img

দেশটা যাচ্ছে রসাতলে, আর আমরা ঠাঁই নিচ্ছি বাসার তলে! –হেঁটে চলা এক হতাশ নাগরিকের আর্তি

প্রকাশিত :  ১৬:৫৯, ২৯ মে ২০২৫

“দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে”—এই বাক্যটি এখন এতটাই পরিচিত এক প্রচারণায় পরিণত হয়েছে যে ঘুমের মধ্যেও শুনতে পাই। এতবার, এতভাবে বলা হয়েছে যে এখন মনে হয়—এ যেন সরকারের মুখে বাজতে থাকা একটি পুরোনো ক্যাসেটমাত্র। অথচ বাস্তব চিত্র কী? চলার মতো একটি সাইকেলও যেন এখন নাগালের বাইরে! যার গাড়ি আছে, সে ছুটছে হরিণের গতিতে; আর যার কিছুই নেই, সে বসে থাকে রাস্তার পাশের ফাটলে। এই বাস্তবতায় নিঃসন্দেহে বলা যায়—দেশ কোনো মহাসড়কে নয়, বরং ধাবিত হচ্ছে রসাতলের দিকেই।

আমরা সাধারণ মানুষ। দিন গুনে, কষ্ট গুনে বেঁচে থাকি। আমাদের নেই ঝকঝকে গাড়ি, নেই সুগন্ধময় নীতিমালা। ঘাম ঝরাই, মাথা খাটাই, আর প্রতিদিন বাস্তবতার কাছে হেরে যাই। আমাদের স্বপ্ন ভাঙে, ব্যবসা ধসে পড়ে, তবুও থেমে থাকি না। কারণ কষ্ট আমাদের জীবনের রুটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। আর দেশের যাঁরা ‘বিলিয়নিয়ার’, তাঁদের জীবন আবর্তিত হয় গলফ কোর্স, কফিশপ আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনফারেন্স রুম ঘিরে। আমাদের হাঁচি-কাশিও তাঁদের কাছে যেন একধরনের শব্দদূষণ।

আর প্রধান উপদেষ্টার কথা কী বলব? তাঁর দিনরাত কাটে উন্নয়নের অঙ্ক কষে। কোন প্রকল্পে কত কোটি টাকা যাবে, কোন বিদেশিকে কোন রঙের গালিচায় অভ্যর্থনা জানানো হবে—এসব নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অথচ দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কীভাবে বাঁচছে, আদৌ বাঁচছে কি না—সেই খোঁজ তাঁর এজেন্ডায় নেই। তাঁর কাছে উন্নয়ন মানে শুধু টাকা-পয়সার হিসাব।

আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা এখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছি। দোকানের ভাড়া বাকি, কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না, পণ্য স্টকে জমে আছে—বিক্রি নেই। এমনকি পিঁপড়েও যদি দোকানে ঢুকে পড়ে, মনে হয়—চিনিটা অন্তত কেউ খেয়ে গেল! এটাই বা কম কী?

ব্যাংকে গেলেও আশার আলো নিভে যায়। ঋণের আবেদন করলেই বলা হয়—“ফাইন্যান্সিয়াল রিস্ট্রাকচারিং চলছে, স্যার।” অর্থাৎ—এখন কিছুই পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নিজেই বলছেন—দশটিরও বেশি ব্যাংক দেউলিয়ার পথে। তাহলে প্রশ্ন উঠে—আমরা যাব কোথায়? কোথায় সেই আশ্বাস, সেই নিরাপদ সঞ্চয়ের ভরসা?

এই দেশের আরেক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো—প্রত্যেকে যেন একেকজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী! চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কিংবা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেশ ও উন্নয়ন নিয়ে বড় বড় তত্ত্ব দেন। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় পাশে থাকেন না কেউ। উন্নয়নের ট্রেন কখনোই প্ল্যাটফর্মে আসে না—আমরা শুধু দাঁড়িয়ে থাকি আর চুল পাকতে দেখি। এমনকি মনে হয়, মেট্রোরেল ফরিদপুরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমরা কবরে চলে যাব।

আর পুঁজিবাজার? সেখানে এখন যা চলছে, তা দিয়ে একটি ‘হরর-ট্র্যাজেডি’ সিনেমা বানানো সম্ভব! সূচক পড়ছে, আর বিনিয়োগকারীরা একে একে ফাঁদে পড়ছেন। এই বাজারের ভিত্তি কী? উত্তর আসে—“আস্থা।” আমরা বলি—“আস্থার স্টকটা কোথায়?”

