img

সিলেটের আজীবন ত্যাগী সংগ্রামী জননেতা বিপ্লবী মফিজ আলী

প্রকাশিত :  ০৭:১৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:০৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিলেটের আজীবন ত্যাগী সংগ্রামী জননেতা বিপ্লবী মফিজ আলী

সংগ্রাম দত্ত: সিলেট বিভাগের রাজনীতি, শ্রমিক আন্দোলন ও প্রগতিশীল সমাজচেতনার ইতিহাসে বিপ্লবী মফিজ আলী এক অনন্য নাম। তিনি একাধারে ভাষা সংগ্রামী, শ্রমিক নেতা, কৃষক নেতা, প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, লেখক ও সাংবাদিক। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর নির্লোভ জীবনযাপন, ত্যাগ, সংগ্রাম ও আদর্শ তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে করে তুলেছিল “বিপ্লবী মফিজ আলী”।

শিক্ষাজীবন ও প্রারম্ভিক ধাপ:

১৯২৭ সালের ১০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শ্রীসূর্য ধোপাটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মফিজ আলী। তাঁর পিতা আজফর আলী এবং মাতা নূরজাহান বিবি। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম সন্তান। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক।

ছাত্রাবস্থাতেই ব্রিটিশবিরোধী চেতনা জাগ্রত হয় তাঁর মধ্যে। বিশেষ করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন করে তোলে। প্রথম জীবনে কট্টর ইসলামপন্থী থাকলেও প্রগতিশীল রাজনৈতিক চেতনার সংস্পর্শে এসে তাঁর মধ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটে।

তিনি এম.সি কলেজের ছাত্রনেতা হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৬ সালে ছাত্রদের ন্যায্য দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখার কারণে সিলেটের এম.সি কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করে। এর ফলে স্নাতক শেষ (চতুর্থ) বর্ষে পড়া অবস্থাতেই তাঁর শিক্ষা জীবন সমাপ্ত হয়।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ:

ভাষা আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে তিনি প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, পরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন। ফেঞ্চুগঞ্জে ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা কমিটিতে যুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে ছাত্রনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৫৭ সালে মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এ যোগ দেন তিনি। পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি ও ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করেন।

১৯৬০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন।

শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনে অবদান:

শৈশব থেকেই কমলগঞ্জের শমসেরনগর চা শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, নির্যাতন-নিপীড়ন তাঁর চোখে পড়ে। শ্রমিকদের প্রতি মমত্ববোধ থেকেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে শ্রমিকদের মাঝে কাজ শুরু করেন।

১৯৬৪ সালের ৫ এপ্রিল তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান চা শ্রমিক সংঘ। এরপর চা শ্রমিকদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে শক্তিশালী আন্দোলন। তাঁর নামে মামলা হলে প্রায় ১০ হাজার চা শ্রমিক শমসেরনগর থেকে মৌলভীবাজার পর্যন্ত মিছিল করে মামলা প্রত্যাহারে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে।

শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি ১৯৬৩ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখানে বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাসের স্মরণীয় বালিশিরা কৃষক আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানেও বৃহত্তর সিলেটে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৫৪,১৯৬০, ১৯৬৪, ১৯৬৫, ১৯৬৭, ১৯৬৯ ও ১৯৭২ সালে রাজনীতির কারণে জীবনে তিনি মোট ৭ বার কারাবরণ করেন এবং প্রায় ৬ বছর জেল খাটেন।

বামপন্থী আন্দোলন ও সংগঠক জীবন:

১৯৬৭ সালে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিভক্তির সময় মফিজ আলী ক্রুশ্চেভীয় সংশোধনবাদের বিরোধিতা করে কমরেড আবদুল হক ও মোহাম্মদ তোহার নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম.এল)-এ যোগ দেন।

একই সময়ে ন্যাপ বিভক্ত হলে সিলেটে ভাসানী ন্যাপের নেতৃত্ব দেন তিনি। কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা জমিদার বাড়ির নবাব আলী ছবদরখান রাজা সাহেব ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা।

স্বাধীনতার পরও তিনি শ্রমিক-কৃষকের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোঃ ইলিয়াসের কাছে পরাজিত হন।

১৯৯৩ সালে তিনি যোগ দেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টে (এনডিএফ)। পরবর্তীতে তিনি মৌলভীবাজার জেলা শাখার সংগঠক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও জেলা সভাপতি হিসেবে চা, রাবার, হোটেল, রিকশা ও দর্জি শ্রমিকদের সংগঠিত করেন।

শিক্ষকতা, লেখালেখি ও সাংবাদিকতা:

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি শিক্ষক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন এবং অসংখ্য রাজনৈতিক নিবন্ধ রচনা করেছেন।

তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ছিল— “পাকিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী শোষণের নমুনা”। পাকিস্তান আমলে ডন, ইত্তেফাক, সংবাদ, জনতা, আজাদ, গণশক্তি প্রভৃতি পত্রিকায় লিখেছেন নিয়মিত। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলোর মধ্যে রয়েছে— “রাষ্ট্রভাষা ও আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন”, “মেদিবসের ইতিহাস” এবং ছোটগল্প “একটি গামছা”।

