img

নীতিহীন রাজনীতির করুণ পরিণতি: বাংলাদেশের নেতৃত্ব সংকট ও নৈতিকতার চরম অবক্ষয়!

প্রকাশিত :  ১৯:৪২, ১১ জুলাই ২০২৫

নীতিহীন রাজনীতির করুণ পরিণতি: বাংলাদেশের নেতৃত্ব সংকট ও নৈতিকতার চরম অবক্ষয়!

✍️ রেজুয়ান আহম্মেদ 

এক সময় বাংলাদেশের রাজনীতি ছিল ত্যাগ, সাহস ও আদর্শের প্রতীক। এই মাটিতে জন্মেছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মতো নেতৃত্ব, যিনি কখনো বিলাসিতা কিংবা ক্ষমতার মোহে নিজেকে হারাননি। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে আসা এই রাষ্ট্রে এখন রাজনীতি যেন পরিণত হয়েছে আত্মস্বার্থ, লোভ, প্রতারণা ও দুর্নীতির অপর নাম হিসেবে।

দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের চোখের সামনে ঘটছে অবিশ্বাস্য সব ঘটনা—জনপ্রতিনিধিরা জনগণের দুঃখের ভাগীদার হওয়ার পরিবর্তে তাদের শোষক হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। রাজনীতি আজ যেন নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হয়ে এক ধরনের ‘স্বার্থনীতি’-তে পরিণত হয়েছে।

রাজনীতি নয়, যেন ক্ষমতার খেলা!

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে নৈতিকতার ভয়াবহ অবক্ষয়। যে রাজনীতি একসময় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করত, আজ সেই রাজনীতি জাতিকে বিভক্ত করছে দলীয় স্বার্থ ও ব্যক্তি স্বার্থের কারণে।

নির্বাচনের আগে নেতাদের চেনা যায় না—সবাই তখন ‘জনগণের কথা’ বলেন। কিন্তু একবার ক্ষমতায় গেলে তাদের সুর পাল্টে যায়। চোখে পড়ে না সাধারণ মানুষের মুখ, কানে আসে না তাদের আর্তনাদ।

একজন শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেন, “আমার বাবার সময়ের রাজনীতি ছিল মূল্যবোধের জায়গা। এখনকার রাজনীতি দেখে আমি আমার ছেলেকে রাজনীতিতে আসতে নিষেধ করেছি।”

কথায় এক, কিন্তু কাজে আরেক

রাজনীতিকদের মুখে এখনও শোনা যায়—“জনগণের জন্য কাজ করছি।” কিন্তু মাঠে-ময়দানে তার প্রতিফলন কোথায়? বরং দেখা যাচ্ছে—তাদের প্রাসাদতুল্য বাসভবন, বিলাসবহুল গাড়ি, বিদেশে সন্তানদের শিক্ষা; আর এসবের পেছনের অর্থ কোথা থেকে আসে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের শেষ নেই।

প্রতিবার দুর্নীতির তদন্তে উঠে আসে কোনো না কোনো প্রভাবশালী নেতার নাম। কিন্তু বিচারের মুখ দেখে না অধিকাংশই। এসব দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে উঠছে গভীর আস্থার সংকট।

তরুণদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া—এক ভয়ংকর সংকেত

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা বলেন, “ছোটবেলায় রাজনীতি মানে ভেবেছি মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এখন দেখি, রাজনীতি মানে টাকা বানানোর হাইওয়ে। এ থেকে দূরে থাকাই ভালো।”

এই ভাবনা কেবল একজন ছাত্রীর নয়, বরং লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর। তারা এখন রাজনীতিকে দেখছে ভয় ও অনাস্থার জায়গা হিসেবে, যেখানে আদর্শ নয়, বরং সুযোগ সন্ধানীদের দাপট।

এই মানসিকতা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে সৎ, মেধাবী ও জনসম্পৃক্ত মানুষের অভাব হবে নিঃসন্দেহে।

দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় হয়ে উঠেছে

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলে দেখা যায় একটি সাধারণ দৃশ্য—ব্যক্তি পূজা। নীতি, আদর্শ বা কর্মসূচির চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে একজন ‘নেতা’র কথা। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আর যদি কেউ প্রশ্ন তোলে, তবে তার পরিণতি—বহিষ্কার, অপমান কিংবা গুম।

গণতন্ত্র মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মতভিন্নতা সহ্য করা। কিন্তু বাংলাদেশে এখন তা প্রায় বিলুপ্ত। দলীয় নেতৃত্ব মানেই যেন একজন জবাবদিহিহীন সর্বেসর্বা।

রাজনীতি যেন উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পেশা!

