img

চাঁদা না দেওয়ার ‘অপরাধে’ খুন: পুরান ঢাকায় নিরীহ এক ব্যবসায়ীর রক্তে রঞ্জিত রাজপথ!

প্রকাশিত :  ১৫:৪৬, ১১ জুলাই ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৬:২২, ১১ জুলাই ২০২৫

চাঁদা না দেওয়ার ‘অপরাধে’ খুন: পুরান ঢাকায় নিরীহ এক ব্যবসায়ীর রক্তে রঞ্জিত রাজপথ!

পুরান ঢাকার সরু গলি, দোকানপাটের স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য, রোজকার কোলাহলের মাঝে হঠাৎ ছন্দপতন। একটি গুলির শব্দ, তার পরপরই আরও কয়েকটি। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন এক ব্যবসায়ী। কেউ চিৎকার করেনি, কেউ দৌড়ে আসেনি পাশে। কারণ, পুরো এলাকা যেন আতঙ্কের শিকলে আবদ্ধ।

একজন সাধারণ মানুষ—রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই, কোনো দলীয় পরিচয় নেই; কেবল একজন খেটে খাওয়া দোকানদার। তার ‘অপরাধ’? তিনি চাঁদা দেননি। আর সেই ‘অপরাধের’ পরিণতি—মৃত্যু। প্রকাশ্য রাস্তায়, দিনের আলোয়, শত মানুষের চোখের সামনে।

এরপর যা ঘটেছে, তা শুধু মর্মান্তিক নয়—ভীতিকর, বিকৃত এবং মানবসভ্যতার বুকে এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। একটি নিথর দেহের ওপর দাঁড়িয়ে ঘৃণার নৃত্য পরিবেশন করেছে খুনি। এই দৃশ্য চোখে জল এনে দেয়, হৃদয়ে ঘৃণার আগুন জ্বালায়।

খুনের পর লাশের ওপর নৃত্য!

যিনি গুলি করেছেন, তিনি থেমে যাননি। মৃতদেহের ওপর পা রেখে উল্লাসে নেচেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভিডিও মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ দেখে আঁতকে উঠেছে, কেউ কেউ শেয়ার করেছে “লজ্জার বাংলাদেশ” বলে। কিন্তু তারপর? নিস্তব্ধতা। না আছে প্রতিবাদ, না আছে প্রতিরোধ।

খুনিকে ঘিরে রাজনীতি: “প্রভাবশালী যুবদল নেতার পদপ্রার্থী”

তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন স্থানীয় যুবদল নেতার ঘনিষ্ঠ এবং নিজেও পদপ্রার্থী। তার বিরুদ্ধে অতীতেও সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু বিচার হয়নি, গ্রেপ্তারও হয়নি। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া তাকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে।

এবারও কি সেই পুনরাবৃত্তি ঘটবে? পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “ঘটনাটি চিন্তার বাইরে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো—চিন্তার বাইরে, নাকি দায়িত্ববোধের বাইরে?

রাজনীতির সন্ত্রাসে নিঃশেষ ন্যায়বিচার

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—যেখানে চাঁদা না দিলে প্রাণ যায়, সেখানে কী আদৌ কোনো আইনের শাসন বিদ্যমান? যেখানে খুনি প্রকাশ্যে গুলি করে, ভিডিও ভাইরাল হয়, তবুও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, সেখানে কি রাষ্ট্র কার্যকর?

পুরান ঢাকার এই ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয়—এটা আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিবেকের ব্যর্থতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

“এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?”

এই কি সেই বাংলাদেশ, যার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল? যেখানে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন? আজকের বাংলাদেশে কি আমরা এতটাই নিঃস্ব, যেখানে রাজনৈতিক পরিচয়ই একমাত্র নিরাপত্তা, আর না বলার সাহস মানেই মৃত্যুদণ্ড?

