img

‘টু বি অর নট টু বি’: বাংলাদেশের সন্ধিক্ষণ

প্রকাশিত :  ১০:২২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বর্ষাকালীন বিদ্রোহের এক বছর পর—কোন পথে দেশ?

‘টু বি অর নট টু বি’: বাংলাদেশের সন্ধিক্ষণ

ইমরান চৌধুরী 

জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র আন্দোলনের পর ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটে; নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠিত হয়। এক বছর পর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে দুই পথে: প্রতিষ্ঠানভিত্তিক গণতন্ত্র না কি জনতার আদালত; আইনের শাসন না কি গুজব-নির্ভর প্রতিশোধ; বহুত্ববাদী প্রজাতন্ত্র না কি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ।

২০২৪–২৫ সালে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে—আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড ও ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধের মতো প্রয়াস—যেগুলোকে শাসকদল বলছে “রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের” দায়-জবাবদিহির পূর্বশর্ত। সমর্থকরা এটিকে শৃঙ্খলা ফেরানো বলেন; সমালোচকেরা দেখেন আইনের ব্যতিক্রমী শাসন। এ দ্বন্দ্বই পরবর্তী পথচলার কেন্দ্রীয় প্রশ্ন।

গণতন্ত্রের কসাটি: প্রতিষ্ঠান বনাম ইম্প্রোভাইজেশন

এই রূপান্তরের প্রাণ হলো দ্রুত কার্যকর প্রতিষ্ঠান—স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, কার্যকর পুলিশ-আদালত, স্বাধীন গণমাধ্যম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যে রোডম্যাপ দিয়েছে—নিরাপত্তা খাত ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার—এখনো অসম্পূর্ণ। সময়মতো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আস্থার নোঙর হবে; বিলম্ব অনিশ্চয়তাকে স্বাভাবিক করে তোলে।

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন—রাজনীতির মাঠে জনতাবাদী ও ইসলামপন্থী ধারার প্রভাব বেড়েছে। দ্য ডিপ্লোম্যাট বলছে, সন্ত্রাসদমন ব্যবস্থার দুর্বলতা ও নিরাপত্তা সংস্থার ক্ষমতা কমানো এমন শূন্যতা সৃষ্টি করেছে যাতে জঙ্গি ও কট্টর গোষ্ঠী সুযোগ পেতে পারে। আল জাজিরা একই সাথে উচ্ছ্বাস, নিষেধাজ্ঞা ও ট্রাইব্যুনাল—এ তিন ধারার মিলনকেই বর্তমান বাস্তবতা হিসেবে দেখায়।

জনতার বিচার: ক্লান্ত প্রতিষ্ঠানের লক্ষণ

সবচেয়ে উদ্বেগজনক প্রবণতা হলো “মব জাস্টিস”—ফেসবুক/টিকটকের গুজব থেকে উসকে ওঠা গণপিটুনি, “জনতার আদালত”, লাইভস্ট্রিমড শাস্তি। অক্সফোর্ড হিউম্যান রাইটস হাবে একে বলা হয়েছে জীবনাধিকার-লঙ্ঘন; একটি গবেষণা দেখায়, কীভাবে প্ল্যাটফর্ম-অ্যালগরিদম নৈতিক আতঙ্ককে সহিংসতায় রূপ দেয়। সংবাদমাধ্যমও একাধিক ঘটনায় জনতার হাতে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার বর্ণনা দেয়। আদালত-পুলিশ যদি দৃশ্যমানভাবে কাজ না করে, জনতা করবে—এটি ইতিহাসের কঠিন শিক্ষা।

একই সঙ্গে সাংবাদিক-লেখকদের ওপর হামলার খবরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সিপিজে বলছে—কারাবন্দি/তদন্তাধীন সাংবাদিক এখনো আছেন; এই প্রেক্ষাপটে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হলো গণতন্ত্রের ফুসফুস। এইচআরডব্লিউ-এর মার্চ ২০২৫ বিবৃতিও বলেছে—রাষ্ট্র-বহির্ভূত সহিংসতা থেকেও নাগরিকদের রক্ষা করা সরকারের দায়।

বিচারব্যবস্থার ওপর চাপ: ২০২৪-এর শিক্ষা

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রদের আল্টিমেটাম-পরবর্তী চাপের মুখে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগে সম্মত হন এবং সরে দাঁড়ান। ব্যক্তিপ্রীতি-অপ্রীতি যাই থাক, ভিড়ের চাপে সাংবিধানিক পদাধিকারীকে সরানো বিপজ্জনক নজির। আদালত জবাবদিহির আওতায় থাকবে—কিন্তু আইনের মাধ্যমে, অবরোধের মাধ্যমে নয়।

