img

বাংলাদেশের জন্ম - ১ : ইমরান চৌধুরী বি, ই,এম

প্রকাশিত :  ১৩:২৫, ২৮ অক্টোবর ২০২১

বাংলাদেশের জন্ম - ১ : ইমরান চৌধুরী বি, ই,এম

আসছে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করে একান্ন বছরে পদার্পণ করবে, ছুটে চলবে শত বর্ষ পূর্তির মাইল ফলক অর্জনের উদ্দীপনায়। শত বর্ষ আসার আগেই হয়ত স্বাধীনতা আহরণকারী প্রজন্ম বিদায় নিবে উদযাপন না দেখেই । আজকের যে যুবক, তরুণ কিংবা মধ্যবয়সী তাদের অনেকেই হয়ত ভুলে যেuতে বসেছে – বাংলাদেশের জন্মটি কিভাবে হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালের সেই কালোদিন গুলো কেমন ছিল! কি পরিমাণ ত্যাগ শিকার এর মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল – বাংলাদেশ। আমি  ১৯৭১ সালের একজন ১১ বয়সী রিফ্যুজি ( শরণার্থী )  কিশোর আজ ৫০ বছর পর ১৯৭১ সালের সেই ত্রিপার্শ্ব (প্রিজমের) কাঁচ এর  ভিতর দিয়ে অবলোকন করে বর্ণনা করতে চেষ্টা করছি সেই বাংলাদেশের জন্ম । বাংলা পড়ুয়া  জনগোষ্ঠী প্রবাসে দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে – বাংলাদেশের জন্ম আর আমাদের বাংলা ভাষা একে অপরের সাথে যুক্ত সম্পূরক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে। তাই, আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসঃ

এক এক করে সব শহর – বন্দর – থানা –  ইউনিয়ন দখল করতে লাগলো পাকিস্থানী জান্তারা – থেমে থাকলো না বাংলা মায়ের দুর্দম সন্তানেরা – ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট – ই, পি, আর ( ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ), আনসার, মুজাহিদ, ছাত্র, জনতা ব্রাক্ষনবাড়িয়া,  চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা, শমশেনগর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোহর এ  করলো পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হাজার হাজার ছাত্র, জনতা দলে দলে যোগ দিলো – শুরু হলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে  বাংলার আবাল বৃধ বনিতাদের মুক্তির সংগ্রাম এর অগ্রদূত দল – মুক্তি বাহিনী। রাইফেল, এক এবং দুই নলা বন্ধুক, টু টু বোর রাইফেল, বল্লম, তীরধনুক, থ্রি নট থ্রি রাইফেল, কুচ, বল্লম, বেলচা, কোদাল, সাবল, রামদা, তলওয়ার , মূলী বাঁশের বানানো এক ধরণের বল্লম যা পেয়েছিলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারযোগ্য তাই নিয়েই শুরু হলো বাঙ্গালী সৈন্য দের সঙ্গে  জনগনের সম্পৃক্ততার বহিঃপ্রকাশ শত্রুকে প্রতিহত করার প্রয়াস। 