৫ আগস্টের পর যারা নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেন—‘আওয়ামী লীগমুক্ত’ কিংবা ‘হাসিনা-মুক্ত’ বাংলাদেশ গঠনের কথা বলেন—তাদের জন্য এই ঘটনা যেন এক আয়না। কারণ, কেবল সরকার বদলালেই রাষ্ট্র বদলায় না; মানসিকতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি না বদলালে সবই অর্থহীন।

সমাজ যখন নীরব, অপরাধীরা তখন প্রভাবশালী হয়ে ওঠে

মানুষ খুন হলো, ভিডিও ছড়ালো, কিন্তু প্রতিবাদ হলো না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মুখ খোলেননি। আশপাশের দোকানদাররা বলেন, “নাম নিলেই বিপদ, চাঁদা না দিলেই বিপদ!” এই কথায় লুকিয়ে আছে সমাজের গভীর অসহায়ত্ব।

নিরাপত্তাহীনতা, বিচারহীনতা এবং রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের ফলে এমন ভয়াবহ বাস্তবতা গড়ে উঠেছে, যেখানে সৎ মানুষরা গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে, আর খুনিরা বুক ফুলিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অতীতেও ঘটেছে, এবার আরও ভয়ংকর রূপে

এই হত্যাকাণ্ড অনেক পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, ত্বকী হত্যা, রাজনৈতিক সংঘর্ষে ছাত্রদের মৃত্যু—সবই আমাদের সামনে উদাহরণ হয়ে আছে। কিন্তু এবার লাশের ওপর দাঁড়িয়ে নৃত্য—এটা এক নতুন স্তরের বর্বরতা, যেখানে মানবতা নয়, নিষ্ঠুরতাই মূলনীতি।

মানবাধিকার কমিশনের নীরবতা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তা

এমন বর্বর ঘটনার পর মানবাধিকার কমিশন, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের যেভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত ছিল, তেমনটা দেখা যায়নি। কেউ মুখ খুলছে না। কেউ কেউ এটিকে ‘দুই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব’ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন—যেন হত্যাকাণ্ড একটি রাজনৈতিক ঘটনার সাধারণ উপাদান মাত্র।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ, বাস্তবে প্রতিরোধ নেই

ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব—সবখানেই ক্ষোভ। কেউ বলছেন, “আর কত?” কেউ লিখছেন, “বাংলাদেশে বাঁচা কঠিন হয়ে গেছে।” কিন্তু এই ক্ষোভ রাস্তায় নেমে প্রতিরোধে রূপ নিচ্ছে না। মানুষ হয়তো ভীত, হয়তো অভ্যস্ত হয়ে গেছে—নাহ, এটিই যেন এখন ‘নতুন স্বাভাবিক’।

কী করতে হবে?

১. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সুস্পষ্ট অবস্থান প্রয়োজন: দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে খুনিকে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২. পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে: রাজনৈতিক প্রভাবে তদন্তে হস্তক্ষেপ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: প্রতিটি মহল্লা, বাজার ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রতিরোধ কমিটি গঠন জরুরি।

৪. চাঁদাবাজি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে: যেন কেউ চাঁদা দাবি করার সাহস না পায়।

৫. রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন আনতে হবে: দলীয় পরিচয়ের আড়ালে অপরাধ করলে সংশ্লিষ্ট দলকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

আমরা সবাই দায়ী

এই ঘটনার জন্য দায়ী কেবল খুনি নয়—দায়ী রাষ্ট্র, দায়ী প্রশাসন, দায়ী রাজনৈতিক সংস্কৃতি, দায়ী আমাদের সকলের নীরবতা। একজন নিরীহ ব্যবসায়ী খুন হন, আর খুনি তার লাশের ওপর দাঁড়িয়ে নাচে—এই ঘটনা আমাদের মূল্যবোধের পতনের প্রতীক হয়ে রইল।

এই লজ্জা আমাদের, এই নীরবতা আমাদের। প্রশ্ন হলো—আমরা কি জেগে উঠব? না কি পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের খবর লেখার জন্য শুধু আরেকটি নাম অপেক্ষা করছে?

(এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত সামাজিক মাধ্যম পোস্ট এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। নিহত ব্যবসায়ীর পরিচয়, পরিবারের অনুরোধে গোপন রাখা হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে পরবর্তী সংখ্যায় বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।)

মতামত এর আরও খবর

img

উন্মুক্ত বিবেক, মুক্ত ফিলিস্তিন!!