এই বিপর্যয়ের অন্যতম রচয়িতা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তাঁর একটি মাউস ক্লিকেই সূচক যেন তলানিতে নেমে যায়! পুঁজিবাজারের পতন এমনভাবে হচ্ছে, যেন আকাশে না-ওড়া ঘুড়িকেও কেউ গুলি করে নামিয়ে দিচ্ছে! অফিসের দরজায় নাকি লেখা থাকে—“Investor beware: Survival not guaranteed.”

অন্যদিকে অর্থ উপদেষ্টা সালেউদ্দিন আহমেদের ভাবনা এমন—উন্নয়নের প্রসঙ্গ উঠলেই বলেন, “দেখা যাবে, ভাবা যাবে; না হলেও সমস্যা নেই।” তাঁর এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে উন্নয়ন নয়, বরং হতাশার এক করুণ চিত্রপটই আঁকা যায়।

আমরা যাঁদের জন্য দিনরাত খেটে যাচ্ছি, তাঁরা আমাদের কণ্ঠ শোনেন না। বড়লোকেরা কফির কাপ হাতে ভাবেন—“গরিব মানেই অলস।” তাঁরা জানেন না, আমরা প্রতিদিন সকালে দোকানের ঝাঁপ তুলি, বিক্রি না হলে রাতে স্ত্রীর চোখের জবাব দিই, সন্তানের স্কুল ফি বাকি রাখি—তবুও মন থেকে চেষ্টা থামাই না।

উন্নয়ন মানে শুধু বড় বড় প্রকল্প নয়। উন্নয়ন মানে হচ্ছে—একজন দোকানদার যেন দিনের শেষে হাঁফ ছেড়ে ঘুমাতে পারেন; একজন মা-বাবা যেন সন্তানের স্কুলের বেতন দিতে পারেন; একজন কর্মচারী যেন মাসের শেষে বেতন হাতে পান। এটাই উন্নয়নের মৌলিক রূপ।

আশার কথা হলো, এখনো কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা হার মানেননি। ঝড় এলেও তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, কান্না গিলে হাসেন। তাঁরা দেশ ছাড়েন না, কারণ বিশ্বাস করেন—এই দেশ আমাদের, সাধারণ মানুষের। এই দেশ সরকারের নয়, উপদেষ্টাদের নয়, ধনীদেরও নয়—এই দেশটা আমাদের, যাঁরা কোনো ব্যালান্সশিটে নেই, কিন্তু কাঁধে করে দেশটাকে টেনে নিয়ে চলেছেন।

একদিন যদি এই দেশ ঘুরে দাঁড়ায়, তাহলে ইতিহাসে লেখা থাকবে—“এই দেশকে এগিয়ে নিয়েছিলেন সেই মানুষগুলো, যাঁদের গায়ে ঘাম ছিল, কিন্তু নাম ছিল না খবরে।”

আর যদি কিছুই না হয়, যদি সত্যিই দেশ রসাতলে যায়—তবুও অন্তত বলতে পারব, আমরা চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। যেমন ফুটপাতে বসে থাকা এক শিশুটি বলে—“আমরা তো খাটছি ভাই। যারা উপরে আছেন, তাঁরা যদি একটু নিচে তাকান, তাহলে হয়তো আমরাও বাঁচার একটা রাস্তা পাব।” আর যদি তাঁরা না তাকান, তাহলে আমাদেরই গড়তে হবে সেই পথ—হোক বাঁশের সাঁকো, হোক কাঁধে তুলে নেওয়া—আমরা চলতেই থাকব।



মতামত এর আরও খবর

img

উন্মুক্ত বিবেক, মুক্ত ফিলিস্তিন!!

প্রকাশিত :  ০৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নুজহাত নূর সাদিয়া

