বাংলাদেশের জন্ম - ১ : ইমরান চৌধুরী বি, ই,এম
আসছে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করে একান্ন বছরে পদার্পণ করবে, ছুটে চলবে শত বর্ষ পূর্তির মাইল ফলক অর্জনের উদ্দীপনায়। শত বর্ষ আসার আগেই হয়ত স্বাধীনতা আহরণকারী প্রজন্ম বিদায় নিবে উদযাপন না দেখেই । আজকের যে যুবক, তরুণ কিংবা মধ্যবয়সী তাদের অনেকেই হয়ত ভুলে যেuতে বসেছে – বাংলাদেশের জন্মটি কিভাবে হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালের সেই কালোদিন গুলো কেমন ছিল! কি পরিমাণ ত্যাগ শিকার এর মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল – বাংলাদেশ। আমি ১৯৭১ সালের একজন ১১ বয়সী রিফ্যুজি ( শরণার্থী ) কিশোর আজ ৫০ বছর পর ১৯৭১ সালের সেই ত্রিপার্শ্ব (প্রিজমের) কাঁচ এর ভিতর দিয়ে অবলোকন করে বর্ণনা করতে চেষ্টা করছি সেই বাংলাদেশের জন্ম । বাংলা পড়ুয়া জনগোষ্ঠী প্রবাসে দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে – বাংলাদেশের জন্ম আর আমাদের বাংলা ভাষা একে অপরের সাথে যুক্ত সম্পূরক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে। তাই, আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসঃ
এক এক করে সব শহর – বন্দর – থানা – ইউনিয়ন দখল করতে লাগলো পাকিস্থানী জান্তারা – থেমে থাকলো না বাংলা মায়ের দুর্দম সন্তানেরা – ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট – ই, পি, আর ( ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ), আনসার, মুজাহিদ, ছাত্র, জনতা ব্রাক্ষনবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা, শমশেনগর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোহর এ করলো পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হাজার হাজার ছাত্র, জনতা দলে দলে যোগ দিলো – শুরু হলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলার আবাল বৃধ বনিতাদের মুক্তির সংগ্রাম এর অগ্রদূত দল – মুক্তি বাহিনী। রাইফেল, এক এবং দুই নলা বন্ধুক, টু টু বোর রাইফেল, বল্লম, তীরধনুক, থ্রি নট থ্রি রাইফেল, কুচ, বল্লম, বেলচা, কোদাল, সাবল, রামদা, তলওয়ার , মূলী বাঁশের বানানো এক ধরণের বল্লম যা পেয়েছিলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারযোগ্য তাই নিয়েই শুরু হলো বাঙ্গালী সৈন্য দের সঙ্গে জনগনের সম্পৃক্ততার বহিঃপ্রকাশ শত্রুকে প্রতিহত করার প্রয়াস।
অন্য দিকে পাকিস্থানী বাহিনীর গনহত্যা – রেপ – আগুন দিয়ে শহরের পর শহর – বন্দরের পর বন্দর এ ছড়িয়ে পরতে থাকলো। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা সহ সকল শহর ছেড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে যা পরনে ছিল তাই নিয়ে সর্বশ ফেলে ঘর ছেড়ে পালাতে লাগলো গ্রামের দিকে। সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন বাংলা – শহরের দোকান পাঠ, অফিস আদালত সব বন্ধ – কোর্ট কাচারি সব নিস্তব্ধ, সকল যানবাহন, ট্রেন – বাস – লঞ্চ – স্টিমার সব বন্ধ। সারা রাত দিন কারফ্যিউ – চব্বিশ ঘণ্টা ধরে। সাড়ে সাত কোটী মানুষ বাংলার গৃহবন্দী – পাকিস্তানী বাহিনী প্রধান বাংলার কসাই নামে পরিচিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এর