img

স্বাধীনতা দিবস - ইতিহাস সংরক্ষন প্রসঙ্গে!

প্রকাশিত :  ১২:২১, ২৮ মার্চ ২০২২

স্বাধীনতা দিবস - ইতিহাস সংরক্ষন প্রসঙ্গে!

আবার এসে গেছে আমাদের স্বাধীনতার জন্মবার্ষিকী - ৫১তে বাংলাদেশ। জাতির জীবনের অন্যতম একটি মহান দিবস। বাঙ্গালী জাতীয়তা উজ্জীবনের সেই মহান ক্রান্তিকাল। অনেক বন্ধুর পথ পরিক্রমণ করে জাতি উপস্থিত হয়েছিল সেই ২৬ সে মার্চ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার এক উদ্দ্যম প্রতয় নিয়ে। পৃথিবীর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দেশকে আমাদের মত সংগ্রাম - যুদ্ধ - চরম ত্যাগ এর মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করতে হইয়েছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই ক্রান্তিকাল ছিল সব ধরনের সময় থেকে কঠিনতম; শতকরা ৫২ শতাংশ জনবল নিয়েও ইস্ট পাকিস্তান পরিগণিত ঐ বর্বর পাকিস্তানী শাসকদের কাছে নিছক একটা সংখ্যালঘু অঞ্চলে।  প্রথমে কেড়ে নিতে চেয়েছিল আমাদের মায়ের ভাষা - বাংলাকে, তারপর শুরু করল অর্থনৈতিক উপনিবেসকিতা - বর্ণবাদ - নিগৃহতা - শোষণ এবং বৈষম্য। কেড়ে নিতে শুরু করল এক এক করে সকল গনতান্ত্রিক অধিকার - ভোটের রেজাল্ট এর প্রতি অনিহা এবং সরকার গঠন না করতে দেয়ার টালবাহানার অন্তরালে এক জেনোসাইডের নীল নকশা প্রণয়ন। 

জাতির সেই উত্তাল সময়ে জেগে উঠতে শুরু করে এক নব্য বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধ - বাংলার শতাব্দী পুরোনো ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি অনুযায়ীই শত্রুর আগ্রাসন মোকাবেলায় যখন এগিয়ে যেতে চাইল তখন একটি অতি উৎসাহী ধর্মীয় রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় গ্রুপ, ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত একটি শ্রেণী সবার দৃষ্টির অগোচরে গোপনে হাত মিলায় ঐ বর্বর পাকিস্তানী পাঞ্জাবীদের সাথে - নিজ জাতির ইচ্ছা - আকাক্সক্ষা, শপথের এবং স্বাধিকার আদায়ের বিরুদ্ধে।

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে জাতির সেই দুঃসময়ে এই সম্প্রদায়ের বিশ্বাসঘাতকতা ছিল এক বিশাল অনভিপ্রেত ষড়যন্ত্র। অত্যন্ত অনুতাপের সাথে আজকের একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ওদের সেই বিশ্বাসঘাতকতার রেশ জাতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। 

বাংলাদেশ আজ অর্ধশতাব্দী যাবত স্থাপিত - স্বাধীনতা অর্জনের বেদীতে বলিদান করতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষদেরকে, যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ মা বোনদেরকে, নয় মাসব্যাপী আগ্রাসন এবং অত্যাচারে জাতির এবং দেশের  অবোকাঠামো, অর্থনীতি সব কিছুই ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছিল সেই বর্বর পশু পাকিস্থানী পাঞ্জাবী বাহিনী এবং ওদের আমাদের দেশের দালাল এবং দোশররা । 

