
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের উত্থান বি এন পির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ!

কামরুল হাসান
বাংলাদেশের রাজনীতি আবারও এক নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বড় দুটি বিরোধী শক্তি—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামী নতুনভাবে নিজেদের অবস্থান পুনর্নির্মাণ করছে। তবে সাম্প্রতিক ডাকসু, চাকসু, রাকসুসহ দেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নিরুঙ্কুশ বিজয় এবং মাঠের বাস্তবতায় এখন এক প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে: জামায়াতে ইসলামী কেন ধীরে ধীরে বিএনপির চেয়ে বেশি সক্রিয় ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে রয়েছে জামায়াতের শক্তিশালী তৃণমূল সংগঠন, ধারাবাহিক প্রস্তুতি এবং কার্যকর প্রচার কৌশল। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি যখন দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব সংকটে পড়েছিল, তখন জামায়াত দ্রুত মাঠে নামে। তারা ইতিমধ্যে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং দেশজুড়ে ভোটার সংযোগ ও প্রচারণা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপি এখনো মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা বিদেশে বা মামলার জটিলতায় নিষ্ক্রিয়, আর স্থানীয় পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে নেতৃত্বকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব ও ভাঙন। এতে করে অনেক কর্মী ও সমর্থক নতুন বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে জামায়াতে ইসলামি।
দলটি এখন কেবল ধর্মীয় পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নয়; তারা নিজেদের “নৈতিক রাজনীতি” ও “পরিষ্কার প্রশাসন” এর প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে। স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষা, দরিদ্র সহায়তা ও সামাজিক সেবামূলক কর্মসূচি চালিয়ে তারা জনগণের কাছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। এর ফলে জামায়াতের প্রভাব শুধু গ্রামীণ এলাকায় নয়, শহুরে মধ্যবিত্ত ভোটারদের মধ্যেও বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জামায়াতের জনপ্রিয়তা বাড়ার অন্যতম কারণ তাদের আধুনিক যোগাযোগ কৌশল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা অত্যন্ত সক্রিয়, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করে প্রচারণা চালাচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউব ও টেলিগ্রামে তাদের সংগঠিত প্রচারণা বিএনপির তুলনায় অনেক বেশি দৃশ্যমান। বিএনপির প্রচারণা এখনও পুরনো ধাঁচের, যেখানে দলীয় নেতৃত্বকেন্দ্রিক বার্তা বেশি এবং তরুণ ভোটারদের প্রতি যোগাযোগ কম।
এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় যখন আদর্শিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে—আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায়, বিএনপি দুর্বল ও বিভক্ত—তখন জামায়াত অনেক ভোটারের কাছে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠছে। বিশেষ করে ধর্মনিষ্ঠ ও রক্ষণশীল ভোটারদের একটি বড় অংশ এখন জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ সতর্ক করে বলছেন, জামায়াতের অতীত ইতিহাস এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এখনো অনেকের কাছে অগ্রহণযোগ্য। তাই দলটির জন্য চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা অর্জন সহজ হবে না। তবুও তারা ধৈর্য ধরে ধাপে ধাপে প্রভাব বিস্তারের কৌশল নিয়েছে—স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ, তৃণমূল সংগঠন শক্ত করা এবং তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা।
অন্যদিকে বিএনপির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য পুনর্গঠন এবং ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধারের ওপর। যদি তারা দ্রুত সংগঠন পুনর্গঠন করতে না পারে, তাহলে আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী দেশের অন্যতম বড় বিরোধী শক্তি হিসেবে নিজেদের জায়গা সুসংহত করতে পারে।
রাজনীতির এই নতুন বাস্তবতা অনেকের কাছে এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য। একসময় বিএনপির ছায়ায় থাকা জামায়াতে ইসলামি এখন নিজস্ব শক্তিতে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে—আর সেটিই আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত পরিবর্তন হয়ে উঠতে পারে।