ইমরান চৌধুরী বি.ই.এম

img

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরঃ পরীক্ষিত বন্ধুত্বের পরাকাষ্ঠা

প্রকাশিত :  ২২:৪১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরঃ পরীক্ষিত বন্ধুত্বের পরাকাষ্ঠা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ এ চার দিনের সফরে ইন্ডিয়াতে গিয়েছেন এক রাষ্ট্রীয় সফরে। ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক শুরু হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ষেই ক্রান্তি লগ্ন থেকে। বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার সম্পর্ক সেই পুরাকাল থেকেই আমাদের এই দুই দেশের মাঝে রয়েছে বন্টিত ইতিহাস, সংস্কৃতি, রীতি নীতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং এথনিক সামঞ্জস্য। ভূগোলিকভাবে আমাদের দুটি দেশই একে ওপরের নিকট সম্পূরক অনেক ভাবেই। হিমালয়ের বরফগলা পানিরাশি দিয়ে বিধৌত প্রধান তিনটি নদী ব্যবস্থা তিনটিই সমুদ্রে প্রবাহিত হচ্ছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে। বাণিজ্য, সামরিক, নিরাপত্তা এবং ভূ রাজনৈতিক দিক থেকে আমারা এই দুইটি দেশ একবারেই অবিচ্ছেদ্য। 

১৯৭১ সালের সেই তুলকালাম দিনগুলোতে যখন পরাশক্তি সহ সব দেশেই বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটী মানুষের উপর নেমে আসা সেই বর্বরোচিত অপমান, অবমননা এবং জেনোসাইড থেকে তাদের কৃপার দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে শুধু নিয়েছিল না পক্ষান্তরে হামলাকারীদের সাথে ঐ সকল দেশকে বাড়ীয়ে দিয়েছিল তাদের সহায়তা। আজ তারা আমাদের দেশের জন্য, জনগণের জন্য, আমাদের গণতন্ত্র এর জন্য, উন্নয়নের জন্য কুম্ভীরাশ্রু নির্গমন করে - কি আশ্চর্য - একদা যারা চায়নি আমাদের স্বাধীনতা, কর্ণপাত করে নাই আমাদের লক্ষ কোটি মানুষের আর্তনাদে তারা এখন হতে চায় আমাদের বন্ধু! কি বিচিত্র এই জগত!

ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশ এর বন্ধুত্ব শুধু বান্যিজিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তাই শুধু নয়, এই দৃঢ় সম্পর্ক আত্মিক, এই সম্পর্ক চিরস্থায়ী এবং অনড় তথা অটুট। ১৯৭১ সালের সেই সময় ইন্ডিয়া আজকের ইন্ডিয়া ছিল না — ইন্ডিয়া তখন ছিল অনেক দিক থেকেই পশ্চাৎগামী, যোগাযোগ ব্যবাস্থা, সামরিক সরঞ্জামের অপ্রতুলতা, অর্থনীতি আপেক্ষিক ভাবে উন্নয়নশীল নয়, উত্তর পূর্ব ইন্ডিয়ায় তখন বিচ্ছিনতাবাদী ইন্সারযেঞ্ছি, বিদেশ নীতিতে একটু পিছুপা এবং আন্তর্জাতিক জোটের সদস্য সঙ্কট - কিন্তু এর কোন কিছুই ইন্ডিয়া কে মানবিকতার উৎকর্ষতা দেখাতে স্তিমিত করতে পারে নাই। 

এপ্রিল ১৯৭১ সালে প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল শেষ দিন পর্যন্ত প্রত্যহ হাজার হাজার নিঃস্ব, জীবনের ভয়ে বিহ্বল, ঘর বাড়ি হীন আবাল বৃদ্ধ বনিতারা প্রবেশ করতে থাকে ইন্ডিয়াতে ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়া এবং পশ্চিম বাংলায়। ইন্ডিয়া এবং তার উদার জনগণ ব্যবস্থা করে ছিল এই সব শরণার্থীদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং আবাস। ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর বাংলাদেশের শরণার্থী সঙ্কট ছিল সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট প্রায় ১ থেকে দেড় কোটি অসহায়, সহায়, সম্বলহীন, মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত বাঙ্গালীরা উপায়ান্তর না পেয়ে ইন্ডিয়া তে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। 

