img

বাংলাদেশের জন্মঃ শরণার্থীদের মহাসমুদ্র

প্রকাশিত :  ০৯:১৫, ২১ নভেম্বর ২০২১
সর্বশেষ আপডেট: ০৯:১৮, ২১ নভেম্বর ২০২১

বাংলাদেশের জন্মঃ শরণার্থীদের মহাসমুদ্র


ইমরান চৌধুরী  বি.ই.এম

পর্ব – ৫
আসছে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছর পূর্ণ  করে একান্ন বছরে পদার্পণ করবে,  ছুটে চলবে শত বর্ষ পূর্তির মাইল ফলক আহরণের উদ্দীপনায় । শত বর্ষ আসার আগেই হয়ত স্বাধীনতা আহরণকারী প্রজন্ম বিদায় নিবে উদযাপন না দেখেই । আজকের যে যুবক, তরুণ কিংবা মধ্যবয়সী তাদের অনেকেই হয়ত ভুলে যেতে বসেছে – বাংলাদেশের জন্মটি কিভাবে হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালের সেই কালোদিন গুলো কেমন ছিল ! কি পরিমাণ ত্যাগ শিকার এর মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল – বাংলাদেশ । আমি  ১৯৭১ সালের একজন ১১ বয়সী রিফ্যুজি ( শরণার্থী )  কিশোর আজ ৫০ বছর পর ১৯৭১ সালের সেই ত্রিপার্শ্ব ( প্রিজমের) কাঁচ এর  ভিতর দিয়ে অবলোকন করে বর্ণনা করতে চেষ্টা করছি সেই বাংলাদেশের জন্ম । বাংলা পড়ুয়া  জনগোষ্ঠী  প্রবাসে দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে – বাংলাদেশের জন্ম আর আমাদের বাংলা ভাষা একে অপরের সাথে যুক্ত সম্পূরক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে । তাই, আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসঃ
১৯৭১ সাল  আর আজ ২০২১ মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে বাংলাদেশ আজ পঞ্চাশ বছরের পথ অতিক্রম করে ফেলেছে – ১৯৭১ এর যুবকরা আজ ষাট থেকে সত্তর দশকের বয়স্ক, ৭১ এর তরুণরা আজ পঞ্চাশ এর  বেশী বয়স্ক – নতুন প্রজন্ম আজ কি ভাবতে পারে আমরা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেছি তারা কি পরিমাণ অসহায়ত্ব এবং কি পরিমাণ মানসিক, শারীরিক মূল্য দিতে হয়েছিল ১৯৭১ এ । নতুন প্রজন্মের সকলকে তাই আহ্বান করছি তারা যেন জানে বা জানতে চেষ্টা করে কি ভীষণ ত্যাগ স্বীকার করে ছিল তাদের অগ্রজরা ।
শহর , বন্দর, নগরী, মফস্বল, থানা, ইউনিয়ন থেকে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষ ঘর বাড়ি সহায় সম্পত্তি ফেলে প্রাণ বাঁচাবার জন্য আশ্রয় নিতে সুরু করলো গ্রামে গ্রামে – শহর লোকালয়, প্রধান সড়ক, জাতীয় হাইওয়ে, প্রধান রেল লাইন থেকে কিন্তু কোন কিছুই এবং কোন ভাবেই রোখা যাচ্ছিল না ঐ বর্বর, পিশাচ, র্যাপিস্ট পাকিস্তানি পাঠান এবং পাঞ্জাবী নরপশু আর্মির অগ্রসর – গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সকল জায়গায় ঐ নরপশু গুলো একের পর এক আঘাত হানতে শুরু করল নিরীহ, অস্ত্রহীন, সাধারণ মানুষের উপর । বাঙ্গালী নিধনই  তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য – ওরা শুধু চেয়েছিল বাংলার জমিন – বাঙ্গালী মানুষ নয়, ওরা পৃথিবীর বুক থেকে বাঙ্গালী জাতি গোষ্ঠীকে চিরতরে উৎপাটন করতে – ওরা বাঙ্গালী জাতি নিপাত করে ঐ জমিনে বিহারী মসুলামান, কাশ্মীরি মুসলমান, করাচীর মোহাজির মুসলমান দের দিয়ে বাঙ্গালী বিহীন বাংলাকে আবার জনবহুল করবে – তাই বাঙ্গালী নিধন এবং বাঙ্গালী মহিলাদের কে রেপ করে মুছে দিতে চেয়েছিল বাঙ্গালী জাতিসত্তাকে চিরতরে । আগুনের লেলিহানে লেলিহানে জ্বলতে সুরু করল গ্রাম গুলো প্রতি রাতেই পাকিস্তানি পাঠান এবং পাঞ্জাবী আর্মি হামলা চালাতে আরম্ভ করল ঐ সব নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ী তে । শিশু, বাচ্চা, বৃদ্ধ, আবাল বনিতারা রাতের পর রাত কাটাতে শুরু করল ধানের খেতে, আখ এর জমিতে, পাহাড়ে, জংগলে, পাটক্ষেতে ভয়ে তটস্থ, জীবন হারানোর ভয়ে প্রকম্পিত একেকটা শিশু । সে যে কি এক ভীষণ দুরবস্থা তা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই । সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী অবরুদ্ধ তার নিজের দেশে আগ্রাসী সন্ত্রাসী বর্বর পাকিস্তানি পাঠান এবং পাঞ্জাবী বাহিনীর হাতে । গ্রামের কৃষকরা না কাটতে পারছে তার জমির ফসল, না বুনতে পারছে নতুন ফসল, আমদানি রফতানি সব বন্ধ, সবজি ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস শূন্য বাজার, হাট, দোকান, মুদিখানা, বাচ্চাদের জন্য নাই দুধ, শিশু খাদ্য, কাপড়ের দোকানে নাই শাড়ি, লুঙ্গি নাই পাজামার কাপড়। লক্ষ কোটি সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবীরা বেতন বিহীন কর্মক্ষেত্র থেকে পলাতক কপর্দকহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করতে শুরু করল আগন্তক হিসাবে অন্যত্র অন্যের বাড়িতে অযাচিত অতিথি হিসেবে । দ্বিধাগ্রস্থ, উপায়ান্তর না দেখে মানুষ পালাতে শুরু করল দেশ থেকে, ক্ষুদার জালায়, প্রাণের ভয়ে, নিরাপত্তার জন্য, শিশু, সন্তান সন্ততি, পরিবার,  মাতা পিতা, আত্মীয়স্বজনের জীবন রক্ষা করতে । মানুষের এক মহা সমুদ্রএ পরিণীত হল সারা বাংলা, পলায়নপর, ভীতসন্ত্রস্ত্র বাঙ্গালিদের ঢলে । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এই প্রথম পৃথিবী দেখতে পেলো সবচে বড়  শরণার্থী ( রিফ্যুজি ) ক্রাইসিস ।