সেই উত্তাল সময় অতিক্রম  করে আজ ৫১টি বছরে বাঙ্গালী জাতি পদার্পণ করেছে। গর্বে এবং প্রত্যয়ে জাতি আজ এক নতুন উন্নয়নের সোপানে চড়ে হিমালয় চূড়ার দিকে আগাচ্ছে সদর্পে। কিন্তু কেন জানি বারবার হোচট খেতে হচ্ছে জাতিকে ঐ   পুরানো হেরে যাওয়া শত্রুদের ষড়যন্ত্রে। নব্য নব্য ইজম এবং নতুন নতুন দাবার চাল চালিয়ে কেমন জানি মতিভ্রস্ট করে ফেলছে যুবসমাজ, অর্ধ বয়সী যুবক যুবতীদের সহ বালক বালিকাদের। মস্তিষ্ক হনন এর মত এক ষড়যন্ত্রের মাতমে মেতে উঠেছে ঐ গোষ্ঠী অবারিত ভাবে - উঠেপড়ে লেগেছে জাতির আগামী প্রজন্মের সন্তানদেরকে ইতিহাস বিচ্ছিন্ন করতে, দেশজ ইতিহাস এর প্রতি উন্নাসিকতা সৃষ্টি করার জন্য, স্বাধীনতার সেই অমানবিক অত্যাচারের ইতিহাসকে মিথ্যা বড় গলায় আওয়াজ করে করে প্রমানিত করতে চাচ্ছে সত্যকে মিথ্যা হিসাবে, ইনিয়ে বিনিয়ে, গানে গানে, সলোক, পুথি, গান এবং কৌতুক এর মাধ্যমে পানি ঢেলে সেই গর্বের ইতিহাস কে তরলায়ন করা হচ্ছে প্রত্যহ। অবজ্ঞায় রূপান্তারিত করা হচ্ছে জাতির সূর্য সন্তানদের আত্মত্যাগকে, যুবকদেরকে, তরুণদের শিখানো হচ্ছে ভিন দেশী বিতর্কিত ব্যক্তি, জেনোসাইড সংঘটনকারীদের বীর হিসাবে ঝান্ডা বহনকারী বিশাল মানব হিসাবে। গন আয়োজিত বিশাল সব মন্ডপে রাত দিন চলছে বাঙ্গালী জাতির প্রজ্ঞা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে এবং বহু জাতি এবং বহু ধর্ম, বহু বর্ণ নিয়ে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান আকাঙ্খাকে সমূলে উৎপাটনের অপচেষ্ঠা। কিশোর, কিশোরী, যুবক, যুবতী, পুরুষ এবং মহিলারা অধিকাংশই আজ কেমন জানি বিচ্ছিন্ন বাংগালীত্ব এবং বাংলা কৃষ্টির  প্রতি ক্রমশ। এই জাতির চার হাজার বছরের সবচে বিশাল মাইলফলক আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ঐ স্বাধীনতা যুদ্ধের ত্যাগ এর গৌরব এর প্রতি নিয়ে এসেছে এক উন্নাসিকতা এবং সন্দেহ। আদৌ কি এসব সত্যি?  

অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে ঐ কোমলমতি মস্তিকে ভিন্ন ধরনের সন্দেহ এবং বিশ্বাসযোগ্যতা। আর যার জন্য দেশে এবং বিদেশের অভিবাসী কিশোর, কিশোরী, যুবক, যুবতী, পুরুষ এবং মহিলারা বিভ্রান্ত নিজেদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস, শৌর্য-বীর্য, ত্যাগ এবং মহিমার ব্যাপারে। জাতির গর্বে যারা গর্বিত নয় যারা দেশের জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্খার সাথে সম্পৃক্ত নয় - তারা কতটুকু দেশপ্রেমিক এবং মুখের বুলি কতটুকু বিস্বাসযোগ্য তা একটা ভাবারও বিষয়, যারা তাদের জাতির মা ও বোনদের ইজ্জৎ, সম্ভ্রম এর প্রতি উন্নাসিক এবং স্বীকার করতে উৎসুক নয় তাদের দেওয়া বক্তব্য কতটা সচ্ছল এবং সত্য এই ব্যাপারে যুবক, কিশোর, বয়স্কদের ভেবে দেখা উচিত । 