প্রকাশিত :  ০৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নুজহাত নূর সাদিয়া

আহা ! বুকের পাঁজর ভাঙা গগনবিদারী আর্তনাদ , নাহ-কোন নিরব জঠর যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের নবজাতক জন্ম দেওয়ার অবিস্মরণীয় ক্ষণটি উদযাপনের আনন্দচ্ছোস নয়, এ যে সহস্র দিনের গ্লানি শেষে এক নিকষ কালো আঁধার পেরিয়ে মাতৃভূমির বুকে নির্ভীক পা রাখা । আবার সেই চিরপরিচিত সবুজ দুর্বা ঘাসে ছুঁটে বেড়ানো , বাড়ন্ত স্কোয়াশের পূর্ণ ঝুঁড়ি, মাংসের রসাল স্যুপ, হাতে বানানো গমের রুটি সহযোগে উদর পূর্তির সেই পারিবারিক সুখস্মৃতি , মায়ায় জড়ানো বছর পার করে দেওয়া সংগ্রামী পরিবারগুলো ফিরে কি পাবে তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ফিলিস্তিন । বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর অজানা আশংকা আর অনিশ্চয়তার অদৃশ্য গেরোতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলে ও বিপরীত শিবিরে ও বহু দিনের ঘরবন্দী প্রিয়মুখগুলো স্বজনদের বাহুডোরে ফেরার অপেক্ষায় । আগ্রাসী ইসরায়েলের ধূলো উড়ানো পথ ও যে আজ শান্তিকামী মানুষের স্বতস্ফূর্ত হাসিতে ভরপুর। 

আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুযায়ী, মোট হতাহতের সংখ্যা  ৬৬,০০০ হাজার ছাঁড়িয়ে গেছে, জীবন-ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ২,৫০,০০০ জন হতভাগ্যকে , বেঁচে যাওয়া অসংখ্য দুরন্ত শৈশব বাকিটা জীবন সম্ভবত এক দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে, আকাশ ছোঁয়া দালান , সুসজ্জিত স্থাপনা আর পুরাকীর্তির শহর ফিলিস্তিন আজ এক মৃতপ্রায় ভুতুড়ে নগরী ।

এই যে  ক্ষতি , তা সন্দেহাতীতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতি । নেতানিয়াহু নামের এক বিকট দানবের ব্যক্তিগত আক্রোশ আর অপরিণামদর্শী যুদ্ধ কৌশলের খেস ারত দিতে হল ফোরাত নদীর তীরবর্তী নিরীহ প্রাণগুলোর। বিশ্ব মানচিত্র হতে ফিলিস্তিন নামক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি ( গাজা প্রায়২১ লক্ষ লোকের আবাস) মাত্র মাসখানিক আগে ও নিরবে মুছে যাচ্ছিল ধনী রাষ্ট্রের তাবেদার মুসলিম বিশ্বের অলস শাসনকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরণের কারণে । মুসলমান ভাই -ভাই, জুলুমবাজের নিস্তার নাই, বিপন্ন মানবতা বহুল চর্চিত প্রবাদগুলো নিতান্তই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির মুখস্থ বুলির মত আউড়ে চলছিল বিশ্বরাজনীতির মোড়লরা । তবে কি, আমজনতার পরম আরাধ্য পার্থিব জীবনের ও সমাপ্তি আছে, আর সেই সমাপ্তি বরাবরই ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছেয়, অসহায়ের পূর্ণ সমর্থনে আর দিনশেষে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ে ।

গৃহকোণের শান্তি গৃহকর্ত্রীর পরম প্রিয়, আর সেই শান্তির সুশীতল পরশ এ ভূগোলকের পরতে পরতে ছঁড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগী মানুষগুলো অনন্য সাধারণ কাজগুলোকে বাস্তবতার আলো দেখান সে মানুষগুলোই কর্মকুশলতায় অর্জন করে নেন সর্ব্বোচ সম্মান -নোবেল । এ নোবেল প্রাপ্তি, কার ও দারিদ্র্য বিমোচনে, চলতি ‘২৫ সালে বিতর্কিত মারিয়া কোরিয়া মাচানো -যার রাষ্ট্রীয় নীতি বহু অসহায় মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে, প্রাক্তন  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক সহ শান্তিতে নোবেল পাওয়া আলোচিত মানুষগুলো পুরষ্কারের কোঠা না মানদন্ড না তাদের কাজের বিষয় এ সূক্ষèাতিসূক্ষè বিষয়গুলো

রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, আর স্বেচ্ছাচারী কর্তা যখন নিজ খেয়াল-খুশি মত আইন -কানুন তৈরি করে অসহায়দের উপর তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন তখন তা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা জায়ানবাদীদের  আধিপত্য আর কতৃর্ত্ববাদের নির্মমতার করুণ পুনরাবৃত্তি বই আর কিছুই নয় । আর ও নির্মম কৌতুক, একদা জায়ানবধের রাজ্য বলে খ্যাত , হিটলারের জার্মান, মাঁখোর  ফ্রান্স , কূটনৈতিক ব্রিটেন সহ দু‘মুখো আরব বিশ্ব সকলে এ নির্মম রসিকতায় সামিল ! দুনিয়া যে ক্ষমতা আর অর্থের পূজারী - পড়ন্ত বেলার প্রাজ্ঞ প্রবীণদের গভীর হতাশার সুরে তা সুস্পষ্ট ।