আহা ! বুকের পাঁজর ভাঙা গগনবিদারী আর্তনাদ , নাহ-কোন নিরব জঠর যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের নবজাতক জন্ম দেওয়ার অবিস্মরণীয় ক্ষণটি উদযাপনের আনন্দচ্ছোস নয়, এ যে সহস্র দিনের গ্লানি শেষে এক নিকষ কালো আঁধার পেরিয়ে মাতৃভূমির বুকে নির্ভীক পা রাখা । আবার সেই চিরপরিচিত সবুজ দুর্বা ঘাসে ছুঁটে বেড়ানো , বাড়ন্ত স্কোয়াশের পূর্ণ ঝুঁড়ি, মাংসের রসাল স্যুপ, হাতে বানানো গমের রুটি সহযোগে উদর পূর্তির সেই পারিবারিক সুখস্মৃতি , মায়ায় জড়ানো বছর পার করে দেওয়া সংগ্রামী পরিবারগুলো ফিরে কি পাবে তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ফিলিস্তিন । বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর অজানা আশংকা আর অনিশ্চয়তার অদৃশ্য গেরোতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলে ও বিপরীত শিবিরে ও বহু দিনের ঘরবন্দী প্রিয়মুখগুলো স্বজনদের বাহুডোরে ফেরার অপেক্ষায় । আগ্রাসী ইসরায়েলের ধূলো উড়ানো পথ ও যে আজ শান্তিকামী মানুষের স্বতস্ফূর্ত হাসিতে ভরপুর। 

আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুযায়ী, মোট হতাহতের সংখ্যা  ৬৬,০০০ হাজার ছাঁড়িয়ে গেছে, জীবন-ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ২,৫০,০০০ জন হতভাগ্যকে , বেঁচে যাওয়া অসংখ্য দুরন্ত শৈশব বাকিটা জীবন সম্ভবত এক দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে, আকাশ ছোঁয়া দালান , সুসজ্জিত স্থাপনা আর পুরাকীর্তির শহর ফিলিস্তিন আজ এক মৃতপ্রায় ভুতুড়ে নগরী ।

এই যে  ক্ষতি , তা সন্দেহাতীতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতি । নেতানিয়াহু নামের এক বিকট দানবের ব্যক্তিগত আক্রোশ আর অপরিণামদর্শী যুদ্ধ কৌশলের খেস ারত দিতে হল ফোরাত নদীর তীরবর্তী নিরীহ প্রাণগুলোর। বিশ্ব মানচিত্র হতে ফিলিস্তিন নামক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি ( গাজা প্রায়২১ লক্ষ লোকের আবাস) মাত্র মাসখানিক আগে ও নিরবে মুছে যাচ্ছিল ধনী রাষ্ট্রের তাবেদার মুসলিম বিশ্বের অলস শাসনকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরণের কারণে । মুসলমান ভাই -ভাই, জুলুমবাজের নিস্তার নাই, বিপন্ন মানবতা বহুল চর্চিত প্রবাদগুলো নিতান্তই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির মুখস্থ বুলির মত আউড়ে চলছিল বিশ্বরাজনীতির মোড়লরা । তবে কি, আমজনতার পরম আরাধ্য পার্থিব জীবনের ও সমাপ্তি আছে, আর সেই সমাপ্তি বরাবরই ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছেয়, অসহায়ের পূর্ণ সমর্থনে আর দিনশেষে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ে ।

গৃহকোণের শান্তি গৃহকর্ত্রীর পরম প্রিয়, আর সেই শান্তির সুশীতল পরশ এ ভূগোলকের পরতে পরতে ছঁড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগী মানুষগুলো অনন্য সাধারণ কাজগুলোকে বাস্তবতার আলো দেখান সে মানুষগুলোই কর্মকুশলতায় অর্জন করে নেন সর্ব্বোচ সম্মান -নোবেল । এ নোবেল প্রাপ্তি, কার ও দারিদ্র্য বিমোচনে, চলতি ‘২৫ সালে বিতর্কিত মারিয়া কোরিয়া মাচানো -যার রাষ্ট্রীয় নীতি বহু অসহায় মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে, প্রাক্তন  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক সহ শান্তিতে নোবেল পাওয়া আলোচিত মানুষগুলো পুরষ্কারের কোঠা না মানদন্ড না তাদের কাজের বিষয় এ সূক্ষèাতিসূক্ষè বিষয়গুলো

রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, আর স্বেচ্ছাচারী কর্তা যখন নিজ খেয়াল-খুশি মত আইন -কানুন তৈরি করে অসহায়দের উপর তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন তখন তা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা জায়ানবাদীদের  আধিপত্য আর কতৃর্ত্ববাদের নির্মমতার করুণ পুনরাবৃত্তি বই আর কিছুই নয় । আর ও নির্মম কৌতুক, একদা জায়ানবধের রাজ্য বলে খ্যাত , হিটলারের জার্মান, মাঁখোর  ফ্রান্স , কূটনৈতিক ব্রিটেন সহ দু‘মুখো আরব বিশ্ব সকলে এ নির্মম রসিকতায় সামিল ! দুনিয়া যে ক্ষমতা আর অর্থের পূজারী - পড়ন্ত বেলার প্রাজ্ঞ প্রবীণদের গভীর হতাশার সুরে তা সুস্পষ্ট ।