দিকবিহীন ভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনুপ্রবেশ করতে শুরু করল আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে – ইন্ডিয়ার ত্রিপুরা প্রদেশ যা কিনা – ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট,  নোয়াখালী, চট্টগ্রাম সংলগ্ন, মেঘালয় যা নাকি সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, কিশোরগঞ্জ সংলগ্ন, আসাম যা সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, হাওর এলাকা, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনার ভাটি অঞ্চল এর নিকটে, কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, নাতোর, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রংপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, বরিশাল, সাতক্ষিরা এই সব এলাকার মানুষ উপচে পরতে শুরু করল ভারতের পশ্চিমবংগে – রাত দিন সকাল সন্ধ্যায় প্রতিদিন । চলবে...

মতামত এর আরও খবর

img

উন্মুক্ত বিবেক, মুক্ত ফিলিস্তিন!!

প্রকাশিত :  ০৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নুজহাত নূর সাদিয়া

আহা ! বুকের পাঁজর ভাঙা গগনবিদারী আর্তনাদ , নাহ-কোন নিরব জঠর যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের নবজাতক জন্ম দেওয়ার অবিস্মরণীয় ক্ষণটি উদযাপনের আনন্দচ্ছোস নয়, এ যে সহস্র দিনের গ্লানি শেষে এক নিকষ কালো আঁধার পেরিয়ে মাতৃভূমির বুকে নির্ভীক পা রাখা । আবার সেই চিরপরিচিত সবুজ দুর্বা ঘাসে ছুঁটে বেড়ানো , বাড়ন্ত স্কোয়াশের পূর্ণ ঝুঁড়ি, মাংসের রসাল স্যুপ, হাতে বানানো গমের রুটি সহযোগে উদর পূর্তির সেই পারিবারিক সুখস্মৃতি , মায়ায় জড়ানো বছর পার করে দেওয়া সংগ্রামী পরিবারগুলো ফিরে কি পাবে তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ফিলিস্তিন । বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর অজানা আশংকা আর অনিশ্চয়তার অদৃশ্য গেরোতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলে ও বিপরীত শিবিরে ও বহু দিনের ঘরবন্দী প্রিয়মুখগুলো স্বজনদের বাহুডোরে ফেরার অপেক্ষায় । আগ্রাসী ইসরায়েলের ধূলো উড়ানো পথ ও যে আজ শান্তিকামী মানুষের স্বতস্ফূর্ত হাসিতে ভরপুর। 

আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুযায়ী, মোট হতাহতের সংখ্যা  ৬৬,০০০ হাজার ছাঁড়িয়ে গেছে, জীবন-ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ২,৫০,০০০ জন হতভাগ্যকে , বেঁচে যাওয়া অসংখ্য দুরন্ত শৈশব বাকিটা জীবন সম্ভবত এক দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে, আকাশ ছোঁয়া দালান , সুসজ্জিত স্থাপনা আর পুরাকীর্তির শহর ফিলিস্তিন আজ এক মৃতপ্রায় ভুতুড়ে নগরী ।

এই যে  ক্ষতি , তা সন্দেহাতীতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতি । নেতানিয়াহু নামের এক বিকট দানবের ব্যক্তিগত আক্রোশ আর অপরিণামদর্শী যুদ্ধ কৌশলের খেস ারত দিতে হল ফোরাত নদীর তীরবর্তী নিরীহ প্রাণগুলোর। বিশ্ব মানচিত্র হতে ফিলিস্তিন নামক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি ( গাজা প্রায়২১ লক্ষ লোকের আবাস) মাত্র মাসখানিক আগে ও নিরবে মুছে যাচ্ছিল ধনী রাষ্ট্রের তাবেদার মুসলিম বিশ্বের অলস শাসনকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরণের কারণে । মুসলমান ভাই -ভাই, জুলুমবাজের নিস্তার নাই, বিপন্ন মানবতা বহুল চর্চিত প্রবাদগুলো নিতান্তই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির মুখস্থ বুলির মত আউড়ে চলছিল বিশ্বরাজনীতির মোড়লরা । তবে কি, আমজনতার পরম আরাধ্য পার্থিব জীবনের ও সমাপ্তি আছে, আর সেই সমাপ্তি বরাবরই ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছেয়, অসহায়ের পূর্ণ সমর্থনে আর দিনশেষে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ে ।

গৃহকোণের শান্তি গৃহকর্ত্রীর পরম প্রিয়, আর সেই শান্তির সুশীতল পরশ এ ভূগোলকের পরতে পরতে ছঁড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগী মানুষগুলো অনন্য সাধারণ কাজগুলোকে বাস্তবতার আলো দেখান সে মানুষগুলোই কর্মকুশলতায় অর্জন করে নেন সর্ব্বোচ সম্মান -নোবেল । এ নোবেল প্রাপ্তি, কার ও দারিদ্র্য বিমোচনে, চলতি ‘২৫ সালে বিতর্কিত মারিয়া কোরিয়া মাচানো -যার রাষ্ট্রীয় নীতি বহু অসহায় মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে, প্রাক্তন  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক সহ শান্তিতে নোবেল পাওয়া আলোচিত মানুষগুলো পুরষ্কারের কোঠা না মানদন্ড না তাদের কাজের বিষয় এ সূক্ষèাতিসূক্ষè বিষয়গুলো

রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, আর স্বেচ্ছাচারী কর্তা যখন নিজ খেয়াল-খুশি মত আইন -কানুন তৈরি করে অসহায়দের উপর তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন তখন তা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা জায়ানবাদীদের  আধিপত্য আর কতৃর্ত্ববাদের নির্মমতার করুণ পুনরাবৃত্তি বই আর কিছুই নয় । আর ও নির্মম কৌতুক, একদা জায়ানবধের রাজ্য বলে খ্যাত , হিটলারের জার্মান, মাঁখোর  ফ্রান্স , কূটনৈতিক ব্রিটেন সহ দু‘মুখো আরব বিশ্ব সকলে এ নির্মম রসিকতায় সামিল ! দুনিয়া যে ক্ষমতা আর অর্থের পূজারী - পড়ন্ত বেলার প্রাজ্ঞ প্রবীণদের গভীর হতাশার সুরে তা সুস্পষ্ট ।