স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন থেকে শুরু করে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, পোশাক, খাদ্য, গোলাবারুদ, মুক্তি বাহিনী ক্যাম্প, ভারি থেকে হাল্কা অস্ত্র, ম্যাপ, বিনোকুলার থেকে শুরু করে যুদ্ধ করতে যে সমস্থ সামগ্রী প্রয়োজন তার সবই ইন্ডিয়া দিয়েছিল এবং মুক্তি বাহিনীর সাথে যুগপৎ ভাবে সমরে যোগদান করেছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকেই। ৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ইন্ডিয়ান সম্মিলিত বাহিনী এবং মুক্তি বাহিনী যুগপৎ ভাবে পাকিস্তানি দের আত্মসমর্পণ এর মাধ্যমে পরাজিত করে ছিনিয়ে এনে দিতে সক্ষম হয় আমাদের দেশ - বাংলাদেশ!

একটি একাডেমিক রিসার্চ পেপারের উদ্ধৃতিতে লিখেছে, বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্ডিয়াকে আজকের মুদ্রায় ইউ এস ডলার ১ শত বিলিয়ন ব্যয় করতে হয়েছিল এবং এটা আশ্চর্য হবার মত কোন মহাকাশীয় সংখ্যা নয় - এটা মনে হয় একটি সত্যি খরচের পরিসংখ্যান। 

১৯৭১ সাল থেকে আজ ২০২২ সালের বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়া অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে এখানে এসেছে ; বৈশ্বিক সমস্যা - কোভিড-১৯ এর ব্যাকল্যাস, মুদ্রাস্ফীতি, রাশিয়া - উইক্রেন যুদ্ধ, চীন আগ্রাসী মনোভাব, মুসলমান সংখ্যালঘু ইউঘোরদের উপর চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির জেনোসাইড, ইন্ডিয়ান মহাসাগর, দক্ষিণ চায়না সাগর, গনতন্ত্রকামী তাইওয়ান এর অস্তিত্বের হুমকি সহ অন্যান্য সহস্রাধিক সম্যসায় পৃথিবী আজ অতিক্রম করছে ক্রান্তিকাল আর এই সময়ে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর ইন্ডিয়া সফর একটি বিশাল তাৎপর্য পূর্ণ সফর। এই সফর শুধু পারোস্পরিক সহযোগিতা, সমঝোতা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি মূলক এজেন্ডাতেই সীমাবদ্ধ নয় এই সফর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সুদৃঢ়তার মাইল ফলক হিসাবে। সর্বদা অটুট তাখুক বাংলাদেশ - ইন্ডিয়া বন্ধুত্ব ! 

মতামত এর আরও খবর

img

উন্মুক্ত বিবেক, মুক্ত ফিলিস্তিন!!

প্রকাশিত :  ০৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নুজহাত নূর সাদিয়া

আহা ! বুকের পাঁজর ভাঙা গগনবিদারী আর্তনাদ , নাহ-কোন নিরব জঠর যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের নবজাতক জন্ম দেওয়ার অবিস্মরণীয় ক্ষণটি উদযাপনের আনন্দচ্ছোস নয়, এ যে সহস্র দিনের গ্লানি শেষে এক নিকষ কালো আঁধার পেরিয়ে মাতৃভূমির বুকে নির্ভীক পা রাখা । আবার সেই চিরপরিচিত সবুজ দুর্বা ঘাসে ছুঁটে বেড়ানো , বাড়ন্ত স্কোয়াশের পূর্ণ ঝুঁড়ি, মাংসের রসাল স্যুপ, হাতে বানানো গমের রুটি সহযোগে উদর পূর্তির সেই পারিবারিক সুখস্মৃতি , মায়ায় জড়ানো বছর পার করে দেওয়া সংগ্রামী পরিবারগুলো ফিরে কি পাবে তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ফিলিস্তিন । বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর অজানা আশংকা আর অনিশ্চয়তার অদৃশ্য গেরোতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলে ও বিপরীত শিবিরে ও বহু দিনের ঘরবন্দী প্রিয়মুখগুলো স্বজনদের বাহুডোরে ফেরার অপেক্ষায় । আগ্রাসী ইসরায়েলের ধূলো উড়ানো পথ ও যে আজ শান্তিকামী মানুষের স্বতস্ফূর্ত হাসিতে ভরপুর। 

আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুযায়ী, মোট হতাহতের সংখ্যা  ৬৬,০০০ হাজার ছাঁড়িয়ে গেছে, জীবন-ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ২,৫০,০০০ জন হতভাগ্যকে , বেঁচে যাওয়া অসংখ্য দুরন্ত শৈশব বাকিটা জীবন সম্ভবত এক দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে, আকাশ ছোঁয়া দালান , সুসজ্জিত স্থাপনা আর পুরাকীর্তির শহর ফিলিস্তিন আজ এক মৃতপ্রায় ভুতুড়ে নগরী ।

এই যে  ক্ষতি , তা সন্দেহাতীতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতি । নেতানিয়াহু নামের এক বিকট দানবের ব্যক্তিগত আক্রোশ আর অপরিণামদর্শী যুদ্ধ কৌশলের খেস ারত দিতে হল ফোরাত নদীর তীরবর্তী নিরীহ প্রাণগুলোর। বিশ্ব মানচিত্র হতে ফিলিস্তিন নামক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি ( গাজা প্রায়২১ লক্ষ লোকের আবাস) মাত্র মাসখানিক আগে ও নিরবে মুছে যাচ্ছিল ধনী রাষ্ট্রের তাবেদার মুসলিম বিশ্বের অলস শাসনকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরণের কারণে । মুসলমান ভাই -ভাই, জুলুমবাজের নিস্তার নাই, বিপন্ন মানবতা বহুল চর্চিত প্রবাদগুলো নিতান্তই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির মুখস্থ বুলির মত আউড়ে চলছিল বিশ্বরাজনীতির মোড়লরা । তবে কি, আমজনতার পরম আরাধ্য পার্থিব জীবনের ও সমাপ্তি আছে, আর সেই সমাপ্তি বরাবরই ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছেয়, অসহায়ের পূর্ণ সমর্থনে আর দিনশেষে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ে ।

গৃহকোণের শান্তি গৃহকর্ত্রীর পরম প্রিয়, আর সেই শান্তির সুশীতল পরশ এ ভূগোলকের পরতে পরতে ছঁড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগী মানুষগুলো অনন্য সাধারণ কাজগুলোকে বাস্তবতার আলো দেখান সে মানুষগুলোই কর্মকুশলতায় অর্জন করে নেন সর্ব্বোচ সম্মান -নোবেল । এ নোবেল প্রাপ্তি, কার ও দারিদ্র্য বিমোচনে, চলতি ‘২৫ সালে বিতর্কিত মারিয়া কোরিয়া মাচানো -যার রাষ্ট্রীয় নীতি বহু অসহায় মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে, প্রাক্তন  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক সহ শান্তিতে নোবেল পাওয়া আলোচিত মানুষগুলো পুরষ্কারের কোঠা না মানদন্ড না তাদের কাজের বিষয় এ সূক্ষèাতিসূক্ষè বিষয়গুলো

রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, আর স্বেচ্ছাচারী কর্তা যখন নিজ খেয়াল-খুশি মত আইন -কানুন তৈরি করে অসহায়দের উপর তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন তখন তা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা জায়ানবাদীদের  আধিপত্য আর কতৃর্ত্ববাদের নির্মমতার করুণ পুনরাবৃত্তি বই আর কিছুই নয় । আর ও নির্মম কৌতুক, একদা জায়ানবধের রাজ্য বলে খ্যাত , হিটলারের জার্মান, মাঁখোর  ফ্রান্স , কূটনৈতিক ব্রিটেন সহ দু‘মুখো আরব বিশ্ব সকলে এ নির্মম রসিকতায় সামিল ! দুনিয়া যে ক্ষমতা আর অর্থের পূজারী - পড়ন্ত বেলার প্রাজ্ঞ প্রবীণদের গভীর হতাশার সুরে তা সুস্পষ্ট ।