এ শিক্ষা ২০২৫-এ আরও জরুরি—যখন দলগতভাবে রাজনৈতিক সত্ত্বাকে বিচারের আওতায় আনার মতো নজিরবিহীন ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি আইনি পদক্ষেপে ন্যায়বিচারের মানদণ্ড, আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার, এবং “সমষ্টিগত অপরাধ” ধারণা থেকে দূরে থাকা নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্নীতির গুঞ্জন: অভিযোগ, প্রতিবাদ, আর প্রমাণের দায়

২০২৫-এর আগস্টে এক সাবেক আমলা আটজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন; মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রমাণ থাকলে আইনগতভাবে দিতে বলেন; শীর্ষ দৈনিকগুলো অভিযোগকে আপাতত “অপ্রমাণিত” বলেছে। দায়টি স্পষ্ট: বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ হলে স্বচ্ছ তদন্ত, হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা, সম্পদ ঘোষণার বাধ্যবাধকতা, ই-প্রকিউরমেন্ট, স্বাধীন দুর্নীতি দমন সংস্থা—এগুলোই আস্থা ফেরায়।

বহুত্ববাদের পরীক্ষা

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাই রূপান্তরের মেরুদণ্ড। ২০২৪-এর পর শত শত হামলার দলিল সামনে এসেছে; নারীর অধিকারের প্রস্তাবিত সংস্কারের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থীদের বিরাট সমাবেশ হয়েছে। রাষ্ট্রের কর্তব্য—জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ভয়ভীতি প্রতিহত করা।

প্রবাসে রাজনীতি: বার্তা ও বিপদ

রাজনীতির ঢেউ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। সম্প্রতি লন্ডনে এক অন্তর্বর্তী উপদেষ্টার সফরকে ঘিরে প্রবল বিক্ষোভ, ভিডিও ভাইরাল। প্রবাসী অংশগ্রহণ গণতন্ত্রকে প্রাণ দেয়, তবে বিভাজন-গুজব আমদানিও ঘটাতে পারে। রাষ্ট্রনায়কের কাজ—সম্পর্ক রাখা, কিন্তু সংঘাত রপ্তানি না করা।

‘টু বি’—যে বাংলাদেশ হতে পারে

১. সময়াবদ্ধ, নিয়মভিত্তিক নির্বাচন।

২. রুল অব ল’ পুনর্গঠন।

৩. মব জাস্টিসে শূন্য সহনশীলতা।

৪. মতপ্রকাশের সুরক্ষা।

৫. বহুত্ববাদ রক্ষা।

৬. দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বচ্ছতা।

‘নট টু বি’—যদি পথ হারাই

অন্য পথটি আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি: জরুরি ব্যবস্থা স্থায়ী হয়; ট্রাইব্যুনাল রাজনীতির মঞ্চে গড়ায়; গুজব সংবাদকে প্রতিস্থাপন করে; জনতা আদালতকে; সংখ্যালঘুরা ভীত; নারীর অধিকার থমকে যায়; সাংবাদিকরা আত্মনিয়ন্ত্রণে; প্রবাস রাজনীতি আরও শত্রুতা উসকে দেয়; উগ্রবাদীরা ফাঁক খুঁজে নেয়। তখন “বিপ্লব” গণতন্ত্রে উত্তরণের সেতু নয়—তার অজুহাত হয়ে ওঠে।


লেখক:  ইমরান আহমেদ চৌধুরী বি.ই.এম একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ইতিহাসবিদ ও লেখক।
তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কমিউনিটি লিডার হিসেবে সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও প্রবাসী বাঙালিদের ইতিহাস সংরক্ষণে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।




মতামত এর আরও খবর

img

উন্মুক্ত বিবেক, মুক্ত ফিলিস্তিন!!