ধ্বংসযজ্ঞকে ঐ পিশাচ নাম দিয়েছিল অপারেশন জ্যাকপট - ওদের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল বাংলার সবুজ মাটি কে বাঙ্গালীদের লাল রক্ত দিয়ে লাল রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দিবে। এসব অনেকের কাছেই নিছক বাড়ানো গল্প মনে হতে পারে – আবার অনেককেই শিখানো হয়েছে অনেক হাল্কা ভাবে বর্ণিত গল্প দিয়ে কাড়ন গল্প বর্ণনাকারী চায়নি তার আগামী প্রজন্মের সন্তানেরা জানুক আসল ঘটনা – কি জানি আবার ওরা জেনে না যায় আসল কথা – জেনে গেলে আবার সমূহ বিপদ – কারণ অনেক পিতামাতারা চায়নি তাদের সন্তানেরা জানুক একই ধরমের মানুষ দ্বারা আনয়নকৃত এই জঘন্যতম জেনোসাইড সম্পর্কে ; তাহলে তাদের প্রচারিত বেদবাক্য গুলোতে ফাঁক ফোকর থেকে জেতে পারে। তাই বাংলাদেসের মুসলিমদের উপর পাকিস্থানী মুসলিমদের এই বর্বরতাকে পানি ঢেলে তরলায়ন করে বলা হয়েছে এক শ্রেণীর প্রজন্মকে – কিন্তু এখন সময় এসেছে ওদের সত্য কথাটি জানার – তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বাংলার দামাল ছেলেদের ক্ষুদ্র খন্ড খন্ড যুদ্ধ এবং সেই প্রাগৈতিহাসিক আমলের যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে এই সমর জেতা বা ওদের কাবু করা হয়ে পরেছিল অসম্ভব – নেই অস্ত্র, নেই গুলি, নেই কামান, নেই ট্যাঙ্ক, নেই বোমা, নেই এক্সপ্লোসিভ, নেই যানবাহন, নেই বেতার যোগাযোগ এর ব্যবস্থা তার পরও এপ্রিল মাস পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া এবং আরও বেশ কয়টি শহর দখল করতে দেয় নি বাংলার বীর সেনানীরা। কিন্তু শত্রুর কাছ ছিল কামান , ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান এক বারও ভেবে দেখে নাই বিমান হামলা করলে নিজের দেশের জনগণই মারা পরবে – জনগণ ওদের চোখে ছিল একেবারেই নগণ্য; ওদের দরকার বাংলার জমিন জনগণ বিহীন – ওদের চোখে আমরা ছিলাম কাফের – আমরা নাকি ছিলাম নামে মাত্র মুসলমান – আসলে আমরা ওদের কাছে বিধর্মী কাফের এবং আমাদের উপর গণহত্যা করা জায়েজ – ওদের তথাকথিত জেহাদের অঙ্গ । যুদ্ধে অর্জিত স্ত্রীলোকেরাও ছিল ওদের পাওয়া যৌন উপভোগের সামগ্রী । রাতের আধারে গ্রামে, গঞ্জে, হাঁটে, বাজারে , শহরে, বন্দরে হামলা দিয়ে আগুন জালিয়ে দিত যখন ঘর বাড়ীতে তখন ওরা ওদের দেশীয় দালাল দের মাধ্যমে ধরে নিয়ে যেত আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচার জন্য পলায়নপর যুবতী মেয়ে দের কে কুকর্ম চরিতার্থ করার জন্য আর পুরুষ এবং শিশুদের কে হত্যা করা হত নির্মম ভাবে – লাস সৎকার বা জানাজা এবং দাফন করার কেউ থাকতো না ঐ সব জায়গায় – মৃতদেহ গুলো ঐ ভাবেই পচে গলে একদিন বাঙলার মাটিতে মিশে সম্পৃক্ত হয়ে বিলীন হয়ে যেত ক্রমান্বয়ে একদা – রাতের আধারে ধড়া ঐ সব যুবতীদের এভাবেই দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পাকিস্থানী বর্বর আর্মি রেপ করতে থাকলো লক্ষ লক্ষ বাংলা মায়ের স্ত্রীলিঙ্গের সন্তানদের। ২৫ সে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আট থেকে দশ লক্ষ মহিলার উপর ঐ পিশাচ, বর্বর পাকিস্থানী মুলসিম পাঞ্জাবী ও পাঠান আর্মি চালিয়েছিল বলৎকার। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জঘন্যতম রেপ।
চলবে ……