রুপকথার গল্পের চেয়ে ও বাস্তব জীবনের গল্প অনেকসময় অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠে , হয়ে উঠে প্রকৃত রুপক নতুবা তার চেয়ে ও শক্তিশালী আখ্যান । বিশ টি বছর ধরে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতায় অবরুদ্ধ হামাস , ঠিক জিতে গেল সাহস আর দেশের প্রতি ভালবাসাকে হৃদয়ে লালন করে।

আর, সেই ছোট্ট গেরিলা সদস্যের দলটি আজ কত বড়! মানচিত্র ছাঁড়িয়ে , সীমানা ছাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের অকুতোভয় হামাসরা আজ দুয়ারে দাঁড়ানো দৃঢ় দ্বাররক্ষী । তারাই পারে ,তথাকথিত অজেয় পশ্চিমা শক্তিকে শান্তিচুক্তি নামক সে নাটকীয় ঘটনার অন্যতম যোগানদার করতে। মার্কিন সরকার প্রধান উপযাচক মাত্র-পরিস্থিতি বুঝেই হয়তবা বন্ধুর পথে হাঁটতে চাইছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বর্মটি যে ভিষণ শক্তপোক্ত ও একরোখা ।

তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ছঁড়ি ঘুরানোর দীর্ঘদিনের শক্তলাঠিটি কে যে এবার বাঁকাতেই হয় ।  সাপ ও মরবে লাঠি ও ভাঙবে না, হায় বেনিয়ামিন  কি অসম্মানের এক পরাজয় ! কি অপেক্ষা করছে দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত বুড়ো নেকড়েটির কপালে -বিধ্বস্ত চেহারায় কপালের কুঞ্চিত রেখাগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে বৈকি।

প্রতিরোধ, যুদ্ধের নামে আগ্রাসন আর বসতি স্থানান্তরের নামে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক শরণার্থী , আনুষ্ঠানিক চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় হয়তবা এখন পর্যন্ত বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত । তবে নারীর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ট্রাম্প তার প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিদন্বী বারাকের উপর সম্ভবত সচেতনভাবেই তার রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকালে বিতর্কিত সন্ত্রাসী বনাম ইসলামিক সেনাবাহিনী মতানৈক্যের বিষয়টির উপর  ইঙ্গিত দিয়েছেন । আর , ব্রিটিশ সংসদে চিত্রিত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করে পুরনো বন্ধু ব্লেয়ারের পদাংক অনুসরিত কিনা, তাই আপনমনে যাচাই-বাছাই করে চলেছেন। 

পরিস্থিতির পরিবর্তিত মোড় , কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন লিখিত শান্তি  চুক্তির যে ভিন্ন ভিন্ন ২০টি শর্ত শোভা পাচ্ছে  তার সুচারু বাস্তবায়ন খোদ ট্রাম্পের পক্ষেই যথেষ্ট দুরুহ । পেন্ডুলামের কাঁটা চলমান, হঠকারী ছোটভাই একবার নয় বেশ ক‘বার বড় ভাইয়ের অবাধ্য হয়েছেন , আস্ত উড়োজাহাজ উপহার আর বন্ধুপ্রতীম কাতারের উপর অর্তকিত আক্রমণ । রক্তে যার খুনে নেশা সে পাগলা ঘোড়া কি আদৌ থামবে ? বিলুপ্ত হিজবুল্লা, হুতির হারিয়ে যাওয়া হামাসের নেতৃত্বের শক্তি ক্ষয় , সিরিয়ায় ভাঙ্গন, ইরানের সফল প্রতিরক্ষার ব্যুহ ভেদ- আপাত , দ্বিধাগ্রস্থ ইসরাইল প্রধান সফলতার মাপকাঠিতে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন হয়তবা ।  তবে,গাজামুখি সারি সারি ত্রাণবাহী গাড়ির বহরের দী¦প্ত যাত্রা কি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় নি, নিশ্চিতভাবেই উত্তরটি হ্যা ।