প্রকাশিত :  ০৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নুজহাত নূর সাদিয়া

আহা ! বুকের পাঁজর ভাঙা গগনবিদারী আর্তনাদ , নাহ-কোন নিরব জঠর যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের নবজাতক জন্ম দেওয়ার অবিস্মরণীয় ক্ষণটি উদযাপনের আনন্দচ্ছোস নয়, এ যে সহস্র দিনের গ্লানি শেষে এক নিকষ কালো আঁধার পেরিয়ে মাতৃভূমির বুকে নির্ভীক পা রাখা । আবার সেই চিরপরিচিত সবুজ দুর্বা ঘাসে ছুঁটে বেড়ানো , বাড়ন্ত স্কোয়াশের পূর্ণ ঝুঁড়ি, মাংসের রসাল স্যুপ, হাতে বানানো গমের রুটি সহযোগে উদর পূর্তির সেই পারিবারিক সুখস্মৃতি , মায়ায় জড়ানো বছর পার করে দেওয়া সংগ্রামী পরিবারগুলো ফিরে কি পাবে তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ফিলিস্তিন । বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর অজানা আশংকা আর অনিশ্চয়তার অদৃশ্য গেরোতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলে ও বিপরীত শিবিরে ও বহু দিনের ঘরবন্দী প্রিয়মুখগুলো স্বজনদের বাহুডোরে ফেরার অপেক্ষায় । আগ্রাসী ইসরায়েলের ধূলো উড়ানো পথ ও যে আজ শান্তিকামী মানুষের স্বতস্ফূর্ত হাসিতে ভরপুর। 

আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুযায়ী, মোট হতাহতের সংখ্যা  ৬৬,০০০ হাজার ছাঁড়িয়ে গেছে, জীবন-ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ২,৫০,০০০ জন হতভাগ্যকে , বেঁচে যাওয়া অসংখ্য দুরন্ত শৈশব বাকিটা জীবন সম্ভবত এক দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে, আকাশ ছোঁয়া দালান , সুসজ্জিত স্থাপনা আর পুরাকীর্তির শহর ফিলিস্তিন আজ এক মৃতপ্রায় ভুতুড়ে নগরী ।

এই যে  ক্ষতি , তা সন্দেহাতীতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতি । নেতানিয়াহু নামের এক বিকট দানবের ব্যক্তিগত আক্রোশ আর অপরিণামদর্শী যুদ্ধ কৌশলের খেস ারত দিতে হল ফোরাত নদীর তীরবর্তী নিরীহ প্রাণগুলোর। বিশ্ব মানচিত্র হতে ফিলিস্তিন নামক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি ( গাজা প্রায়২১ লক্ষ লোকের আবাস) মাত্র মাসখানিক আগে ও নিরবে মুছে যাচ্ছিল ধনী রাষ্ট্রের তাবেদার মুসলিম বিশ্বের অলস শাসনকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরণের কারণে । মুসলমান ভাই -ভাই, জুলুমবাজের নিস্তার নাই, বিপন্ন মানবতা বহুল চর্চিত প্রবাদগুলো নিতান্তই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির মুখস্থ বুলির মত আউড়ে চলছিল বিশ্বরাজনীতির মোড়লরা । তবে কি, আমজনতার পরম আরাধ্য পার্থিব জীবনের ও সমাপ্তি আছে, আর সেই সমাপ্তি বরাবরই ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছেয়, অসহায়ের পূর্ণ সমর্থনে আর দিনশেষে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ে ।

গৃহকোণের শান্তি গৃহকর্ত্রীর পরম প্রিয়, আর সেই শান্তির সুশীতল পরশ এ ভূগোলকের পরতে পরতে ছঁড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগী মানুষগুলো অনন্য সাধারণ কাজগুলোকে বাস্তবতার আলো দেখান সে মানুষগুলোই কর্মকুশলতায় অর্জন করে নেন সর্ব্বোচ সম্মান -নোবেল । এ নোবেল প্রাপ্তি, কার ও দারিদ্র্য বিমোচনে, চলতি ‘২৫ সালে বিতর্কিত মারিয়া কোরিয়া মাচানো -যার রাষ্ট্রীয় নীতি বহু অসহায় মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে, প্রাক্তন  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক সহ শান্তিতে নোবেল পাওয়া আলোচিত মানুষগুলো পুরষ্কারের কোঠা না মানদন্ড না তাদের কাজের বিষয় এ সূক্ষèাতিসূক্ষè বিষয়গুলো

রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, আর স্বেচ্ছাচারী কর্তা যখন নিজ খেয়াল-খুশি মত আইন -কানুন তৈরি করে অসহায়দের উপর তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন তখন তা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা জায়ানবাদীদের  আধিপত্য আর কতৃর্ত্ববাদের নির্মমতার করুণ পুনরাবৃত্তি বই আর কিছুই নয় । আর ও নির্মম কৌতুক, একদা জায়ানবধের রাজ্য বলে খ্যাত , হিটলারের জার্মান, মাঁখোর  ফ্রান্স , কূটনৈতিক ব্রিটেন সহ দু‘মুখো আরব বিশ্ব সকলে এ নির্মম রসিকতায় সামিল ! দুনিয়া যে ক্ষমতা আর অর্থের পূজারী - পড়ন্ত বেলার প্রাজ্ঞ প্রবীণদের গভীর হতাশার সুরে তা সুস্পষ্ট ।