নব্বইয়ের দশকে সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

শেষ জীবন ও মৃত্যু:

২০০৮ সালের ৩০ আগস্ট কুলাউড়ার এক কৃষক সভা থেকে তিনি ফেরার পথে ধোপাটিলার  নিজ গ্রামের বাড়ির সামনের সড়কে রহস্যজনকভাবে আহত ও পরে ষ্টোকে আক্রান্ত হন ।  অনেকের ধারণা, হেডলাইটবিহীন একটি বাসের ধাক্কায় তিনি আহত হয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ এক মাস ১০ দিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ১০ অক্টোবর ২০০৮  তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

উপসংহার:

বিপ্লবী মফিজ আলী ছিলেন এক অকৃত্রিম শ্রমিক-কৃষক নেতা, যিনি সারাজীবন আপসকামী ও সংশোধনবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। তাঁর সংগ্রামী জীবন আমাদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।

আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ, শ্রমিক-কৃষকের মুক্তির সংগ্রাম এবং অসমাপ্ত কাজই আমাদের পথের দিশারী। রাজনীতিতে তাঁর আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম, শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিপ্লব এবং ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের কাছে চির জাগ্রত হয়ে থাকবে।

সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে তুলে মফিজ আলীর অসমাপ্ত স্বপ্ন— জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই হবে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মতামত এর আরও খবর

img

আগামী নির্বাচনের আগাম পূর্বাভাস

প্রকাশিত :  ১৫:২৮, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৭:২২, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

সাইফুল খান 

বাংলাদেশের রাজনীতি এমন এক রোগে আক্রান্ত, যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের কোনো গ্রন্থে পাওয়া যাবে না। এই রোগের নাম "ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা"। আর এই রোগের উপসর্গ অন্ধত্ব। আমরা সবাই এই অন্ধত্বে আক্রান্ত। নেতা, কর্মী, বুদ্ধিজীবী এমনকি সেই সাধারণ মানুষটিও, যে প্রতি পাঁচ বছর পরপর ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভাবে সে কিছু একটা পরিবর্তন করবে। অথচ পরিবর্তনের নামে সে কেবল সেই পুরনো অসুখটাকেই বুকে নিয়ে বাড়ি ফেরে। সেটার নাম হতাশা।

বিএনপি এই দেশে বিরোধী রাজনীতির বৃহত্তম শক্তি। এ কথা যে মিথ্যা নয়, তা সমীক্ষার সংখ্যাই বলে দেয়। Innovision-এর “People’s Election Pulse Survey (PEPS)”–এ ১০,৪১৩ জন নাগরিকের সাক্ষাতে উঠে এসেছে— ৪১.৩% ভোটার বিএনপিকে ভোট দিতে প্রস্তুত।

আর যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকে তাহলে সেই সমর্থন লাফিয়ে গিয়ে ৪৫.৬%।

৩৯.১% মানুষ মনে করে তারা “আগামী সরকারের যোগ্য দল”। খুলনায় ৪৩.৩%, ময়মনসিংহে ৪৫.৭% সমর্থন এগুলো কোনো সাধারণ সংখ্যা নয়।

কিন্তু শক্তির শিখরে দাঁড়িয়ে যে বিভাজন শুরু হয়েছে, সেটিই BNP-এর সবচেয়ে বড় শত্রু।

শত্রু আওয়ামী লীগ নয়; শত্রু গণতন্ত্র নয়; শত্রু সামরিক বা অ-সামরিক কোনো শক্তিও নয়। তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু নিজেদের ভেতরের মানুষগুলো।

২৩৭টি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হলো, আর দলটি মুহূর্তেই ডুমুরের পাতার মতো কাঁপতে লাগলো। মনোনয়ন বঞ্চিতদের ত্যাগী নেতাদের চোখে ক্ষোভ, কথায় ব্যঙ্গ, বুকে প্রতিহিংসা। তারা ভাবলো “দল আমাকে দেয়নি, দেশ আমাকে অবশ্যই দেবে।” ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঢল দেখার অপেক্ষা করতেই পারে জনগন। 

রাজনীতির এই কান্না, এই আক্রোশ, এই আত্মপরাজয়ের গল্প এমন সময় ঘটছে যখন বিরোধী ভোট তিনটি ধারায় ভেঙে সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রথম ধারাটি হলো- জামায়াত–ই–ইসলামি।

জামায়াত বিরোধী পোক্ত রাজনৈতিক ন্যারেটিভের কারনে অনেকে তাদের অপছন্দ করে। আবার অনেকেই ভালোও বাসে। কিন্তু সংখ্যার গাণিতিক সত্যকে কোনো দার্শনিক লেকচার দিয়ে বদলানো যায় না। জামায়াত জাতীয়ভাবে ৩০.৩% সমর্থন পাচ্ছে এই একই সমীক্ষায়।  রংপুরে তারা ৪৩.৪% যেখানে বিএনপিকেও তারা ছুঁয়ে ফেলে।

এই দলের সঙ্গে এখন আরও ৮টি সমমনা দল যুক্ত হয়েছে৷ একটি জোট, যার উদ্দেশ্য রাজনীতিকে পুনরায় এক বৈশিষ্ট্যময় রূপ দেওয়া।

বিএনপি কি এই বাস্তবতা দেখে?