রুপকথার গল্পের চেয়ে ও বাস্তব জীবনের গল্প অনেকসময় অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠে , হয়ে উঠে প্রকৃত রুপক নতুবা তার চেয়ে ও শক্তিশালী আখ্যান । বিশ টি বছর ধরে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতায় অবরুদ্ধ হামাস , ঠিক জিতে গেল সাহস আর দেশের প্রতি ভালবাসাকে হৃদয়ে লালন করে।

আর, সেই ছোট্ট গেরিলা সদস্যের দলটি আজ কত বড়! মানচিত্র ছাঁড়িয়ে , সীমানা ছাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের অকুতোভয় হামাসরা আজ দুয়ারে দাঁড়ানো দৃঢ় দ্বাররক্ষী । তারাই পারে ,তথাকথিত অজেয় পশ্চিমা শক্তিকে শান্তিচুক্তি নামক সে নাটকীয় ঘটনার অন্যতম যোগানদার করতে। মার্কিন সরকার প্রধান উপযাচক মাত্র-পরিস্থিতি বুঝেই হয়তবা বন্ধুর পথে হাঁটতে চাইছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বর্মটি যে ভিষণ শক্তপোক্ত ও একরোখা ।

তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ছঁড়ি ঘুরানোর দীর্ঘদিনের শক্তলাঠিটি কে যে এবার বাঁকাতেই হয় ।  সাপ ও মরবে লাঠি ও ভাঙবে না, হায় বেনিয়ামিন  কি অসম্মানের এক পরাজয় ! কি অপেক্ষা করছে দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত বুড়ো নেকড়েটির কপালে -বিধ্বস্ত চেহারায় কপালের কুঞ্চিত রেখাগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে বৈকি।

প্রতিরোধ, যুদ্ধের নামে আগ্রাসন আর বসতি স্থানান্তরের নামে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক শরণার্থী , আনুষ্ঠানিক চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় হয়তবা এখন পর্যন্ত বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত । তবে নারীর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ট্রাম্প তার প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিদন্বী বারাকের উপর সম্ভবত সচেতনভাবেই তার রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকালে বিতর্কিত সন্ত্রাসী বনাম ইসলামিক সেনাবাহিনী মতানৈক্যের বিষয়টির উপর  ইঙ্গিত দিয়েছেন । আর , ব্রিটিশ সংসদে চিত্রিত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করে পুরনো বন্ধু ব্লেয়ারের পদাংক অনুসরিত কিনা, তাই আপনমনে যাচাই-বাছাই করে চলেছেন। 

পরিস্থিতির পরিবর্তিত মোড় , কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন লিখিত শান্তি  চুক্তির যে ভিন্ন ভিন্ন ২০টি শর্ত শোভা পাচ্ছে  তার সুচারু বাস্তবায়ন খোদ ট্রাম্পের পক্ষেই যথেষ্ট দুরুহ । পেন্ডুলামের কাঁটা চলমান, হঠকারী ছোটভাই একবার নয় বেশ ক‘বার বড় ভাইয়ের অবাধ্য হয়েছেন , আস্ত উড়োজাহাজ উপহার আর বন্ধুপ্রতীম কাতারের উপর অর্তকিত আক্রমণ । রক্তে যার খুনে নেশা সে পাগলা ঘোড়া কি আদৌ থামবে ? বিলুপ্ত হিজবুল্লা, হুতির হারিয়ে যাওয়া হামাসের নেতৃত্বের শক্তি ক্ষয় , সিরিয়ায় ভাঙ্গন, ইরানের সফল প্রতিরক্ষার ব্যুহ ভেদ- আপাত , দ্বিধাগ্রস্থ ইসরাইল প্রধান সফলতার মাপকাঠিতে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন হয়তবা ।  তবে,গাজামুখি সারি সারি ত্রাণবাহী গাড়ির বহরের দী¦প্ত যাত্রা কি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় নি, নিশ্চিতভাবেই উত্তরটি হ্যা ।