কাঁকচক্ষু দৃষ্টিতে , দৃঢ়তা আর ন্যায়ের বিজয় তবে, অসম এ যুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের চড়া মূল্য দিতে হল  হামাসকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়  হামাস , নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নাগরিক , প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। এই যে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সেই জীবননাশের মূল্য দিতে হল চরমভাবে-গত দু‘বছরে ৬৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত । শক্তিশালী শত্রুর সাথে টক্কর লাগানো  কি এত সোজা!  লোকবল আর সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে পিঁছিয়ে, তবে কিনা নীতি আর ঈমানের শক্তিতে বরাবরি বলীয়ান হামাসিয়ানরা । তাই , এ ক্রান্তিকালে ও ধাপে ধাপে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল তারা, সর্বশেষ গাজায় ৪৮ জন বন্দী ছিলেন , বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ২০ জন। আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দু‘ধাপে জীবিত জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস গত ১৩ই অক্টোবর । মৃতদের মাঝে চার জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ও জানিয়েছে তারা।অপরদিকে, প্রতিপক্ষ ইসরাইলের আচরণ রুঢ়তার সীমা আকাশ  ছুঁয়েছে  বহু আগেই-কারাগারে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা এবং নিপীড়ন করা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যৌন হয়রানির খবর ও পাওয়া গেছে । আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আল-রিমায়ি বলেন- এ দু‘টি বছরে তার ওজন কমেছে ৫০ কেজি ! হাড় সর্বস্ব শরীর জড়িয়ে কন্যার ব্যাকুল আর্তি, বাবা আমি ব্যাথা পাই ।

এখন আবার ট্রাম্পের নতুন চমক, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র উপহার দিবেন এই পাগলাটে রাষ্ট্রপতি রাশান যুদ্ধ থামাতে ।  শুরু হওয়া আফগান -পাকিস্তান সংঘাতে ও তালেবান দের ভূমিকা নিয়ে এক নতুন চেহারার ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে -জামাতা কুশনারের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জুড়ি নেই রাজনৈতিক বুদ্ধিতে ও যে  শ্বশুরকে ভবিষ্যতে টেক্কা দিতে সমর্থ  হবেন  তা তার সাম্প্রতিক স্রোত বুঝে চলার ই পরিপক্ক রুপ ।

আজকের এই পার্থিব পৃথিবীতে  স্রোতস্বিনী টেমস নদী ব্যবহারের মাসকাবারি বিল পরিশোধের সময় ও যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি মগজে নিত্য গেঁথে থাকে -প্রতিটি পানিবিন্দু পরিশোধে পাওনা প্রাপ্য ! অর্থাৎ, জীবনের অপর নাম পানি ও বাতাস সেবনে ও মূল্য চুকাতে হয়, তা যদি হয় কেনসিংটন নামক অভিজাত এলাকার মনোরম ব্যালকনির মুক্ত হাওয়া । বিনামূল্যে    সেবা, সে তো অতীতের গাল গল্প । অথচ, নিঠুর ইসরাইলী বাহিনী    গাজায় ৩০০০ জলপাই গাছ  কেটে , অগণিত বন্য ও পোষা  প্রাণী মেরে আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে  তুলতে চাইছিল  । সেই প্রকৃতিই কিনা আপন মহিমায়  নতুন বোনা জলপাই গাছের পাশ দিয়ে ছুটন্ত শিশুদের  সাদরে বরণ করছে যাদের খাঁচা ভর্তি প্রিয় পোষা  পাখিটির  গুঞ্জন।   

ফিলিস্তিন বাসীদের প্রিয় ম্যান্ডেলা ‘ আল ফাত্তাহ ‘ এখন ও জায়ানবাদীদের জিম্মায় ,  ইসরাইলী সেনাবাহিনী তাকে যমের মত ভয় পায় -যার মুক্তির আলো দেখা এখন ও সংশয়ে ভরা । সন্দেহাতীতভাবেই, তিনিই প্যালেস্টাইনি জনগণের অবিস্বরণীয় মুক্তি সংগ্রামের পরবর্তী আন্দোলনের দিকপাল ।

আজকের দিনের ফ্রি পত্রিকাগুলোর অন্যতম স্লোগান-মুক্ত খবর, মুক্ত চিন্তা । আর বিশ্বজুঁড়ে এই প্রবল বিজয় উদযাপনে মানবতাবাদীদের একটাই আশা মুক্ত হোক মানবতা , জয় হোক শুভ বুদ্ধির।



নুজহাত নূর সাদিয়া,
এলবিপিসি, লন্ডন ১৪ই অক্টোবর‘ ২৫ সাল ।

মতামত এর আরও খবর