অন্য দিকে পাকিস্থানী বাহিনীর গনহত্যা – রেপ – আগুন দিয়ে শহরের পর শহর – বন্দরের পর বন্দর এ ছড়িয়ে পরতে থাকলো। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা সহ সকল শহর ছেড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে যা পরনে ছিল তাই নিয়ে সর্বশ ফেলে ঘর ছেড়ে পালাতে লাগলো গ্রামের দিকে। সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন বাংলা – শহরের দোকান পাঠ, অফিস আদালত সব বন্ধ – কোর্ট কাচারি সব নিস্তব্ধ, সকল যানবাহন, ট্রেন – বাস – লঞ্চ – স্টিমার সব বন্ধ। সারা রাত দিন কারফ্যিউ – চব্বিশ ঘণ্টা ধরে। সাড়ে সাত কোটী মানুষ বাংলার গৃহবন্দী – পাকিস্তানী বাহিনী প্রধান বাংলার কসাই নামে পরিচিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এর ধ্বংসযজ্ঞকে ঐ পিশাচ নাম দিয়েছিল  অপারেশন জ্যাকপট  - ওদের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল বাংলার সবুজ মাটি কে বাঙ্গালীদের লাল রক্ত দিয়ে লাল রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দিবে। এসব অনেকের কাছেই নিছক বাড়ানো গল্প মনে হতে পারে – আবার অনেককেই শিখানো হয়েছে অনেক হাল্কা ভাবে বর্ণিত গল্প দিয়ে কাড়ন গল্প বর্ণনাকারী চায়নি তার আগামী প্রজন্মের সন্তানেরা জানুক আসল ঘটনা – কি জানি আবার ওরা জেনে না যায় আসল কথা – জেনে গেলে আবার সমূহ বিপদ – কারণ অনেক পিতামাতারা চায়নি তাদের সন্তানেরা জানুক একই ধরমের মানুষ দ্বারা আনয়নকৃত এই জঘন্যতম জেনোসাইড সম্পর্কে ; তাহলে তাদের প্রচারিত বেদবাক্য গুলোতে ফাঁক ফোকর থেকে জেতে পারে। তাই বাংলাদেসের মুসলিমদের উপর পাকিস্থানী মুসলিমদের এই বর্বরতাকে পানি ঢেলে তরলায়ন করে বলা হয়েছে এক শ্রেণীর প্রজন্মকে – কিন্তু এখন সময় এসেছে ওদের সত্য কথাটি জানার – তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। 

বাংলার দামাল ছেলেদের ক্ষুদ্র খন্ড খন্ড যুদ্ধ এবং সেই প্রাগৈতিহাসিক আমলের যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে এই সমর জেতা বা ওদের কাবু করা হয়ে পরেছিল অসম্ভব – নেই অস্ত্র, নেই গুলি, নেই কামান, নেই ট্যাঙ্ক, নেই বোমা, নেই এক্সপ্লোসিভ, নেই যানবাহন, নেই বেতার যোগাযোগ এর ব্যবস্থা তার পরও এপ্রিল মাস পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া এবং আরও বেশ কয়টি শহর দখল করতে দেয় নি বাংলার বীর সেনানীরা। কিন্তু শত্রুর কাছ ছিল কামান , ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান এক বারও ভেবে দেখে নাই বিমান হামলা করলে নিজের দেশের জনগণই মারা পরবে – জনগণ ওদের চোখে ছিল একেবারেই নগণ্য; ওদের দরকার বাংলার জমিন জনগণ বিহীন – ওদের চোখে আমরা ছিলাম কাফের – আমরা নাকি ছিলাম নামে মাত্র মুসলমান – আসলে আমরা ওদের কাছে বিধর্মী কাফের এবং আমাদের উপর গণহত্যা করা জায়েজ – ওদের তথাকথিত জেহাদের অঙ্গ । যুদ্ধে অর্জিত স্ত্রীলোকেরাও ছিল ওদের পাওয়া যৌন উপভোগের সামগ্রী । রাতের আধারে গ্রামে, গঞ্জে, হাঁটে, বাজারে , শহরে, বন্দরে হামলা দিয়ে আগুন জালিয়ে দিত যখন ঘর বাড়ীতে তখন ওরা ওদের দেশীয় দালাল দের মাধ্যমে ধরে নিয়ে যেত আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচার জন্য পলায়নপর যুবতী মেয়ে দের কে কুকর্ম চরিতার্থ করার জন্য আর পুরুষ এবং শিশুদের কে হত্যা করা হত নির্মম ভাবে – লাস সৎকার বা জানাজা এবং দাফন করার কেউ থাকতো না ঐ সব জায়গায় – মৃতদেহ গুলো ঐ ভাবেই পচে গলে একদিন বাঙলার মাটিতে মিশে সম্পৃক্ত হয়ে বিলীন হয়ে যেত ক্রমান্বয়ে একদা – রাতের আধারে  ধড়া ঐ সব যুবতীদের এভাবেই  দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পাকিস্থানী বর্বর আর্মি রেপ করতে থাকলো লক্ষ লক্ষ বাংলা মায়ের স্ত্রীলিঙ্গের সন্তানদের। ২৫ সে মার্চ থেকে ১৬ই  ডিসেম্বর পর্যন্ত আট থেকে দশ লক্ষ মহিলার উপর ঐ পিশাচ, বর্বর পাকিস্থানী মুলসিম পাঞ্জাবী ও পাঠান আর্মি চালিয়েছিল বলৎকার। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জঘন্যতম রেপ। 