বাবা রাজনীতিক, তাই ছেলে সংসদ সদস্য। স্ত্রী কাউন্সিলর, ভাই মেয়র, ভাগ্নে পৌর চেয়ারম্যান—এ যেন এক বংশানুক্রমিক ব্যবসা। অথচ একসময় রাজনীতিতে আসার জন্য ছিল ত্যাগের ইতিহাস, আন্দোলনের ধারাবাহিকতা, আর জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা।

এখন অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতি মানে নিজের পরিবারের ব্যাংক ব্যালান্স বাড়ানোর যন্ত্র। জনগণের কথা শুধু শোভা পায় পোস্টারে, ব্যানারে, বা বক্তৃতার মঞ্চে—বাস্তবে তার খোঁজ নেই।

দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিচারহীনতা

বহু রাজনীতিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও, তেমন কোনো বিচার হয় না। হয়তো কিছুদিন মিডিয়ায় আলোচনায় থাকে, তারপর সব চাপা পড়ে যায়। কারণ বিচার ব্যবস্থাও আজ অনেকাংশে রাজনৈতিক ক্ষমতার ছায়ায় নিয়ন্ত্রিত।

এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করছে এক ভয়ংকর দৃষ্টান্ত—যেখানে একজন সাধারণ মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না যে সৎ থাকা বা সত্য বলা কোনো কাজে আসবে।

গণতন্ত্রের মুখোশে দমননীতি!

নেতৃত্বে যারা রয়েছেন, তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় না। সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধী কণ্ঠরোধ, নির্বাচনে কারচুপি, প্রশাসনকে দলীয়করণ—সব মিলে এক আতঙ্কের পরিবেশ।

প্রশ্ন হচ্ছে—রাজনীতি কি কেবল দল টিকিয়ে রাখার কৌশল? নাকি দেশের মানুষকে ভালো রাখার ব্রত?

কোথায় মানবিকতা? কোথায় দায়িত্ববোধ?

একজন গার্মেন্টস শ্রমিক মারা যান রাস্তায় চিকিৎসার অভাবে—কিন্তু তার পাশে কোনো রাজনীতিক ছিলেন না। অথচ তিনিই সেই মানুষ, যিনি ভোট দিয়েছেন, কর দিয়েছেন।

অন্যদিকে, কোনো দলীয় নেতা অসুস্থ হলেই তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশে পাঠানো হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। এই ব্যবধানই রাজনীতির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

পরিবর্তন আসবেই—প্রয়োজন সাহসী ও সৎ নেতৃত্ব

যদিও পরিস্থিতি কঠিন, তবে এখনও দেশে অনেক তরুণ নেতা আছেন, যারা নিরবে-নিভৃতে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের খুঁজে বের করে সামনে আনতে হবে। দরকার একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আদর্শবান নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।

রাজনীতি হোক মানুষের জন্য। দুর্বৃত্তদের জন্য নয়। সৎ মানুষের জয় হোক, অপরাজনীতির পরাজয় হোক।

সময় এসেছে আয়নার সামনে দাঁড়ানোর

রাজনীতিকদের সামনে এখন দুটি পথ—এক, নিজেদের শুদ্ধ করে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা; দুই, সেই পুরোনো পথে চলতে থাকা, যার শেষ গন্তব্য ধ্বংস।

রাষ্ট্র শুধু অবকাঠামো নয়, এটি একটি আদর্শ, একটি চেতনা। সেই চেতনার ভেতরেই থাকে জাতির ভবিষ্যৎ, নেতৃত্বের বিবেক।

রাজনীতি যদি সত্যিই হয় মানুষের সেবা, তবে তা প্রমাণ করতে হবে কাজের মাধ্যমে। না হলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে, আর ইতিহাস—যেটি বড় নির্মম বিচারক—তখন আর করুণা করবে না।

মতামত এর আরও খবর

img

উন্মুক্ত বিবেক, মুক্ত ফিলিস্তিন!!