রুপকথার গল্পের চেয়ে ও বাস্তব জীবনের গল্প অনেকসময় অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠে , হয়ে উঠে প্রকৃত রুপক নতুবা তার চেয়ে ও শক্তিশালী আখ্যান । বিশ টি বছর ধরে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতায় অবরুদ্ধ হামাস , ঠিক জিতে গেল সাহস আর দেশের প্রতি ভালবাসাকে হৃদয়ে লালন করে।

আর, সেই ছোট্ট গেরিলা সদস্যের দলটি আজ কত বড়! মানচিত্র ছাঁড়িয়ে , সীমানা ছাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের অকুতোভয় হামাসরা আজ দুয়ারে দাঁড়ানো দৃঢ় দ্বাররক্ষী । তারাই পারে ,তথাকথিত অজেয় পশ্চিমা শক্তিকে শান্তিচুক্তি নামক সে নাটকীয় ঘটনার অন্যতম যোগানদার করতে। মার্কিন সরকার প্রধান উপযাচক মাত্র-পরিস্থিতি বুঝেই হয়তবা বন্ধুর পথে হাঁটতে চাইছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বর্মটি যে ভিষণ শক্তপোক্ত ও একরোখা ।

তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ছঁড়ি ঘুরানোর দীর্ঘদিনের শক্তলাঠিটি কে যে এবার বাঁকাতেই হয় ।  সাপ ও মরবে লাঠি ও ভাঙবে না, হায় বেনিয়ামিন  কি অসম্মানের এক পরাজয় ! কি অপেক্ষা করছে দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত বুড়ো নেকড়েটির কপালে -বিধ্বস্ত চেহারায় কপালের কুঞ্চিত রেখাগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে বৈকি।

প্রতিরোধ, যুদ্ধের নামে আগ্রাসন আর বসতি স্থানান্তরের নামে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক শরণার্থী , আনুষ্ঠানিক চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় হয়তবা এখন পর্যন্ত বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত । তবে নারীর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ট্রাম্প তার প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিদন্বী বারাকের উপর সম্ভবত সচেতনভাবেই তার রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকালে বিতর্কিত সন্ত্রাসী বনাম ইসলামিক সেনাবাহিনী মতানৈক্যের বিষয়টির উপর  ইঙ্গিত দিয়েছেন । আর , ব্রিটিশ সংসদে চিত্রিত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করে পুরনো বন্ধু ব্লেয়ারের পদাংক অনুসরিত কিনা, তাই আপনমনে যাচাই-বাছাই করে চলেছেন। 

পরিস্থিতির পরিবর্তিত মোড় , কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন লিখিত শান্তি  চুক্তির যে ভিন্ন ভিন্ন ২০টি শর্ত শোভা পাচ্ছে  তার সুচারু বাস্তবায়ন খোদ ট্রাম্পের পক্ষেই যথেষ্ট দুরুহ । পেন্ডুলামের কাঁটা চলমান, হঠকারী ছোটভাই একবার নয় বেশ ক‘বার বড় ভাইয়ের অবাধ্য হয়েছেন , আস্ত উড়োজাহাজ উপহার আর বন্ধুপ্রতীম কাতারের উপর অর্তকিত আক্রমণ । রক্তে যার খুনে নেশা সে পাগলা ঘোড়া কি আদৌ থামবে ? বিলুপ্ত হিজবুল্লা, হুতির হারিয়ে যাওয়া হামাসের নেতৃত্বের শক্তি ক্ষয় , সিরিয়ায় ভাঙ্গন, ইরানের সফল প্রতিরক্ষার ব্যুহ ভেদ- আপাত , দ্বিধাগ্রস্থ ইসরাইল প্রধান সফলতার মাপকাঠিতে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন হয়তবা ।  তবে,গাজামুখি সারি সারি ত্রাণবাহী গাড়ির বহরের দী¦প্ত যাত্রা কি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় নি, নিশ্চিতভাবেই উত্তরটি হ্যা ।