রুপকথার গল্পের চেয়ে ও বাস্তব জীবনের গল্প অনেকসময় অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠে , হয়ে উঠে প্রকৃত রুপক নতুবা তার চেয়ে ও শক্তিশালী আখ্যান । বিশ টি বছর ধরে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতায় অবরুদ্ধ হামাস , ঠিক জিতে গেল সাহস আর দেশের প্রতি ভালবাসাকে হৃদয়ে লালন করে।

আর, সেই ছোট্ট গেরিলা সদস্যের দলটি আজ কত বড়! মানচিত্র ছাঁড়িয়ে , সীমানা ছাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের অকুতোভয় হামাসরা আজ দুয়ারে দাঁড়ানো দৃঢ় দ্বাররক্ষী । তারাই পারে ,তথাকথিত অজেয় পশ্চিমা শক্তিকে শান্তিচুক্তি নামক সে নাটকীয় ঘটনার অন্যতম যোগানদার করতে। মার্কিন সরকার প্রধান উপযাচক মাত্র-পরিস্থিতি বুঝেই হয়তবা বন্ধুর পথে হাঁটতে চাইছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বর্মটি যে ভিষণ শক্তপোক্ত ও একরোখা ।

তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ছঁড়ি ঘুরানোর দীর্ঘদিনের শক্তলাঠিটি কে যে এবার বাঁকাতেই হয় ।  সাপ ও মরবে লাঠি ও ভাঙবে না, হায় বেনিয়ামিন  কি অসম্মানের এক পরাজয় ! কি অপেক্ষা করছে দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত বুড়ো নেকড়েটির কপালে -বিধ্বস্ত চেহারায় কপালের কুঞ্চিত রেখাগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে বৈকি।

প্রতিরোধ, যুদ্ধের নামে আগ্রাসন আর বসতি স্থানান্তরের নামে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক শরণার্থী , আনুষ্ঠানিক চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় হয়তবা এখন পর্যন্ত বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত । তবে নারীর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ট্রাম্প তার প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিদন্বী বারাকের উপর সম্ভবত সচেতনভাবেই তার রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকালে বিতর্কিত সন্ত্রাসী বনাম ইসলামিক সেনাবাহিনী মতানৈক্যের বিষয়টির উপর  ইঙ্গিত দিয়েছেন । আর , ব্রিটিশ সংসদে চিত্রিত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করে পুরনো বন্ধু ব্লেয়ারের পদাংক অনুসরিত কিনা, তাই আপনমনে যাচাই-বাছাই করে চলেছেন। 

পরিস্থিতির পরিবর্তিত মোড় , কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন লিখিত শান্তি  চুক্তির যে ভিন্ন ভিন্ন ২০টি শর্ত শোভা পাচ্ছে  তার সুচারু বাস্তবায়ন খোদ ট্রাম্পের পক্ষেই যথেষ্ট দুরুহ । পেন্ডুলামের কাঁটা চলমান, হঠকারী ছোটভাই একবার নয় বেশ ক‘বার বড় ভাইয়ের অবাধ্য হয়েছেন , আস্ত উড়োজাহাজ উপহার আর বন্ধুপ্রতীম কাতারের উপর অর্তকিত আক্রমণ । রক্তে যার খুনে নেশা সে পাগলা ঘোড়া কি আদৌ থামবে ? বিলুপ্ত হিজবুল্লা, হুতির হারিয়ে যাওয়া হামাসের নেতৃত্বের শক্তি ক্ষয় , সিরিয়ায় ভাঙ্গন, ইরানের সফল প্রতিরক্ষার ব্যুহ ভেদ- আপাত , দ্বিধাগ্রস্থ ইসরাইল প্রধান সফলতার মাপকাঠিতে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন হয়তবা ।  তবে,গাজামুখি সারি সারি ত্রাণবাহী গাড়ির বহরের দী¦প্ত যাত্রা কি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় নি, নিশ্চিতভাবেই উত্তরটি হ্যা ।

