img

প্রতিষ্ঠান রক্ষা’ না গণতন্ত্র রক্ষা’?— বাংলাদেশ এক সংবেদনশীল সন্ধিক্ষণে

প্রকাশিত :  ১৯:০৯, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিষ্ঠান রক্ষা’ না গণতন্ত্র রক্ষা’?— বাংলাদেশ এক সংবেদনশীল সন্ধিক্ষণে

✍️ আরমান ওয়াহিদ

দেশজুড়ে এখন যে বিতর্কটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত—তা হলো, রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি কোনটি: প্রতিষ্ঠান রক্ষা, নাকি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা? এই প্রশ্নটি কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পথরেখার সঙ্গেও গভীরভাবে সম্পর্কিত।

গত কয়েকদিনে দেশের গণমাধ্যম ও সচেতন মহলে দুটি সংকট বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। একদিকে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা ও কারাবন্দী করার ঘটনাগুলো নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—রাষ্ট্র আসলে কাকে রক্ষা করছে? প্রতিষ্ঠানকে, নাকি ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রকে?

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠে, তখন সেটি কেবল ব্যক্তিগত অপরাধ নয়—বরং সেই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু সেই বাহিনীর ভেতর থেকে কেউ যদি মানবাধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে, তবে তাকে রক্ষা করাই কি প্রতিষ্ঠান রক্ষা? নাকি জবাবদিহিতার মাধ্যমে অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা প্রতিষ্ঠানকেই দীর্ঘমেয়াদে আরও মর্যাদাবান করে তুলবে?

প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি কোনো আড়াল নয়, এটি একটি নৈতিক প্রতীক। আর সেই নৈতিকতা রক্ষা পায় কেবল স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচারের চর্চার মধ্য দিয়ে।

যদি অপরাধী সদস্যদের শাস্তি না দিয়ে ‘প্রতিষ্ঠান রক্ষা’র নামে বিষয়টি আড়াল করা হয়, তবে সেটি অবচেতনে গোটা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিকেই দুর্বল করে। ইতিহাস সাক্ষী—কোনো প্রতিষ্ঠান কখনোই অপরাধ ঢেকে রেখে মহৎ হতে পারেনি।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনের চিত্রটিও কম উদ্বেগজনক নয়। ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেই দেখা যায় পুরনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি—বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা কিংবা বিচারিক হয়রানি। যেন ক্ষমতা বদল মানেই প্রতিশোধের নতুন অধ্যায়।

রাজনীতি যদি প্রতিপক্ষ ধ্বংসের অস্ত্রে পরিণত হয়, তবে গণতন্ত্রের প্রাণই শুকিয়ে যায়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা—কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই দুই গুণই আজ সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত।

এর ফলেই তৈরি হচ্ছে একটি বিপজ্জনক শূন্যতা—যেখানে জনগণের কণ্ঠস্বর ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে, আর তার জায়গা নিচ্ছে প্রশাসনিক প্রভাব ও সামরিক কিংবা আমলাতান্ত্রিক প্রাধান্য।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের ইচ্ছাই সর্বোচ্চ ক্ষমতা। কিন্তু যখন রাজনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে, তখন সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে শুরু করে অগণতান্ত্রিক শক্তি।

আজ বাংলাদেশ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রতিষ্ঠান রক্ষা ও গণতন্ত্র রক্ষা—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই জাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে কাজ করতে হবে। ক্ষমতা নয়, দায়িত্ববোধই হওয়া উচিত নেতৃত্বের মূল চেতনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন নয়, বরং নীতিনিষ্ঠ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।

অন্যদিকে, সামরিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মনে রাখতে হবে—তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, আইনের শাসন ও স্বচ্ছতার ওপর। অভ্যন্তরীণ অনিয়ম বা অপরাধকে আড়াল নয়, বরং কঠোর তদন্ত ও ন্যায্য শাস্তির মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে।

একইভাবে, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে নিরপেক্ষভাবে—কোনো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে।

প্রতিষ্ঠান রক্ষার নামে অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া এক ধরনের আত্মঘাতী রাজনীতি। এটি কেবল গণতন্ত্রকেই দুর্বল করে না, বরং রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতর নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে।

রাজনৈতিক প্রতিশোধের সংস্কৃতি ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ—দু’টিই ধ্বংসাত্মক।

এই সংস্কৃতি টিকে থাকলে গণতন্ত্র থাকবে শুধু কাগজে, আর রাষ্ট্রে টিকে থাকবে ভয়, অবিশ্বাস ও অসহিষ্ণুতার রাজনীতি।

একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষিত থাকলে প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শক্তিশালী হয়; আর যখন প্রতিষ্ঠানগুলো স্বচ্ছভাবে কাজ করে, তখন গণতন্ত্রও শেকড় গেড়ে বসে।

বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে—যখনই জবাবদিহিতা হারিয়ে গেছে, তখনই রাষ্ট্র দুর্বল হয়েছে। আর যখন জনগণের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, তখনই দেশ এগিয়েছে।

অতএব, এখন সময় এসেছে ‘প্রতিষ্ঠান রক্ষা’র আড়ালে গণতন্ত্রকে আঘাত না করার; বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠানকেও রক্ষা করার।

বাংলাদেশ আজ যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, সেখানে প্রতিটি নাগরিকের, প্রতিটি নেতার এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব রয়েছে নিজেদের নৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করা।

কারণ একটি সভ্য রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টিকে থাকে না শক্তিতে—টিকে থাকে ন্যায়ে।

প্রতিষ্ঠান রক্ষা মানে অপরাধ ঢেকে রাখা নয়—বরং সেগুলোকে ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনা।

আর গণতন্ত্র রক্ষা মানে ক্ষমতার প্রতিশোধ নয়—বরং মানুষের মর্যাদা, অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ার জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি তিনটি শব্দ: স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সহনশীলতা।

এই তিন মূল্যবোধই পারে আমাদের রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান উভয়কেই রক্ষা করতে—একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে।

মতামত এর আরও খবর

img

দুর্লভ খনিজ উপাদান: কেন যুক্তরাষ্ট্রের এগুলো প্রয়োজন এবং কেন এগুলো যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্যযুদ্ধে কৌশলগত অস্ত্র হয়ে উঠেছে

প্রকাশিত :  ১১:২৪, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

অনুপম সাহা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ ও ‘রেয়ার আর্থ’-এর গুরুত্ব

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে দুর্লভ খনিজ উপাদানসমূহ (Rare Earth Elements – REEs)। এই ১৭টি রাসায়নিক উপাদান আধুনিক প্রযুক্তির মূলভিত্তি — এগুলো ব্যবহার হয় ইলেকট্রিক গাড়ি, কম্পিউটার চিপ, জেট ইঞ্জিন, উইন্ড টারবাইন, স্মার্টফোন, এমনকি উন্নত সামরিক অস্ত্র তৈরিতে।

যদিও প্রকৃতিতে এগুলো তুলনামূলকভাবে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, কিন্তু বিশুদ্ধভাবে আলাদা করা কঠিন এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘ কয়েক দশকের বিনিয়োগ ও রাষ্ট্রীয় সহায়তায় চীন আজ এই খনিজগুলোর খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় একচেটিয়া কর্তৃত্ব অর্জন করেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন রেয়ার আর্থ রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে—যা যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পখাতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বেইজিংয়ের সচেতন কৌশল, যাতে তারা এই খনিজ আধিপত্যকে বাণিজ্য আলোচনায় ‘বাঁধা কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

রেয়ার আর্থ কী এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

রেয়ার আর্থ হলো ১৭টি রাসায়নিকভাবে মিল থাকা উপাদান, যা উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পে অপরিহার্য। নামগুলো যেমন— নিওডিমিয়াম (Neodymium), ইট্রিয়াম (Yttrium), ইউরোপিয়াম (Europium)—শুনতে অপরিচিত লাগলেও, এগুলোর ব্যবহারে তৈরি পণ্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

নিওডিমিয়াম: শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা ইলেকট্রিক মোটর, হার্ড ড্রাইভ, স্পিকার ও উইন্ড টারবাইনে অপরিহার্য।

ইট্রিয়াম ও ইউরোপিয়াম: টেলিভিশন ও কম্পিউটার স্ক্রিনে উজ্জ্বল রঙ তৈরি করে।

ল্যান্থানাম: ক্যামেরা লেন্স ও আলোক সরঞ্জামে ব্যবহৃত হয়।

সেরিয়াম: গাড়ির ক্যাটালাইটিক কনভার্টারে ব্যবহৃত হয় যা দূষণ কমায়।

প্রাসিওডিমিয়াম ও গ্যাডোলিনিয়াম: বিমান ইঞ্জিন, এমআরআই যন্ত্র ও নিউক্লিয়ার প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়।

জিঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক টমাস ক্রুমার বলেন,

“যে কোনো জিনিস যা অন-অফ করা যায়—সেগুলো কোনো না কোনোভাবে রেয়ার আর্থের ওপর নির্ভরশীল।”

 কেন রেয়ার আর্থ চীন–যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় এক বড় ‘বাণিজ্য হাতিয়ার’

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখনো “হেভি” রেয়ার আর্থ প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা নেই, অথচ চীন নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বের প্রায় ৯০% প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতা। ফলে বেইজিং শক্তিশালী কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। 