চলবে ……

img

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, সংকটের মুখে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো

প্রকাশিত :  ১১:০৩, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল যদি ইরানের ভূ-খণ্ডে পাল্টা হামলা চালায় তাহলে পরিস্থিতি জটিল হবার শঙ্কা মধ্যপ্রাচ্যে। পূর্ণমাত্রায় ধ্বংসাত্মক সংঘাতের মুখোমুখি একটি অঞ্চল আরও সংকটে পড়বে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের পরামর্শ খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে এনে সংযত রাখার এখনই সময়। সংকট উত্তরণে সব পরাশক্তি ও বিশ্ব সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোন বিকল্পও দেখছেন না তারা। 

ইসরায়েলি বাহিনীর লাগামহীন সামরিক তৎপরতার জবাব দিল ইরান। হয়তো, তেহরানের এ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সরাসরি আক্রমণের বৈধতার সুযোগ পেলো ইসরায়েল। যদিও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের এতে সায় মেলেনি। 

পাল্টা হামলা হলে শক্ত জবারের ঘোষণা ইরানের। এক দশকের ছায়াযুদ্ধের পর এই প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থান ভীত করছে বিশ্বকে। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার যে দক্ষিণপন্থী সরকার তাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই একটা সংকট সৃষ্টি বা নতুন করে যুদ্ধ বাঁধাবার চেষ্টা তারা করতে পারে। তাহলে গাজা থেকে দৃষ্টিটা অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া হবে।”

নেতিবাচক কিছু হলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন নতুন সংকটের আঁচ ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্বে। তখন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা বিশ্বের পিছিয়ে থাকার বিকল্প থাকবে না। অপাতত: অস্থিরতা কমানোর পরামর্শ বিশ্লেষকদের।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদ হোসেন বলেন, “ক্রিয়ার একটা প্রতিক্রিয়া এই সার্কেলটা যখন চলমান থাকবে তখন আসলে যুদ্ধের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। দু’পক্ষকেই সংযম প্রদর্শন করে চলার অনুরোধ রয়েছে। এখন দেখার বিষয় হলো তারা এই অনুরোধগুলোকে কতটুকু সমীহ করে।”

হুমায়ূন কবির বলেন, “এই মুহূর্তে রেডলাইন আর নাই। এখন যদি ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ চালায় ইরানের উপর, ধরে নেয়া যায় ইরানও পাল্টা আক্রমণ করবে। তখন কিন্তু এখানে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার বিরাট আশঙ্কা থাকে। কারণ মার্কিন রাষ্ট্র বা পাশ্চাত্য জগত চায়না ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হোক। এরকম ঘটনা ঘটলে পাশ্চাত্য রাজনীতিবিদদের উপর প্রচণ্ড অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হতে পারে।”

সংঘাত নিয়ন্ত্রণ না হলে সমূহ যুদ্ধের সবচেয়ে বেশি মাশুল গুনতে হবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। তেলের দাম বাড়বে, নিত্যপণ্যের দামও বাড়বে। বিদেশী শ্রম বাজার ও রেমিটেন্স আসা বন্ধ হবার উপক্রম তৈরি হবে। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, “ভূমধ্যসাগরের সুয়েজ ক্যানেলে যাতায়াত বন্ধ হবে ও লোহিতসাগরে জটিলতা তৈরি হবে। এটা আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য মহাবিপদের একটা আশঙ্কা।”

অধ্যাপক তৌহিদ হোসেন বলেন, “ওপেকভুক্ত রাষ্ট্রগুলো তারা অনেকেই হয়তো তেলের উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে বা দিতে যাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়বে।”

সব ব্লকের পরাশক্তিদের সংহাত নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা যেমন থাকতে হবে তেমনি বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-সংহাত বিরোধী অবস্থানের কন্ঠ আরও জোড়ালো করার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। 

মতামত এর আরও খবর