প্রকাশিত :  ০৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নুজহাত নূর সাদিয়া

আহা ! বুকের পাঁজর ভাঙা গগনবিদারী আর্তনাদ , নাহ-কোন নিরব জঠর যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের নবজাতক জন্ম দেওয়ার অবিস্মরণীয় ক্ষণটি উদযাপনের আনন্দচ্ছোস নয়, এ যে সহস্র দিনের গ্লানি শেষে এক নিকষ কালো আঁধার পেরিয়ে মাতৃভূমির বুকে নির্ভীক পা রাখা । আবার সেই চিরপরিচিত সবুজ দুর্বা ঘাসে ছুঁটে বেড়ানো , বাড়ন্ত স্কোয়াশের পূর্ণ ঝুঁড়ি, মাংসের রসাল স্যুপ, হাতে বানানো গমের রুটি সহযোগে উদর পূর্তির সেই পারিবারিক সুখস্মৃতি , মায়ায় জড়ানো বছর পার করে দেওয়া সংগ্রামী পরিবারগুলো ফিরে কি পাবে তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ফিলিস্তিন । বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর অজানা আশংকা আর অনিশ্চয়তার অদৃশ্য গেরোতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলে ও বিপরীত শিবিরে ও বহু দিনের ঘরবন্দী প্রিয়মুখগুলো স্বজনদের বাহুডোরে ফেরার অপেক্ষায় । আগ্রাসী ইসরায়েলের ধূলো উড়ানো পথ ও যে আজ শান্তিকামী মানুষের স্বতস্ফূর্ত হাসিতে ভরপুর। 

আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুযায়ী, মোট হতাহতের সংখ্যা  ৬৬,০০০ হাজার ছাঁড়িয়ে গেছে, জীবন-ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ২,৫০,০০০ জন হতভাগ্যকে , বেঁচে যাওয়া অসংখ্য দুরন্ত শৈশব বাকিটা জীবন সম্ভবত এক দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে, আকাশ ছোঁয়া দালান , সুসজ্জিত স্থাপনা আর পুরাকীর্তির শহর ফিলিস্তিন আজ এক মৃতপ্রায় ভুতুড়ে নগরী ।

এই যে  ক্ষতি , তা সন্দেহাতীতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতি । নেতানিয়াহু নামের এক বিকট দানবের ব্যক্তিগত আক্রোশ আর অপরিণামদর্শী যুদ্ধ কৌশলের খেস ারত দিতে হল ফোরাত নদীর তীরবর্তী নিরীহ প্রাণগুলোর। বিশ্ব মানচিত্র হতে ফিলিস্তিন নামক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি ( গাজা প্রায়২১ লক্ষ লোকের আবাস) মাত্র মাসখানিক আগে ও নিরবে মুছে যাচ্ছিল ধনী রাষ্ট্রের তাবেদার মুসলিম বিশ্বের অলস শাসনকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরণের কারণে । মুসলমান ভাই -ভাই, জুলুমবাজের নিস্তার নাই, বিপন্ন মানবতা বহুল চর্চিত প্রবাদগুলো নিতান্তই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির মুখস্থ বুলির মত আউড়ে চলছিল বিশ্বরাজনীতির মোড়লরা । তবে কি, আমজনতার পরম আরাধ্য পার্থিব জীবনের ও সমাপ্তি আছে, আর সেই সমাপ্তি বরাবরই ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছেয়, অসহায়ের পূর্ণ সমর্থনে আর দিনশেষে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ে ।

গৃহকোণের শান্তি গৃহকর্ত্রীর পরম প্রিয়, আর সেই শান্তির সুশীতল পরশ এ ভূগোলকের পরতে পরতে ছঁড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগী মানুষগুলো অনন্য সাধারণ কাজগুলোকে বাস্তবতার আলো দেখান সে মানুষগুলোই কর্মকুশলতায় অর্জন করে নেন সর্ব্বোচ সম্মান -নোবেল । এ নোবেল প্রাপ্তি, কার ও দারিদ্র্য বিমোচনে, চলতি ‘২৫ সালে বিতর্কিত মারিয়া কোরিয়া মাচানো -যার রাষ্ট্রীয় নীতি বহু অসহায় মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে, প্রাক্তন  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক সহ শান্তিতে নোবেল পাওয়া আলোচিত মানুষগুলো পুরষ্কারের কোঠা না মানদন্ড না তাদের কাজের বিষয় এ সূক্ষèাতিসূক্ষè বিষয়গুলো

রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, আর স্বেচ্ছাচারী কর্তা যখন নিজ খেয়াল-খুশি মত আইন -কানুন তৈরি করে অসহায়দের উপর তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন তখন তা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা জায়ানবাদীদের  আধিপত্য আর কতৃর্ত্ববাদের নির্মমতার করুণ পুনরাবৃত্তি বই আর কিছুই নয় । আর ও নির্মম কৌতুক, একদা জায়ানবধের রাজ্য বলে খ্যাত , হিটলারের জার্মান, মাঁখোর  ফ্রান্স , কূটনৈতিক ব্রিটেন সহ দু‘মুখো আরব বিশ্ব সকলে এ নির্মম রসিকতায় সামিল ! দুনিয়া যে ক্ষমতা আর অর্থের পূজারী - পড়ন্ত বেলার প্রাজ্ঞ প্রবীণদের গভীর হতাশার সুরে তা সুস্পষ্ট ।