২০২৫ সালের ৯ অক্টোবর চীন নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করে—এটি আসে ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে, যখন APEC সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইচ্ছাকৃত সময়-নির্বাচন—যেন আলোচনায় চীন অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। 

রেয়ার আর্থের ব্যবহার সামরিক সরঞ্জাম, সেমিকন্ডাক্টর ও উন্নত প্রযুক্তিতে হওয়ায় এটি কেবল বাণিজ্যিক নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নেও পরিণত হয়েছে।

চীনের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনের নিয়ন্ত্রণ

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (IEA) তথ্য অনুযায়ী, চীন ৬১% রেয়ার আর্থ উৎপাদন এবং ৯২% প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এই আধিপত্য এসেছে বছরের পর বছর রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি, কম উৎপাদন খরচ ও দুর্বল পরিবেশনীতির কারণে।

চীনের সাবেক নেতা দেং শিয়াওপিং ১৯৯২ সালে বলেছিলেন,

“মধ্যপ্রাচ্যের কাছে তেল আছে, আর চীনের কাছে আছে রেয়ার আর্থ।”

আজ তার সেই ভবিষ্যদ্বাণীই বিশ্ব অর্থনীতির বাস্তব চিত্রে রূপ নিয়েছে।

রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও উত্তেজনার বৃদ্ধি

যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক আরোপের পর চীন সাতটি “হেভি” রেয়ার আর্থে রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করে। এখন এই খনিজ বা সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি রপ্তানিতে বিশেষ অনুমতি লাগে।

অক্টোবর ২০২৫-এ চীন আরও পাঁচটি উপাদান ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যোগ করে। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে এটি “অর্থনৈতিক জবরদস্তি” এবং “বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খল দখলের চেষ্টা।”

এই উপাদানগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পে — যেমন F-35 যুদ্ধবিমান, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, ও রাডার সিস্টেম তৈরিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ও চ্যালেঞ্জ

২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭০% রেয়ার আর্থ আমদানি এসেছে চীন থেকে। দেশে একটি খনি থাকলেও এর আকরিক এখনো চীনে পাঠাতে হয় প্রক্রিয়াকরণের জন্য।

ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন ও গ্রীনল্যান্ডের সঙ্গে খনিজ সরবরাহ চুক্তির চেষ্টা করছে, কিন্তু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও পরিবেশগত বাধা অগ্রগতিকে ধীর করছে।

ব্রিটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. গ্যাভিন হার্পার সতর্ক করেছেন,

“এই ঘাটতি অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পে উৎপাদন বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধি পাবে।”

সাম্প্রতিক অগ্রগতি: এক বছরের অস্থায়ী সমঝোতা

রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবর চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এক বছরের একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে—চীন রপ্তানি অব্যাহত রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্র কিছু শুল্ক কমাবে।

দ্য গার্ডিয়ান এটিকে চীনের “শক্তিশালী বাণিজ্য অস্ত্র” বলে উল্লেখ করেছে, আর পলিটিকো জানায়, কানাডা নেতৃত্বাধীন জি৭ দেশগুলো এখন চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।

তবে আল জাজিরার মতে, চীনের নতুন রপ্তানি নিয়ম—যা ট্রাম্প–শি বৈঠকের ঠিক আগে কার্যকর হয়—ইঙ্গিত দেয় যে বেইজিং ভবিষ্যতেও এই খনিজ আধিপত্যকে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।

শি–ট্রাম্প বৈঠকের তাৎপর্য

বিশ্ব অর্থনীতির দৃষ্টি ছিল এই বৈঠকের দিকে। ট্রাম্প বলেছিলেন, “চীনের আর কোনো বাধা নেই”, কিন্তু বেইজিং এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। যেহেতু বিশ্বে রেয়ার আর্থ প্রক্রিয়াজাতকরণের ৯০% চীনের হাতে, তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক বাজারে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।

যদি এই চুক্তি স্থায়ী হয়, তাহলে তা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে কিছুটা স্থিতিশীল করতে পারে। কিন্তু ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিকল্প উৎস তৈরির চেষ্টা ত্বরান্বিত করবে—যা ভবিষ্যতে বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা কাঠামোকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে।

সারসংক্ষেপ

রেয়ার আর্থ কেবল খনিজ নয় — এটি আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তি এবং এখন এক নতুন ভূরাজনৈতিক মুদ্রা। চীনের এই খনিজ নিয়ন্ত্রণ তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অসাধারণ প্রভাবশালী করেছে। ফলে, এই উপাদানগুলো কেবল শিল্প বা বাণিজ্যের বিষয় নয়, বরং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণের অন্যতম উপাদান হয়ে উঠেছে।


অনুপম সাহা: একাউন্টেন্ট, কলামিস্ট

মতামত এর আরও খবর