর সেনানীরা। কিন্তু শত্রুর কাছ ছিল কামান , ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান এক বারও ভেবে দেখে নাই বিমান হামলা করলে নিজের দেশের জনগণই মারা পরবে – জনগণ ওদের চোখে ছিল একেবারেই নগণ্য; ওদের দরকার বাংলার জমিন জনগণ বিহীন – ওদের চোখে আমরা ছিলাম কাফের – আমরা নাকি ছিলাম নামে মাত্র মুসলমান – আসলে আমরা ওদের কাছে বিধর্মী কাফের এবং আমাদের উপর গণহত্যা করা জায়েজ – ওদের তথাকথিত জেহাদের অঙ্গ । যুদ্ধে অর্জিত স্ত্রীলোকেরাও ছিল ওদের পাওয়া যৌন উপভোগের সামগ্রী । রাতের আধারে গ্রামে, গঞ্জে, হাঁটে, বাজারে , শহরে, বন্দরে হামলা দিয়ে আগুন জালিয়ে দিত যখন ঘর বাড়ীতে তখন ওরা ওদের দেশীয় দালাল দের মাধ্যমে ধরে নিয়ে যেত আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচার জন্য পলায়নপর যুবতী মেয়ে দের কে কুকর্ম চরিতার্থ করার জন্য আর পুরুষ এবং শিশুদের কে হত্যা করা হত নির্মম ভাবে – লাস সৎকার বা জানাজা এবং দাফন করার কেউ থাকতো না ঐ সব জায়গায় – মৃতদেহ গুলো ঐ ভাবেই পচে গলে একদিন বাঙলার মাটিতে মিশে সম্পৃক্ত হয়ে বিলীন হয়ে যেত ক্রমান্বয়ে একদা – রাতের আধারে  ধড়া ঐ সব যুবতীদের এভাবেই  দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পাকিস্থানী বর্বর আর্মি রেপ করতে থাকলো লক্ষ লক্ষ বাংলা মায়ের স্ত্রীলিঙ্গের সন্তানদের। ২৫ সে মার্চ থেকে ১৬ই  ডিসেম্বর পর্যন্ত আট থেকে দশ লক্ষ মহিলার উপর ঐ পিশাচ, বর্বর পাকিস্থানী মুলসিম পাঞ্জাবী ও পাঠান আর্মি চালিয়েছিল বলৎকার। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জঘন্যতম রেপ। 

চলবে ……

মতামত এর আরও খবর

img

উন্মুক্ত বিবেক, মুক্ত ফিলিস্তিন!!

প্রকাশিত :  ০৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নুজহাত নূর সাদিয়া

আহা ! বুকের পাঁজর ভাঙা গগনবিদারী আর্তনাদ , নাহ-কোন নিরব জঠর যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের নবজাতক জন্ম দেওয়ার অবিস্মরণীয় ক্ষণটি উদযাপনের আনন্দচ্ছোস নয়, এ যে সহস্র দিনের গ্লানি শেষে এক নিকষ কালো আঁধার পেরিয়ে মাতৃভূমির বুকে নির্ভীক পা রাখা । আবার সেই চিরপরিচিত সবুজ দুর্বা ঘাসে ছুঁটে বেড়ানো , বাড়ন্ত স্কোয়াশের পূর্ণ ঝুঁড়ি, মাংসের রসাল স্যুপ, হাতে বানানো গমের রুটি সহযোগে উদর পূর্তির সেই পারিবারিক সুখস্মৃতি , মায়ায় জড়ানো বছর পার করে দেওয়া সংগ্রামী পরিবারগুলো ফিরে কি পাবে তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ফিলিস্তিন । বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর অজানা আশংকা আর অনিশ্চয়তার অদৃশ্য গেরোতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলে ও বিপরীত শিবিরে ও বহু দিনের ঘরবন্দী প্রিয়মুখগুলো স্বজনদের বাহুডোরে ফেরার অপেক্ষায় । আগ্রাসী ইসরায়েলের ধূলো উড়ানো পথ ও যে আজ শান্তিকামী মানুষের স্বতস্ফূর্ত হাসিতে ভরপুর। 

আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুযায়ী, মোট হতাহতের সংখ্যা  ৬৬,০০০ হাজার ছাঁড়িয়ে গেছে, জীবন-ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ২,৫০,০০০ জন হতভাগ্যকে , বেঁচে যাওয়া অসংখ্য দুরন্ত শৈশব বাকিটা জীবন সম্ভবত এক দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে, আকাশ ছোঁয়া দালান , সুসজ্জিত স্থাপনা আর পুরাকীর্তির শহর ফিলিস্তিন আজ এক মৃতপ্রায় ভুতুড়ে নগরী ।

এই যে  ক্ষতি , তা সন্দেহাতীতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতি । নেতানিয়াহু নামের এক বিকট দানবের ব্যক্তিগত আক্রোশ আর অপরিণামদর্শী যুদ্ধ কৌশলের খেস ারত দিতে হল ফোরাত নদীর তীরবর্তী নিরীহ প্রাণগুলোর। বিশ্ব মানচিত্র হতে ফিলিস্তিন নামক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি ( গাজা প্রায়২১ লক্ষ লোকের আবাস) মাত্র মাসখানিক আগে ও নিরবে মুছে যাচ্ছিল ধনী রাষ্ট্রের তাবেদার মুসলিম বিশ্বের অলস শাসনকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরণের কারণে । মুসলমান ভাই -ভাই, জুলুমবাজের নিস্তার নাই, বিপন্ন মানবতা বহুল চর্চিত প্রবাদগুলো নিতান্তই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির মুখস্থ বুলির মত আউড়ে চলছিল বিশ্বরাজনীতির মোড়লরা । তবে কি, আমজনতার পরম আরাধ্য পার্থিব জীবনের ও সমাপ্তি আছে, আর সেই সমাপ্তি বরাবরই ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছেয়, অসহায়ের পূর্ণ সমর্থনে আর দিনশেষে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ে ।

গৃহকোণের শান্তি গৃহকর্ত্রীর পরম প্রিয়, আর সেই শান্তির সুশীতল পরশ এ ভূগোলকের পরতে পরতে ছঁড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগী মানুষগুলো অনন্য সাধারণ কাজগুলোকে বাস্তবতার আলো দেখান সে মানুষগুলোই কর্মকুশলতায় অর্জন করে নেন সর্ব্বোচ সম্মান -নোবেল । এ নোবেল প্রাপ্তি, কার ও দারিদ্র্য বিমোচনে, চলতি ‘২৫ সালে বিতর্কিত মারিয়া কোরিয়া মাচানো -যার রাষ্ট্রীয় নীতি বহু অসহায় মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে, প্রাক্তন  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক সহ শান্তিতে নোবেল পাওয়া আলোচিত মানুষগুলো পুরষ্কারের কোঠা না মানদন্ড না তাদের কাজের বিষয় এ সূক্ষèাতিসূক্ষè বিষয়গুলো

রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, আর স্বেচ্ছাচারী কর্তা যখন নিজ খেয়াল-খুশি মত আইন -কানুন তৈরি করে অসহায়দের উপর তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন তখন তা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা জায়ানবাদীদের  আধিপত্য আর কতৃর্ত্ববাদের নির্মমতার করুণ পুনরাবৃত্তি বই আর কিছুই নয় । আর ও নির্মম কৌতুক, একদা জায়ানবধের রাজ্য বলে খ্যাত , হিটলারের জার্মান, মাঁখোর  ফ্রান্স , কূটনৈতিক ব্রিটেন সহ দু‘মুখো আরব বিশ্ব সকলে এ নির্মম রসিকতায় সামিল ! দুনিয়া যে ক্ষমতা আর অর্থের পূজারী - পড়ন্ত বেলার প্রাজ্ঞ প্রবীণদের গভীর হতাশার সুরে তা সুস্পষ্ট ।

রুপকথার গল্পের চেয়ে ও বাস্তব জীবনের গল্প অনেকসময় অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠে , হয়ে উঠে প্রকৃত রুপক নতুবা তার চেয়ে ও শক্তিশালী আখ্যান । বিশ টি বছর ধরে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতায় অবরুদ্ধ হামাস , ঠিক জিতে গেল সাহস আর দেশের প্রতি ভালবাসাকে হৃদয়ে লালন করে।