রুপকথার গল্পের চেয়ে ও বাস্তব জীবনের গল্প অনেকসময় অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠে , হয়ে উঠে প্রকৃত রুপক নতুবা তার চেয়ে ও শক্তিশালী আখ্যান । বিশ টি বছর ধরে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতায় অবরুদ্ধ হামাস , ঠিক জিতে গেল সাহস আর দেশের প্রতি ভালবাসাকে হৃদয়ে লালন করে।

আর, সেই ছোট্ট গেরিলা সদস্যের দলটি আজ কত বড়! মানচিত্র ছাঁড়িয়ে , সীমানা ছাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের অকুতোভয় হামাসরা আজ দুয়ারে দাঁড়ানো দৃঢ় দ্বাররক্ষী । তারাই পারে ,তথাকথিত অজেয় পশ্চিমা শক্তিকে শান্তিচুক্তি নামক সে নাটকীয় ঘটনার অন্যতম যোগানদার করতে। মার্কিন সরকার প্রধান উপযাচক মাত্র-পরিস্থিতি বুঝেই হয়তবা বন্ধুর পথে হাঁটতে চাইছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বর্মটি যে ভিষণ শক্তপোক্ত ও একরোখা ।

তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ছঁড়ি ঘুরানোর দীর্ঘদিনের শক্তলাঠিটি কে যে এবার বাঁকাতেই হয় ।  সাপ ও মরবে লাঠি ও ভাঙবে না, হায় বেনিয়ামিন  কি অসম্মানের এক পরাজয় ! কি অপেক্ষা করছে দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত বুড়ো নেকড়েটির কপালে -বিধ্বস্ত চেহারায় কপালের কুঞ্চিত রেখাগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে বৈকি।

প্রতিরোধ, যুদ্ধের নামে আগ্রাসন আর বসতি স্থানান্তরের নামে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক শরণার্থী , আনুষ্ঠানিক চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় হয়তবা এখন পর্যন্ত বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত । তবে নারীর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ট্রাম্প তার প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিদন্বী বারাকের উপর সম্ভবত সচেতনভাবেই তার রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকালে বিতর্কিত সন্ত্রাসী বনাম ইসলামিক সেনাবাহিনী মতানৈক্যের বিষয়টির উপর  ইঙ্গিত দিয়েছেন । আর , ব্রিটিশ সংসদে চিত্রিত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করে পুরনো বন্ধু ব্লেয়ারের পদাংক অনুসরিত কিনা, তাই আপনমনে যাচাই-বাছাই করে চলেছেন। 

পরিস্থিতির পরিবর্তিত মোড় , কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন লিখিত শান্তি  চুক্তির যে ভিন্ন ভিন্ন ২০টি শর্ত শোভা পাচ্ছে  তার সুচারু বাস্তবায়ন খোদ ট্রাম্পের পক্ষেই যথেষ্ট দুরুহ । পেন্ডুলামের কাঁটা চলমান, হঠকারী ছোটভাই একবার নয় বেশ ক‘বার বড় ভাইয়ের অবাধ্য হয়েছেন , আস্ত উড়োজাহাজ উপহার আর বন্ধুপ্রতীম কাতারের উপর অর্তকিত আক্রমণ । রক্তে যার খুনে নেশা সে পাগলা ঘোড়া কি আদৌ থামবে ? বিলুপ্ত হিজবুল্লা, হুতির হারিয়ে যাওয়া হামাসের নেতৃত্বের শক্তি ক্ষয় , সিরিয়ায় ভাঙ্গন, ইরানের সফল প্রতিরক্ষার ব্যুহ ভেদ- আপাত , দ্বিধাগ্রস্থ ইসরাইল প্রধান সফলতার মাপকাঠিতে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন হয়তবা ।  তবে,গাজামুখি সারি সারি ত্রাণবাহী গাড়ির বহরের দী¦প্ত যাত্রা কি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় নি, নিশ্চিতভাবেই উত্তরটি হ্যা ।