একটা প্রবাদবাক্য আছে উন্নত বিশ্বে, যে ব্যক্তি জানেনা সে কোথা থেকে এসেছে, সে কিভাবে জানবে তার জীবনে তাকে কোথায় পৌঁছুতে হবে! এটা অত্যন্ত অনভিপ্রেত হবে যদি বাঙ্গালী জাতির আগামী প্রজন্মের অব্যস্থা এক রকম হয়। ১৯৭১ আমাদের জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মাইল ফলক। ১৯৭১ সাল আমাদের জাতি গোষ্ঠী এনে দিয়েছে এক নতুন পরিচয়। বাঙ্গালীরা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী - বাংলা ভাষা পৃথিবীর পঞ্চম ভাষা। কিন্তু, এত কিছু থেকেও আমরা জানিনা কেন  বারবার হোছট খাচ্ছি বিভিন্ন ভাবে - আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে তেমন কোন প্রকাশনা নেয় - একাডেমিক দিক থেকে; নেই তেমন থিসিস পেপার, নেই তেমন কোন অনুসন্ধান কেন্দ্রিক পেমপ্লেট  বা এছে (রচনা) । নেই তেমন কোন বই যাতে আছে উদ্ধৎিেতর সূত্র এবং বীব্লিওগ্রাফই। যেটা পড়লে নতুন প্রজন্মের পাঠক হয়ে  ঊঠবে গবেষক এবং ঐ সব সূত্র ধড়ে ধরে বেড় করতে পারবে আরও অনেক না  জানা তথ্য - উপাত্ত এবং নিজেরাও উদ্ভূত হবে স্বাধীনতা নিয়ে লেখতে - ঐ ভাবেই আগামীতে যুগে যুগে শতাব্দী পর শতাব্দী যাবত বাঙালী জাতীর প্রজন্মরা পৃথিবীর সব আনাচে কানাচে অবস্থিত বাঙ্গালী ডিয়াস্পরা এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী আগামী জেনারেশন এর পর জেনারেশনগুলোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দিতে পারবে। সেই সাথে আগমনী জেনারেশন তাদের পূর্বপুরুষদেরকে নিয়ে গর্ববোধ করবে। সেইদিনই  হয়ত আমাদের প্রজন্ম স্বাধীনতা দিবসকে উদযাপন করবে গর্ব নিয়ে। ঐ আগামী প্রজন্মের গর্বপ্রসূত সংরক্ষিত ইতিহাসভিত্তিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালনের প্রত্যাশায় অপেক্ষায় থাকবে জাতি এটাই প্রত্যাশা ।

ইমরান চৌধুরী: লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক


মতামত এর আরও খবর

img

উন্মুক্ত বিবেক, মুক্ত ফিলিস্তিন!!

প্রকাশিত :  ০৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নুজহাত নূর সাদিয়া

আহা ! বুকের পাঁজর ভাঙা গগনবিদারী আর্তনাদ , নাহ-কোন নিরব জঠর যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের নবজাতক জন্ম দেওয়ার অবিস্মরণীয় ক্ষণটি উদযাপনের আনন্দচ্ছোস নয়, এ যে সহস্র দিনের গ্লানি শেষে এক নিকষ কালো আঁধার পেরিয়ে মাতৃভূমির বুকে নির্ভীক পা রাখা । আবার সেই চিরপরিচিত সবুজ দুর্বা ঘাসে ছুঁটে বেড়ানো , বাড়ন্ত স্কোয়াশের পূর্ণ ঝুঁড়ি, মাংসের রসাল স্যুপ, হাতে বানানো গমের রুটি সহযোগে উদর পূর্তির সেই পারিবারিক সুখস্মৃতি , মায়ায় জড়ানো বছর পার করে দেওয়া সংগ্রামী পরিবারগুলো ফিরে কি পাবে তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ফিলিস্তিন । বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর অজানা আশংকা আর অনিশ্চয়তার অদৃশ্য গেরোতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলে ও বিপরীত শিবিরে ও বহু দিনের ঘরবন্দী প্রিয়মুখগুলো স্বজনদের বাহুডোরে ফেরার অপেক্ষায় । আগ্রাসী ইসরায়েলের ধূলো উড়ানো পথ ও যে আজ শান্তিকামী মানুষের স্বতস্ফূর্ত হাসিতে ভরপুর। 

আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুযায়ী, মোট হতাহতের সংখ্যা  ৬৬,০০০ হাজার ছাঁড়িয়ে গেছে, জীবন-ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ২,৫০,০০০ জন হতভাগ্যকে , বেঁচে যাওয়া অসংখ্য দুরন্ত শৈশব বাকিটা জীবন সম্ভবত এক দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে, আকাশ ছোঁয়া দালান , সুসজ্জিত স্থাপনা আর পুরাকীর্তির শহর ফিলিস্তিন আজ এক মৃতপ্রায় ভুতুড়ে নগরী ।

এই যে  ক্ষতি , তা সন্দেহাতীতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতি । নেতানিয়াহু নামের এক বিকট দানবের ব্যক্তিগত আক্রোশ আর অপরিণামদর্শী যুদ্ধ কৌশলের খেস ারত দিতে হল ফোরাত নদীর তীরবর্তী নিরীহ প্রাণগুলোর। বিশ্ব মানচিত্র হতে ফিলিস্তিন নামক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি ( গাজা প্রায়২১ লক্ষ লোকের আবাস) মাত্র মাসখানিক আগে ও নিরবে মুছে যাচ্ছিল ধনী রাষ্ট্রের তাবেদার মুসলিম বিশ্বের অলস শাসনকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরণের কারণে । মুসলমান ভাই -ভাই, জুলুমবাজের নিস্তার নাই, বিপন্ন মানবতা বহুল চর্চিত প্রবাদগুলো নিতান্তই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির মুখস্থ বুলির মত আউড়ে চলছিল বিশ্বরাজনীতির মোড়লরা । তবে কি, আমজনতার পরম আরাধ্য পার্থিব জীবনের ও সমাপ্তি আছে, আর সেই সমাপ্তি বরাবরই ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছেয়, অসহায়ের পূর্ণ সমর্থনে আর দিনশেষে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ে ।

গৃহকোণের শান্তি গৃহকর্ত্রীর পরম প্রিয়, আর সেই শান্তির সুশীতল পরশ এ ভূগোলকের পরতে পরতে ছঁড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগী মানুষগুলো অনন্য সাধারণ কাজগুলোকে বাস্তবতার আলো দেখান সে মানুষগুলোই কর্মকুশলতায় অর্জন করে নেন সর্ব্বোচ সম্মান -নোবেল । এ নোবেল প্রাপ্তি, কার ও দারিদ্র্য বিমোচনে, চলতি ‘২৫ সালে বিতর্কিত মারিয়া কোরিয়া মাচানো -যার রাষ্ট্রীয় নীতি বহু অসহায় মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে, প্রাক্তন  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক সহ শান্তিতে নোবেল পাওয়া আলোচিত মানুষগুলো পুরষ্কারের কোঠা না মানদন্ড না তাদের কাজের বিষয় এ সূক্ষèাতিসূক্ষè বিষয়গুলো

রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, আর স্বেচ্ছাচারী কর্তা যখন নিজ খেয়াল-খুশি মত আইন -কানুন তৈরি করে অসহায়দের উপর তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন তখন তা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা জায়ানবাদীদের  আধিপত্য আর কতৃর্ত্ববাদের নির্মমতার করুণ পুনরাবৃত্তি বই আর কিছুই নয় । আর ও নির্মম কৌতুক, একদা জায়ানবধের রাজ্য বলে খ্যাত , হিটলারের জার্মান, মাঁখোর  ফ্রান্স , কূটনৈতিক ব্রিটেন সহ দু‘মুখো আরব বিশ্ব সকলে এ নির্মম রসিকতায় সামিল ! দুনিয়া যে ক্ষমতা আর অর্থের পূজারী - পড়ন্ত বেলার প্রাজ্ঞ প্রবীণদের গভীর হতাশার সুরে তা সুস্পষ্ট ।

রুপকথার গল্পের চেয়ে ও বাস্তব জীবনের গল্প অনেকসময় অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠে , হয়ে উঠে প্রকৃত রুপক নতুবা তার চেয়ে ও শক্তিশালী আখ্যান । বিশ টি বছর ধরে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতায় অবরুদ্ধ হামাস , ঠিক জিতে গেল সাহস আর দেশের প্রতি ভালবাসাকে হৃদয়ে লালন করে।