আর, সেই ছোট্ট গেরিলা সদস্যের দলটি আজ কত বড়! মানচিত্র ছাঁড়িয়ে , সীমানা ছাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের অকুতোভয় হামাসরা আজ দুয়ারে দাঁড়ানো দৃঢ় দ্বাররক্ষী । তারাই পারে ,তথাকথিত অজেয় পশ্চিমা শক্তিকে শান্তিচুক্তি নামক সে নাটকীয় ঘটনার অন্যতম যোগানদার করতে। মার্কিন সরকার প্রধান উপযাচক মাত্র-পরিস্থিতি বুঝেই হয়তবা বন্ধুর পথে হাঁটতে চাইছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বর্মটি যে ভিষণ শক্তপোক্ত ও একরোখা ।

তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ছঁড়ি ঘুরানোর দীর্ঘদিনের শক্তলাঠিটি কে যে এবার বাঁকাতেই হয় ।  সাপ ও মরবে লাঠি ও ভাঙবে না, হায় বেনিয়ামিন  কি অসম্মানের এক পরাজয় ! কি অপেক্ষা করছে দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত বুড়ো নেকড়েটির কপালে -বিধ্বস্ত চেহারায় কপালের কুঞ্চিত রেখাগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে বৈকি।

প্রতিরোধ, যুদ্ধের নামে আগ্রাসন আর বসতি স্থানান্তরের নামে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক শরণার্থী , আনুষ্ঠানিক চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় হয়তবা এখন পর্যন্ত বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত । তবে নারীর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ট্রাম্প তার প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিদন্বী বারাকের উপর সম্ভবত সচেতনভাবেই তার রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকালে বিতর্কিত সন্ত্রাসী বনাম ইসলামিক সেনাবাহিনী মতানৈক্যের বিষয়টির উপর  ইঙ্গিত দিয়েছেন । আর , ব্রিটিশ সংসদে চিত্রিত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করে পুরনো বন্ধু ব্লেয়ারের পদাংক অনুসরিত কিনা, তাই আপনমনে যাচাই-বাছাই করে চলেছেন। 

পরিস্থিতির পরিবর্তিত মোড় , কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন লিখিত শান্তি  চুক্তির যে ভিন্ন ভিন্ন ২০টি শর্ত শোভা পাচ্ছে  তার সুচারু বাস্তবায়ন খোদ ট্রাম্পের পক্ষেই যথেষ্ট দুরুহ । পেন্ডুলামের কাঁটা চলমান, হঠকারী ছোটভাই একবার নয় বেশ ক‘বার বড় ভাইয়ের অবাধ্য হয়েছেন , আস্ত উড়োজাহাজ উপহার আর বন্ধুপ্রতীম কাতারের উপর অর্তকিত আক্রমণ । রক্তে যার খুনে নেশা সে পাগলা ঘোড়া কি আদৌ থামবে ? বিলুপ্ত হিজবুল্লা, হুতির হারিয়ে যাওয়া হামাসের নেতৃত্বের শক্তি ক্ষয় , সিরিয়ায় ভাঙ্গন, ইরানের সফল প্রতিরক্ষার ব্যুহ ভেদ- আপাত , দ্বিধাগ্রস্থ ইসরাইল প্রধান সফলতার মাপকাঠিতে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন হয়তবা ।  তবে,গাজামুখি সারি সারি ত্রাণবাহী গাড়ির বহরের দী¦প্ত যাত্রা কি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় নি, নিশ্চিতভাবেই উত্তরটি হ্যা ।