হ্যাঁ, দেখে।

কিন্তু তারা দেখে ঠিক যেভাবে সূর্যাস্তের দিকে তাকালে মানুষ চোখ বুজে ফেলে।

তারপর আসে তৃতীয় লাইন NCP, জাতীয় নাগরিক পার্টি।  এটি নতুন প্রজন্মের দল।

PEPS-এ এদের সমর্থন ৪.১%। BIGD রিপোর্টে ২.৮%। কিন্তু যুবসমাজে SANEM-এর হিসাব বলছে ১৫.৮৪% সম্ভাবনা।

এই সংখ্যা হয়তো ছোট মনে হতে পারে, কিন্তু “রাজনীতি” নামের যে মৃগয়ায় আসন দখল করতে হয় তার জন্য এই পরিমাণ ভোটই কখনো কখনো সরকার পরিবর্তনের কাঁটা ঘুরিয়ে দেয়।

এনসিপি এমন সময়ে জোট করছে যখন বিএনপি নিজ ঘর সামলাতে ব্যস্ত। জামায়াত তার সমর্থনকে শক্ত জোটে রূপ দিচ্ছে, আর আওয়ামী লীগ নীরব কিন্তু সতর্ক। এনসিপি যেভাবে তরুণ ভোটারের মনস্তত্ত্বে ঢুকেছে BNP তা পারেনি। এনসিপির এই উত্থানই বিশ্লেষকদের মুখে এক নতুন সত্য তুলে এনেছে। জামায়াত যতটা নয়, এনসিপির জোট বিএনপির ভোটকে আরও বেশি ক্ষয় করতে পারে।

এবার জনগণের দিকে তাকাই। PEPS বলছে-

৫৭.৫% মানুষ আইন-শৃঙ্খলাকে সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করে। দ্বিতীয় সমস্যা মূল্যস্ফীতি।

দুর্নীতি ও আইনি সংস্কারও শীর্ষ তালিকায়।

আর সবচেয়ে বড় কথা ৪৮.৫% ভোটার এখনও অনির্ধারিত।

এই অনির্ধারিত মানুষের দলটাই আসল নাটকের মূল চরিত্র। তারা এমন জনগোষ্ঠী যারা রাষ্ট্রের অস্থিরতার মাপ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়, দলের পতাকা দেখে নয়। এই অনির্ধারিত মানুষদের ভোট BNP হারাবে কিনা, তা ঠিক করবে তাদের ভেতরের বিভাজন, জামায়াতের জোটগত শক্তি এবং এনসিপির আগ্রাসী নতুন-রাজনীতির ভাষা।

বিএনপি হয়তো সমীক্ষায় এগিয়ে আছে, কিন্তু রাজনীতি কেবল সমীক্ষার খেলাও নয়।এটি সময়ের নির্মম ব্যঙ্গ। যে দল নিজের ঘরে শান্তি রাখতে পারে না, সে কি দেশের শান্তি রাখতে পারবে? প্রশ্ন অবান্তর নয়, যৌক্তিক।

বিএনপির ভেতরের ক্ষয়, জামায়াতের আলাদা শক্তি, এনসিপির যুব-স্রোত এই তিনটি মিলিয়ে বিএনপির সম্ভাব্য ভোট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে এমনটাই সমীক্ষা, বিশ্লেষক এবং মাঠের বাস্তবতা একসঙ্গে নির্দেশ করছে। সময়ের সাথে বিএনপির ভোট কমার আশংকাই নির্দেশ করছে।

রাজনীতি শেষ পর্যন্ত মানুষের বিচারবুদ্ধির ওপর দাঁড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি দাঁড়ায় মানুষের ক্ষোভের ওপর। আর যে দেশে ক্ষোভই প্রধান চালিকাশক্তি। সেখানে বিভাজনই প্রকৃত নিয়ন্তা।

বিএনপি কি এই বিভাজন সামলাতে পারবে?

জামায়াত কি তাদের জোটকে সত্যিকারের শক্তিতে রূপ দিতে পারবে? এনসিপি কি নতুন প্রজন্মের বিশ্বাসকে ভোটে পরিণত করতে পারবে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা পেতে পারি।

কিন্তু রাজনীতি? রাজনীতি কখনো সরাসরি উত্তর দেয় না। সে দেয় সংকেত, দেয় ইঙ্গিত, আর মাঝেমধ্যে দেয় নির্মম হাসি।

শেষ পর্যন্ত মনে হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন শুধু একটি গণতান্ত্রিক অনুষ্ঠান নয়; এটি ক্ষমতার মনস্তত্ত্বের এক বিশাল মানসিক-নাট্যমঞ্চ, যেখানে প্রত্যেক দল নিজের ট্র্যাজেডি নিজেই রচনা করে, নিজেই অভিনয় করে, আর শেষে বিস্ময়করভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত করতালি দাবি করে!


লেখক-ইতিহাস,রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক।

মতামত এর আরও খবর