আর, সেই ছোট্ট গেরিলা সদস্যের দলটি আজ কত বড়! মানচিত্র ছাঁড়িয়ে , সীমানা ছাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের অকুতোভয় হামাসরা আজ দুয়ারে দাঁড়ানো দৃঢ় দ্বাররক্ষী । তারাই পারে ,তথাকথিত অজেয় পশ্চিমা শক্তিকে শান্তিচুক্তি নামক সে নাটকীয় ঘটনার অন্যতম যোগানদার করতে। মার্কিন সরকার প্রধান উপযাচক মাত্র-পরিস্থিতি বুঝেই হয়তবা বন্ধুর পথে হাঁটতে চাইছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বর্মটি যে ভিষণ শক্তপোক্ত ও একরোখা ।

তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ছঁড়ি ঘুরানোর দীর্ঘদিনের শক্তলাঠিটি কে যে এবার বাঁকাতেই হয় ।  সাপ ও মরবে লাঠি ও ভাঙবে না, হায় বেনিয়ামিন  কি অসম্মানের এক পরাজয় ! কি অপেক্ষা করছে দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত বুড়ো নেকড়েটির কপালে -বিধ্বস্ত চেহারায় কপালের কুঞ্চিত রেখাগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে বৈকি।

প্রতিরোধ, যুদ্ধের নামে আগ্রাসন আর বসতি স্থানান্তরের নামে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক শরণার্থী , আনুষ্ঠানিক চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় হয়তবা এখন পর্যন্ত বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত । তবে নারীর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ট্রাম্প তার প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিদন্বী বারাকের উপর সম্ভবত সচেতনভাবেই তার রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকালে বিতর্কিত সন্ত্রাসী বনাম ইসলামিক সেনাবাহিনী মতানৈক্যের বিষয়টির উপর  ইঙ্গিত দিয়েছেন । আর , ব্রিটিশ সংসদে চিত্রিত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করে পুরনো বন্ধু ব্লেয়ারের পদাংক অনুসরিত কিনা, তাই আপনমনে যাচাই-বাছাই করে চলেছেন। 

পরিস্থিতির পরিবর্তিত মোড় , কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন লিখিত শান্তি  চুক্তির যে ভিন্ন ভিন্ন ২০টি শর্ত শোভা পাচ্ছে  তার সুচারু বাস্তবায়ন খোদ ট্রাম্পের পক্ষেই যথেষ্ট দুরুহ । পেন্ডুলামের কাঁটা চলমান, হঠকারী ছোটভাই একবার নয় বেশ ক‘বার বড় ভাইয়ের অবাধ্য হয়েছেন , আস্ত উড়োজাহাজ উপহার আর বন্ধুপ্রতীম কাতারের উপর অর্তকিত আক্রমণ । রক্তে যার খুনে নেশা সে পাগলা ঘোড়া কি আদৌ থামবে ? বিলুপ্ত হিজবুল্লা, হুতির হারিয়ে যাওয়া হামাসের নেতৃত্বের শক্তি ক্ষয় , সিরিয়ায় ভাঙ্গন, ইরানের সফল প্রতিরক্ষার ব্যুহ ভেদ- আপাত , দ্বিধাগ্রস্থ ইসরাইল প্রধান সফলতার মাপকাঠিতে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন হয়তবা ।  তবে,গাজামুখি সারি সারি ত্রাণবাহী গাড়ির বহরের দী¦প্ত যাত্রা কি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় নি, নিশ্চিতভাবেই উত্তরটি হ্যা ।