কাঁকচক্ষু দৃষ্টিতে , দৃঢ়তা আর ন্যায়ের বিজয় তবে, অসম এ যুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের চড়া মূল্য দিতে হল  হামাসকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়  হামাস , নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নাগরিক , প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। এই যে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সেই জীবননাশের মূল্য দিতে হল চরমভাবে-গত দু‘বছরে ৬৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত । শক্তিশালী শত্রুর সাথে টক্কর লাগানো  কি এত সোজা!  লোকবল আর সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে পিঁছিয়ে, তবে কিনা নীতি আর ঈমানের শক্তিতে বরাবরি বলীয়ান হামাসিয়ানরা । তাই , এ ক্রান্তিকালে ও ধাপে ধাপে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল তারা, সর্বশেষ গাজায় ৪৮ জন বন্দী ছিলেন , বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ২০ জন। আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দু‘ধাপে জীবিত জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস গত ১৩ই অক্টোবর । মৃতদের মাঝে চার জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ও জানিয়েছে তারা।অপরদিকে, প্রতিপক্ষ ইসরাইলের আচরণ রুঢ়তার সীমা আকাশ  ছুঁয়েছে  বহু আগেই-কারাগারে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা এবং নিপীড়ন করা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যৌন হয়রানির খবর ও পাওয়া গেছে । আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আল-রিমায়ি বলেন- এ দু‘টি বছরে তার ওজন কমেছে ৫০ কেজি ! হাড় সর্বস্ব শরীর জড়িয়ে কন্যার ব্যাকুল আর্তি, বাবা আমি ব্যাথা পাই ।

এখন আবার ট্রাম্পের নতুন চমক, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র উপহার দিবেন এই পাগলাটে রাষ্ট্রপতি রাশান যুদ্ধ থামাতে ।  শুরু হওয়া আফগান -পাকিস্তান সংঘাতে ও তালেবান দের ভূমিকা নিয়ে এক নতুন চেহারার ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে -জামাতা কুশনারের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জুড়ি নেই রাজনৈতিক বুদ্ধিতে ও যে  শ্বশুরকে ভবিষ্যতে টেক্কা দিতে সমর্থ  হবেন  তা তার সাম্প্রতিক স্রোত বুঝে চলার ই পরিপক্ক রুপ ।

আজকের এই পার্থিব পৃথিবীতে  স্রোতস্বিনী টেমস নদী ব্যবহারের মাসকাবারি বিল পরিশোধের সময় ও যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি মগজে নিত্য গেঁথে থাকে -প্রতিটি পানিবিন্দু পরিশোধে পাওনা প্রাপ্য ! অর্থাৎ, জীবনের অপর নাম পানি ও বাতাস সেবনে ও মূল্য চুকাতে হয়, তা যদি হয় কেনসিংটন নামক অভিজাত এলাকার মনোরম ব্যালকনির মুক্ত হাওয়া । বিনামূল্যে    সেবা, সে তো অতীতের গাল গল্প । অথচ, নিঠুর ইসরাইলী বাহিনী    গাজায় ৩০০০ জলপাই গাছ  কেটে , অগণিত বন্য ও পোষা  প্রাণী মেরে আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে  তুলতে চাইছিল  । সেই প্রকৃতিই কিনা আপন মহিমায়  নতুন বোনা জলপাই গাছের পাশ দিয়ে ছুটন্ত শিশুদের  সাদরে বরণ করছে যাদের খাঁচা ভর্তি প্রিয় পোষা  পাখিটির  গুঞ্জন।   

ফিলিস্তিন বাসীদের প্রিয় ম্যান্ডেলা ‘ আল ফাত্তাহ ‘ এখন ও জায়ানবাদীদের জিম্মায় ,  ইসরাইলী সেনাবাহিনী তাকে যমের মত ভয় পায় -যার মুক্তির আলো দেখা এখন ও সংশয়ে ভরা । সন্দেহাতীতভাবেই, তিনিই প্যালেস্টাইনি জনগণের অবিস্বরণীয় মুক্তি সংগ্রামের পরবর্তী আন্দোলনের দিকপাল ।

আজকের দিনের ফ্রি পত্রিকাগুলোর অন্যতম স্লোগান-মুক্ত খবর, মুক্ত চিন্তা । আর বিশ্বজুঁড়ে এই প্রবল বিজয় উদযাপনে মানবতাবাদীদের একটাই আশা মুক্ত হোক মানবতা , জয় হোক শুভ বুদ্ধির।



নুজহাত নূর সাদিয়া,
এলবিপিসি, লন্ডন ১৪ই অক্টোবর‘ ২৫ সাল ।

মতামত এর আরও খবর