কাঁকচক্ষু দৃষ্টিতে , দৃঢ়তা আর ন্যায়ের বিজয় তবে, অসম এ যুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের চড়া মূল্য দিতে হল  হামাসকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়  হামাস , নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নাগরিক , প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। এই যে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সেই জীবননাশের মূল্য দিতে হল চরমভাবে-গত দু‘বছরে ৬৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত । শক্তিশালী শত্রুর সাথে টক্কর লাগানো  কি এত সোজা!  লোকবল আর সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে পিঁছিয়ে, তবে কিনা নীতি আর ঈমানের শক্তিতে বরাবরি বলীয়ান হামাসিয়ানরা । তাই , এ ক্রান্তিকালে ও ধাপে ধাপে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল তারা, সর্বশেষ গাজায় ৪৮ জন বন্দী ছিলেন , বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ২০ জন। আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দু‘ধাপে জীবিত জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস গত ১৩ই অক্টোবর । মৃতদের মাঝে চার জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ও জানিয়েছে তারা।অপরদিকে, প্রতিপক্ষ ইসরাইলের আচরণ রুঢ়তার সীমা আকাশ  ছুঁয়েছে  বহু আগেই-কারাগারে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা এবং নিপীড়ন করা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যৌন হয়রানির খবর ও পাওয়া গেছে । আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আল-রিমায়ি বলেন- এ দু‘টি বছরে তার ওজন কমেছে ৫০ কেজি ! হাড় সর্বস্ব শরীর জড়িয়ে কন্যার ব্যাকুল আর্তি, বাবা আমি ব্যাথা পাই ।

এখন আবার ট্রাম্পের নতুন চমক, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র উপহার দিবেন এই পাগলাটে রাষ্ট্রপতি রাশান যুদ্ধ থামাতে ।  শুরু হওয়া আফগান -পাকিস্তান সংঘাতে ও তালেবান দের ভূমিকা নিয়ে এক নতুন চেহারার ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে -জামাতা কুশনারের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জুড়ি নেই রাজনৈতিক বুদ্ধিতে ও যে  শ্বশুরকে ভবিষ্যতে টেক্কা দিতে সমর্থ  হবেন  তা তার সাম্প্রতিক স্রোত বুঝে চলার ই পরিপক্ক রুপ ।

আজকের এই পার্থিব পৃথিবীতে  স্রোতস্বিনী টেমস নদী ব্যবহারের মাসকাবারি বিল পরিশোধের সময় ও যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি মগজে নিত্য গেঁথে থাকে -প্রতিটি পানিবিন্দু পরিশোধে পাওনা প্রাপ্য ! অর্থাৎ, জীবনের অপর নাম পানি ও বাতাস সেবনে ও মূল্য চুকাতে হয়, তা যদি হয় কেনসিংটন নামক অভিজাত এলাকার মনোরম ব্যালকনির মুক্ত হাওয়া । বিনামূল্যে    সেবা, সে তো অতীতের গাল গল্প । অথচ, নিঠুর ইসরাইলী বাহিনী    গাজায় ৩০০০ জলপাই গাছ  কেটে , অগণিত বন্য ও পোষা  প্রাণী মেরে আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে  তুলতে চাইছিল  । সেই প্রকৃতিই কিনা আপন মহিমায়  নতুন বোনা জলপাই গাছের পাশ দিয়ে ছুটন্ত শিশুদের  সাদরে বরণ করছে যাদের খাঁচা ভর্তি প্রিয় পোষা  পাখিটির  গুঞ্জন।   

ফিলিস্তিন বাসীদের প্রিয় ম্যান্ডেলা ‘ আল ফাত্তাহ ‘ এখন ও জায়ানবাদীদের জিম্মায় ,  ইসরাইলী সেনাবাহিনী তাকে যমের মত ভয় পায় -যার মুক্তির আলো দেখা এখন ও সংশয়ে ভরা । সন্দেহাতীতভাবেই, তিনিই প্যালেস্টাইনি জনগণের অবিস্বরণীয় মুক্তি সংগ্রামের পরবর্তী আন্দোলনের দিকপাল ।

আজকের দিনের ফ্রি পত্রিকাগুলোর অন্যতম স্লোগান-মুক্ত খবর, মুক্ত চিন্তা । আর বিশ্বজুঁড়ে এই প্রবল বিজয় উদযাপনে মানবতাবাদীদের একটাই আশা মুক্ত হোক মানবতা , জয় হোক শুভ বুদ্ধির।



নুজহাত নূর সাদিয়া,
এলবিপিসি, লন্ডন ১৪ই অক্টোবর‘ ২৫ সাল ।

মতামত এর আরও খবর