কাঁকচক্ষু দৃষ্টিতে , দৃঢ়তা আর ন্যায়ের বিজয় তবে, অসম এ যুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের চড়া মূল্য দিতে হল  হামাসকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়  হামাস , নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নাগরিক , প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। এই যে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সেই জীবননাশের মূল্য দিতে হল চরমভাবে-গত দু‘বছরে ৬৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত । শক্তিশালী শত্রুর সাথে টক্কর লাগানো  কি এত সোজা!  লোকবল আর সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে পিঁছিয়ে, তবে কিনা নীতি আর ঈমানের শক্তিতে বরাবরি বলীয়ান হামাসিয়ানরা । তাই , এ ক্রান্তিকালে ও ধাপে ধাপে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল তারা, সর্বশেষ গাজায় ৪৮ জন বন্দী ছিলেন , বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ২০ জন। আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দু‘ধাপে জীবিত জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস গত ১৩ই অক্টোবর । মৃতদের মাঝে চার জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ও জানিয়েছে তারা।অপরদিকে, প্রতিপক্ষ ইসরাইলের আচরণ রুঢ়তার সীমা আকাশ  ছুঁয়েছে  বহু আগেই-কারাগারে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা এবং নিপীড়ন করা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যৌন হয়রানির খবর ও পাওয়া গেছে । আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আল-রিমায়ি বলেন- এ দু‘টি বছরে তার ওজন কমেছে ৫০ কেজি ! হাড় সর্বস্ব শরীর জড়িয়ে কন্যার ব্যাকুল আর্তি, বাবা আমি ব্যাথা পাই ।

এখন আবার ট্রাম্পের নতুন চমক, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র উপহার দিবেন এই পাগলাটে রাষ্ট্রপতি রাশান যুদ্ধ থামাতে ।  শুরু হওয়া আফগান -পাকিস্তান সংঘাতে ও তালেবান দের ভূমিকা নিয়ে এক নতুন চেহারার ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে -জামাতা কুশনারের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জুড়ি নেই রাজনৈতিক বুদ্ধিতে ও যে  শ্বশুরকে ভবিষ্যতে টেক্কা দিতে সমর্থ  হবেন  তা তার সাম্প্রতিক স্রোত বুঝে চলার ই পরিপক্ক রুপ ।

আজকের এই পার্থিব পৃথিবীতে  স্রোতস্বিনী টেমস নদী ব্যবহারের মাসকাবারি বিল পরিশোধের সময় ও যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি মগজে নিত্য গেঁথে থাকে -প্রতিটি পানিবিন্দু পরিশোধে পাওনা প্রাপ্য ! অর্থাৎ, জীবনের অপর নাম পানি ও বাতাস সেবনে ও মূল্য চুকাতে হয়, তা যদি হয় কেনসিংটন নামক অভিজাত এলাকার মনোরম ব্যালকনির মুক্ত হাওয়া । বিনামূল্যে    সেবা, সে তো অতীতের গাল গল্প । অথচ, নিঠুর ইসরাইলী বাহিনী    গাজায় ৩০০০ জলপাই গাছ  কেটে , অগণিত বন্য ও পোষা  প্রাণী মেরে আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে  তুলতে চাইছিল  । সেই প্রকৃতিই কিনা আপন মহিমায়  নতুন বোনা জলপাই গাছের পাশ দিয়ে ছুটন্ত শিশুদের  সাদরে বরণ করছে যাদের খাঁচা ভর্তি প্রিয় পোষা  পাখিটির  গুঞ্জন।   

ফিলিস্তিন বাসীদের প্রিয় ম্যান্ডেলা ‘ আল ফাত্তাহ ‘ এখন ও জায়ানবাদীদের জিম্মায় ,  ইসরাইলী সেনাবাহিনী তাকে যমের মত ভয় পায় -যার মুক্তির আলো দেখা এখন ও সংশয়ে ভরা । সন্দেহাতীতভাবেই, তিনিই প্যালেস্টাইনি জনগণের অবিস্বরণীয় মুক্তি সংগ্রামের পরবর্তী আন্দোলনের দিকপাল ।

আজকের দিনের ফ্রি পত্রিকাগুলোর অন্যতম স্লোগান-মুক্ত খবর, মুক্ত চিন্তা । আর বিশ্বজুঁড়ে এই প্রবল বিজয় উদযাপনে মানবতাবাদীদের একটাই আশা মুক্ত হোক মানবতা , জয় হোক শুভ বুদ্ধির।



নুজহাত নূর সাদিয়া,
এলবিপিসি, লন্ডন ১৪ই অক্টোবর‘ ২৫ সাল ।

মতামত এর আরও খবর