কাঁকচক্ষু দৃষ্টিতে , দৃঢ়তা আর ন্যায়ের বিজয় তবে, অসম এ যুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের চড়া মূল্য দিতে হল  হামাসকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়  হামাস , নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নাগরিক , প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। এই যে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সেই জীবননাশের মূল্য দিতে হল চরমভাবে-গত দু‘বছরে ৬৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত । শক্তিশালী শত্রুর সাথে টক্কর লাগানো  কি এত সোজা!  লোকবল আর সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে পিঁছিয়ে, তবে কিনা নীতি আর ঈমানের শক্তিতে বরাবরি বলীয়ান হামাসিয়ানরা । তাই , এ ক্রান্তিকালে ও ধাপে ধাপে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল তারা, সর্বশেষ গাজায় ৪৮ জন বন্দী ছিলেন , বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ২০ জন। আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দু‘ধাপে জীবিত জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস গত ১৩ই অক্টোবর । মৃতদের মাঝে চার জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ও জানিয়েছে তারা।অপরদিকে, প্রতিপক্ষ ইসরাইলের আচরণ রুঢ়তার সীমা আকাশ  ছুঁয়েছে  বহু আগেই-কারাগারে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা এবং নিপীড়ন করা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যৌন হয়রানির খবর ও পাওয়া গেছে । আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আল-রিমায়ি বলেন- এ দু‘টি বছরে তার ওজন কমেছে ৫০ কেজি ! হাড় সর্বস্ব শরীর জড়িয়ে কন্যার ব্যাকুল আর্তি, বাবা আমি ব্যাথা পাই ।

এখন আবার ট্রাম্পের নতুন চমক, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র উপহার দিবেন এই পাগলাটে রাষ্ট্রপতি রাশান যুদ্ধ থামাতে ।  শুরু হওয়া আফগান -পাকিস্তান সংঘাতে ও তালেবান দের ভূমিকা নিয়ে এক নতুন চেহারার ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে -জামাতা কুশনারের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জুড়ি নেই রাজনৈতিক বুদ্ধিতে ও যে  শ্বশুরকে ভবিষ্যতে টেক্কা দিতে সমর্থ  হবেন  তা তার সাম্প্রতিক স্রোত বুঝে চলার ই পরিপক্ক রুপ ।

আজকের এই পার্থিব পৃথিবীতে  স্রোতস্বিনী টেমস নদী ব্যবহারের মাসকাবারি বিল পরিশোধের সময় ও যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি মগজে নিত্য গেঁথে থাকে -প্রতিটি পানিবিন্দু পরিশোধে পাওনা প্রাপ্য ! অর্থাৎ, জীবনের অপর নাম পানি ও বাতাস সেবনে ও মূল্য চুকাতে হয়, তা যদি হয় কেনসিংটন নামক অভিজাত এলাকার মনোরম ব্যালকনির মুক্ত হাওয়া । বিনামূল্যে    সেবা, সে তো অতীতের গাল গল্প । অথচ, নিঠুর ইসরাইলী বাহিনী    গাজায় ৩০০০ জলপাই গাছ  কেটে , অগণিত বন্য ও পোষা  প্রাণী মেরে আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে  তুলতে চাইছিল  । সেই প্রকৃতিই কিনা আপন মহিমায়  নতুন বোনা জলপাই গাছের পাশ দিয়ে ছুটন্ত শিশুদের  সাদরে বরণ করছে যাদের খাঁচা ভর্তি প্রিয় পোষা  পাখিটির  গুঞ্জন।   

ফিলিস্তিন বাসীদের প্রিয় ম্যান্ডেলা ‘ আল ফাত্তাহ ‘ এখন ও জায়ানবাদীদের জিম্মায় ,  ইসরাইলী সেনাবাহিনী তাকে যমের মত ভয় পায় -যার মুক্তির আলো দেখা এখন ও সংশয়ে ভরা । সন্দেহাতীতভাবেই, তিনিই প্যালেস্টাইনি জনগণের অবিস্বরণীয় মুক্তি সংগ্রামের পরবর্তী আন্দোলনের দিকপাল ।

আজকের দিনের ফ্রি পত্রিকাগুলোর অন্যতম স্লোগান-মুক্ত খবর, মুক্ত চিন্তা । আর বিশ্বজুঁড়ে এই প্রবল বিজয় উদযাপনে মানবতাবাদীদের একটাই আশা মুক্ত হোক মানবতা , জয় হোক শুভ বুদ্ধির।



নুজহাত নূর সাদিয়া,
এলবিপিসি, লন্ডন ১৪ই অক্টোবর‘ ২৫ সাল ।

মতামত এর আরও খবর