রুপকথার গল্পের চেয়ে ও বাস্তব জীবনের গল্প অনেকসময় অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠে , হয়ে উঠে প্রকৃত রুপক নতুবা তার চেয়ে ও শক্তিশালী আখ্যান । বিশ টি বছর ধরে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতায় অবরুদ্ধ হামাস , ঠিক জিতে গেল সাহস আর দেশের প্রতি ভালবাসাকে হৃদয়ে লালন করে।

আর, সেই ছোট্ট গেরিলা সদস্যের দলটি আজ কত বড়! মানচিত্র ছাঁড়িয়ে , সীমানা ছাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের অকুতোভয় হামাসরা আজ দুয়ারে দাঁড়ানো দৃঢ় দ্বাররক্ষী । তারাই পারে ,তথাকথিত অজেয় পশ্চিমা শক্তিকে শান্তিচুক্তি নামক সে নাটকীয় ঘটনার অন্যতম যোগানদার করতে। মার্কিন সরকার প্রধান উপযাচক মাত্র-পরিস্থিতি বুঝেই হয়তবা বন্ধুর পথে হাঁটতে চাইছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বর্মটি যে ভিষণ শক্তপোক্ত ও একরোখা ।

তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ছঁড়ি ঘুরানোর দীর্ঘদিনের শক্তলাঠিটি কে যে এবার বাঁকাতেই হয় ।  সাপ ও মরবে লাঠি ও ভাঙবে না, হায় বেনিয়ামিন  কি অসম্মানের এক পরাজয় ! কি অপেক্ষা করছে দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত বুড়ো নেকড়েটির কপালে -বিধ্বস্ত চেহারায় কপালের কুঞ্চিত রেখাগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে বৈকি।

প্রতিরোধ, যুদ্ধের নামে আগ্রাসন আর বসতি স্থানান্তরের নামে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক শরণার্থী , আনুষ্ঠানিক চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় হয়তবা এখন পর্যন্ত বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত । তবে নারীর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ট্রাম্প তার প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিদন্বী বারাকের উপর সম্ভবত সচেতনভাবেই তার রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকালে বিতর্কিত সন্ত্রাসী বনাম ইসলামিক সেনাবাহিনী মতানৈক্যের বিষয়টির উপর  ইঙ্গিত দিয়েছেন । আর , ব্রিটিশ সংসদে চিত্রিত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করে পুরনো বন্ধু ব্লেয়ারের পদাংক অনুসরিত কিনা, তাই আপনমনে যাচাই-বাছাই করে চলেছেন। 

পরিস্থিতির পরিবর্তিত মোড় , কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন লিখিত শান্তি  চুক্তির যে ভিন্ন ভিন্ন ২০টি শর্ত শোভা পাচ্ছে  তার সুচারু বাস্তবায়ন খোদ ট্রাম্পের পক্ষেই যথেষ্ট দুরুহ । পেন্ডুলামের কাঁটা চলমান, হঠকারী ছোটভাই একবার নয় বেশ ক‘বার বড় ভাইয়ের অবাধ্য হয়েছেন , আস্ত উড়োজাহাজ উপহার আর বন্ধুপ্রতীম কাতারের উপর অর্তকিত আক্রমণ । রক্তে যার খুনে নেশা সে পাগলা ঘোড়া কি আদৌ থামবে ? বিলুপ্ত হিজবুল্লা, হুতির হারিয়ে যাওয়া হামাসের নেতৃত্বের শক্তি ক্ষয় , সিরিয়ায় ভাঙ্গন, ইরানের সফল প্রতিরক্ষার ব্যুহ ভেদ- আপাত , দ্বিধাগ্রস্থ ইসরাইল প্রধান সফলতার মাপকাঠিতে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন হয়তবা ।  তবে,গাজামুখি সারি সারি ত্রাণবাহী গাড়ির বহরের দী¦প্ত যাত্রা কি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় নি, নিশ্চিতভাবেই উত্তরটি হ্যা ।