কাঁকচক্ষু দৃষ্টিতে , দৃঢ়তা আর ন্যায়ের বিজয় তবে, অসম এ যুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের চড়া মূল্য দিতে হল  হামাসকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়  হামাস , নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নাগরিক , প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। এই যে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সেই জীবননাশের মূল্য দিতে হল চরমভাবে-গত দু‘বছরে ৬৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত । শক্তিশালী শত্রুর সাথে টক্কর লাগানো  কি এত সোজা!  লোকবল আর সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে পিঁছিয়ে, তবে কিনা নীতি আর ঈমানের শক্তিতে বরাবরি বলীয়ান হামাসিয়ানরা । তাই , এ ক্রান্তিকালে ও ধাপে ধাপে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল তারা, সর্বশেষ গাজায় ৪৮ জন বন্দী ছিলেন , বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ২০ জন। আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দু‘ধাপে জীবিত জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস গত ১৩ই অক্টোবর । মৃতদের মাঝে চার জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ও জানিয়েছে তারা।অপরদিকে, প্রতিপক্ষ ইসরাইলের আচরণ রুঢ়তার সীমা আকাশ  ছুঁয়েছে  বহু আগেই-কারাগারে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা এবং নিপীড়ন করা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যৌন হয়রানির খবর ও পাওয়া গেছে । আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আল-রিমায়ি বলেন- এ দু‘টি বছরে তার ওজন কমেছে ৫০ কেজি ! হাড় সর্বস্ব শরীর জড়িয়ে কন্যার ব্যাকুল আর্তি, বাবা আমি ব্যাথা পাই ।

এখন আবার ট্রাম্পের নতুন চমক, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র উপহার দিবেন এই পাগলাটে রাষ্ট্রপতি রাশান যুদ্ধ থামাতে ।  শুরু হওয়া আফগান -পাকিস্তান সংঘাতে ও তালেবান দের ভূমিকা নিয়ে এক নতুন চেহারার ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে -জামাতা কুশনারের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জুড়ি নেই রাজনৈতিক বুদ্ধিতে ও যে  শ্বশুরকে ভবিষ্যতে টেক্কা দিতে সমর্থ  হবেন  তা তার সাম্প্রতিক স্রোত বুঝে চলার ই পরিপক্ক রুপ ।

আজকের এই পার্থিব পৃথিবীতে  স্রোতস্বিনী টেমস নদী ব্যবহারের মাসকাবারি বিল পরিশোধের সময় ও যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি মগজে নিত্য গেঁথে থাকে -প্রতিটি পানিবিন্দু পরিশোধে পাওনা প্রাপ্য ! অর্থাৎ, জীবনের অপর নাম পানি ও বাতাস সেবনে ও মূল্য চুকাতে হয়, তা যদি হয় কেনসিংটন নামক অভিজাত এলাকার মনোরম ব্যালকনির মুক্ত হাওয়া । বিনামূল্যে    সেবা, সে তো অতীতের গাল গল্প । অথচ, নিঠুর ইসরাইলী বাহিনী    গাজায় ৩০০০ জলপাই গাছ  কেটে , অগণিত বন্য ও পোষা  প্রাণী মেরে আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে  তুলতে চাইছিল  । সেই প্রকৃতিই কিনা আপন মহিমায়  নতুন বোনা জলপাই গাছের পাশ দিয়ে ছুটন্ত শিশুদের  সাদরে বরণ করছে যাদের খাঁচা ভর্তি প্রিয় পোষা  পাখিটির  গুঞ্জন।   

ফিলিস্তিন বাসীদের প্রিয় ম্যান্ডেলা ‘ আল ফাত্তাহ ‘ এখন ও জায়ানবাদীদের জিম্মায় ,  ইসরাইলী সেনাবাহিনী তাকে যমের মত ভয় পায় -যার মুক্তির আলো দেখা এখন ও সংশয়ে ভরা । সন্দেহাতীতভাবেই, তিনিই প্যালেস্টাইনি জনগণের অবিস্বরণীয় মুক্তি সংগ্রামের পরবর্তী আন্দোলনের দিকপাল ।

আজকের দিনের ফ্রি পত্রিকাগুলোর অন্যতম স্লোগান-মুক্ত খবর, মুক্ত চিন্তা । আর বিশ্বজুঁড়ে এই প্রবল বিজয় উদযাপনে মানবতাবাদীদের একটাই আশা মুক্ত হোক মানবতা , জয় হোক শুভ বুদ্ধির।



নুজহাত নূর সাদিয়া,
এলবিপিসি, লন্ডন ১৪ই অক্টোবর‘ ২৫ সাল ।

মতামত এর আরও খবর