কাঁকচক্ষু দৃষ্টিতে , দৃঢ়তা আর ন্যায়ের বিজয় তবে, অসম এ যুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের চড়া মূল্য দিতে হল  হামাসকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়  হামাস , নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নাগরিক , প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। এই যে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সেই জীবননাশের মূল্য দিতে হল চরমভাবে-গত দু‘বছরে ৬৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত । শক্তিশালী শত্রুর সাথে টক্কর লাগানো  কি এত সোজা!  লোকবল আর সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে পিঁছিয়ে, তবে কিনা নীতি আর ঈমানের শক্তিতে বরাবরি বলীয়ান হামাসিয়ানরা । তাই , এ ক্রান্তিকালে ও ধাপে ধাপে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল তারা, সর্বশেষ গাজায় ৪৮ জন বন্দী ছিলেন , বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ২০ জন। আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দু‘ধাপে জীবিত জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস গত ১৩ই অক্টোবর । মৃতদের মাঝে চার জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ও জানিয়েছে তারা।অপরদিকে, প্রতিপক্ষ ইসরাইলের আচরণ রুঢ়তার সীমা আকাশ  ছুঁয়েছে  বহু আগেই-কারাগারে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা এবং নিপীড়ন করা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যৌন হয়রানির খবর ও পাওয়া গেছে । আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আল-রিমায়ি বলেন- এ দু‘টি বছরে তার ওজন কমেছে ৫০ কেজি ! হাড় সর্বস্ব শরীর জড়িয়ে কন্যার ব্যাকুল আর্তি, বাবা আমি ব্যাথা পাই ।

এখন আবার ট্রাম্পের নতুন চমক, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র উপহার দিবেন এই পাগলাটে রাষ্ট্রপতি রাশান যুদ্ধ থামাতে ।  শুরু হওয়া আফগান -পাকিস্তান সংঘাতে ও তালেবান দের ভূমিকা নিয়ে এক নতুন চেহারার ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে -জামাতা কুশনারের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জুড়ি নেই রাজনৈতিক বুদ্ধিতে ও যে  শ্বশুরকে ভবিষ্যতে টেক্কা দিতে সমর্থ  হবেন  তা তার সাম্প্রতিক স্রোত বুঝে চলার ই পরিপক্ক রুপ ।

আজকের এই পার্থিব পৃথিবীতে  স্রোতস্বিনী টেমস নদী ব্যবহারের মাসকাবারি বিল পরিশোধের সময় ও যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি মগজে নিত্য গেঁথে থাকে -প্রতিটি পানিবিন্দু পরিশোধে পাওনা প্রাপ্য ! অর্থাৎ, জীবনের অপর নাম পানি ও বাতাস সেবনে ও মূল্য চুকাতে হয়, তা যদি হয় কেনসিংটন নামক অভিজাত এলাকার মনোরম ব্যালকনির মুক্ত হাওয়া । বিনামূল্যে    সেবা, সে তো অতীতের গাল গল্প । অথচ, নিঠুর ইসরাইলী বাহিনী    গাজায় ৩০০০ জলপাই গাছ  কেটে , অগণিত বন্য ও পোষা  প্রাণী মেরে আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে  তুলতে চাইছিল  । সেই প্রকৃতিই কিনা আপন মহিমায়  নতুন বোনা জলপাই গাছের পাশ দিয়ে ছুটন্ত শিশুদের  সাদরে বরণ করছে যাদের খাঁচা ভর্তি প্রিয় পোষা  পাখিটির  গুঞ্জন।   

ফিলিস্তিন বাসীদের প্রিয় ম্যান্ডেলা ‘ আল ফাত্তাহ ‘ এখন ও জায়ানবাদীদের জিম্মায় ,  ইসরাইলী সেনাবাহিনী তাকে যমের মত ভয় পায় -যার মুক্তির আলো দেখা এখন ও সংশয়ে ভরা । সন্দেহাতীতভাবেই, তিনিই প্যালেস্টাইনি জনগণের অবিস্বরণীয় মুক্তি সংগ্রামের পরবর্তী আন্দোলনের দিকপাল ।

আজকের দিনের ফ্রি পত্রিকাগুলোর অন্যতম স্লোগান-মুক্ত খবর, মুক্ত চিন্তা । আর বিশ্বজুঁড়ে এই প্রবল বিজয় উদযাপনে মানবতাবাদীদের একটাই আশা মুক্ত হোক মানবতা , জয় হোক শুভ বুদ্ধির।



নুজহাত নূর সাদিয়া,
এলবিপিসি, লন্ডন ১৪ই অক্টোবর‘ ২৫ সাল ।

মতামত এর আরও খবর