কাঁকচক্ষু দৃষ্টিতে , দৃঢ়তা আর ন্যায়ের বিজয় তবে, অসম এ যুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের চড়া মূল্য দিতে হল  হামাসকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়  হামাস , নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নাগরিক , প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। এই যে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সেই জীবননাশের মূল্য দিতে হল চরমভাবে-গত দু‘বছরে ৬৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত । শক্তিশালী শত্রুর সাথে টক্কর লাগানো  কি এত সোজা!  লোকবল আর সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে পিঁছিয়ে, তবে কিনা নীতি আর ঈমানের শক্তিতে বরাবরি বলীয়ান হামাসিয়ানরা । তাই , এ ক্রান্তিকালে ও ধাপে ধাপে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল তারা, সর্বশেষ গাজায় ৪৮ জন বন্দী ছিলেন , বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ২০ জন। আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দু‘ধাপে জীবিত জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস গত ১৩ই অক্টোবর । মৃতদের মাঝে চার জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ও জানিয়েছে তারা।অপরদিকে, প্রতিপক্ষ ইসরাইলের আচরণ রুঢ়তার সীমা আকাশ  ছুঁয়েছে  বহু আগেই-কারাগারে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা এবং নিপীড়ন করা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যৌন হয়রানির খবর ও পাওয়া গেছে । আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আল-রিমায়ি বলেন- এ দু‘টি বছরে তার ওজন কমেছে ৫০ কেজি ! হাড় সর্বস্ব শরীর জড়িয়ে কন্যার ব্যাকুল আর্তি, বাবা আমি ব্যাথা পাই ।

এখন আবার ট্রাম্পের নতুন চমক, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র উপহার দিবেন এই পাগলাটে রাষ্ট্রপতি রাশান যুদ্ধ থামাতে ।  শুরু হওয়া আফগান -পাকিস্তান সংঘাতে ও তালেবান দের ভূমিকা নিয়ে এক নতুন চেহারার ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে -জামাতা কুশনারের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জুড়ি নেই রাজনৈতিক বুদ্ধিতে ও যে  শ্বশুরকে ভবিষ্যতে টেক্কা দিতে সমর্থ  হবেন  তা তার সাম্প্রতিক স্রোত বুঝে চলার ই পরিপক্ক রুপ ।

আজকের এই পার্থিব পৃথিবীতে  স্রোতস্বিনী টেমস নদী ব্যবহারের মাসকাবারি বিল পরিশোধের সময় ও যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি মগজে নিত্য গেঁথে থাকে -প্রতিটি পানিবিন্দু পরিশোধে পাওনা প্রাপ্য ! অর্থাৎ, জীবনের অপর নাম পানি ও বাতাস সেবনে ও মূল্য চুকাতে হয়, তা যদি হয় কেনসিংটন নামক অভিজাত এলাকার মনোরম ব্যালকনির মুক্ত হাওয়া । বিনামূল্যে    সেবা, সে তো অতীতের গাল গল্প । অথচ, নিঠুর ইসরাইলী বাহিনী    গাজায় ৩০০০ জলপাই গাছ  কেটে , অগণিত বন্য ও পোষা  প্রাণী মেরে আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে  তুলতে চাইছিল  । সেই প্রকৃতিই কিনা আপন মহিমায়  নতুন বোনা জলপাই গাছের পাশ দিয়ে ছুটন্ত শিশুদের  সাদরে বরণ করছে যাদের খাঁচা ভর্তি প্রিয় পোষা  পাখিটির  গুঞ্জন।   

ফিলিস্তিন বাসীদের প্রিয় ম্যান্ডেলা ‘ আল ফাত্তাহ ‘ এখন ও জায়ানবাদীদের জিম্মায় ,  ইসরাইলী সেনাবাহিনী তাকে যমের মত ভয় পায় -যার মুক্তির আলো দেখা এখন ও সংশয়ে ভরা । সন্দেহাতীতভাবেই, তিনিই প্যালেস্টাইনি জনগণের অবিস্বরণীয় মুক্তি সংগ্রামের পরবর্তী আন্দোলনের দিকপাল ।

আজকের দিনের ফ্রি পত্রিকাগুলোর অন্যতম স্লোগান-মুক্ত খবর, মুক্ত চিন্তা । আর বিশ্বজুঁড়ে এই প্রবল বিজয় উদযাপনে মানবতাবাদীদের একটাই আশা মুক্ত হোক মানবতা , জয় হোক শুভ বুদ্ধির।



নুজহাত নূর সাদিয়া,
এলবিপিসি, লন্ডন ১৪ই অক্টোবর‘ ২৫ সাল ।

মতামত এর আরও খবর