img

রোজায় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেমন হবে ডায়েট প্ল্যান

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ০৬ মার্চ ২০২৫

রোজায় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেমন হবে ডায়েট প্ল্যান

রমজান আত্মশুদ্ধির মাস।  তবে অনেকের ক্ষেত্রে এ রমজান মাসে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে । কেউ রোজার মাসে বেশি খেয়ে ফেলেন কেউবা আবার দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার কারণে শরীর দুর্বল করে ফেলেন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা বজায় রাখলে রমজানে সুস্থ থাকার পাশাপাশি ওজনও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।  

সেহেরিতে স্বাস্থ্যকর খাবার খান: সেহেরিতে ভাত, লাল আটার রুটি, ডিম, মাছ মুরগির মাংস এবং সবজি খাবার চেষ্টা করুন। এর সাথে দই খেতে পারেন।  এ খাবারগুলো ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করবে। এবং শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ নিশ্চিত করে এতে করে সারাদিন ক্ষুধা বোধ করবেন না। এবং প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন এতে শরীর হাইড্রেট থাকে। 

ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাবার খান: রোজা রেখে সারাদিন না খেয়ে আছেন বলে একসাথে খুব বেশি খাবার খাবেন ব্যাপারটা এরকম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজা রাখার সময় শরীরের মেটাবলিজম কমে যায় এবং শরীরের শক্তি আস্তে আস্থে কমে যায়। তাই ইফতার শুরু করুন একটি খেজুর দিয়ে। কেননা খেজুরে পর্যাপ্ত চিনি থাকে যা সারাদিন পর শরীরের শক্তি যোগাবে। পানিশূন্যতা রোধ করতে ডাবের পানি বা শরবত খেতে পারেন। এছাড়া, প্রোটিন নিশ্চিত করতে স্যুপ, গ্রিলড চিকেন, মাছ, মাংস , ডাল, ফল , শাক সবজি ও বেশি করে সালাদ খেতে পারেন।

ইফতারিতে এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার: ইফতারিতে অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার (পরোটা, পেঁয়াজু, বেগুনি, পাকোড়া, সমুচা ইত্যাদি ফাস্টফুড খাবার) এড়িয়ে চলুন। কারণ এ খাবারগুল শরীরের ওজন অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, সফট ড্রিংক, অতিরিক্ত চিনি দেওয়া শরবত বা অতিরিক্ত  মিষ্টি বা ডেসার্ট খাবার এড়িয়ে চলুন।

ইফতার শেষে অনেকেই পেট ভড়ে খেয়ে থাকেন যা ওজন বাড়িয়ে দেওয়ার আরেকটি কারণ। চা কফিও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন । খুব বেশি ইচ্ছে হলে গ্রিন টি খেতে পারেন।  

পরিমিত খাবার খান: রমজানে অনেকেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন যা ওজন বাড়িয়ে দেয়  তাই পরিমিত খাবার খান। ছোট প্লেটে খাবার নিন যাতে করে পরিমাণ কম হয় এবং ধীরে ধীরে খাবার খান। মাত্রাতিরিক্ত  খাওয়া ও বারবার খাওয়া ক্যালোরি বাড়িয়ে দেয়। তাই পরিমাণ মতো খাবার চেষ্টা করুন। 

 বেশি পানি পান করা: রমজানে ওজন নিয়ন্ত্রণের ভালো উপায় হল পানি পান করা । তবে একসাথেই বেশি পানি পান করা যাবে না। ইফতারের শুরুতেই এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। এরপর মাগরিবের নামাজের পর আরেক গ্লাস পানি খান। প্রতি ঘণ্টায় তারপর এক গ্লাস পানি খাবার চেষ্টা করুন। সাহরিতে দুই গ্লাস পানি খান। এই পানি পান আপনার পুরো শরীর ভালো রাখবে সেই সাথে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। রমজানে পানিশূন্যতা হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়। 

হালকা ব্যায়াম: রমজানে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে প্রতিদিন যে ব্যায়াম করতেন তা করবেন না । রোজায় হালকা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। ইফতারের আগে ২০ মিনিট হাঁটুন তবে খেয়াল রাখতে হবে হাঁটার গতি যেন খুব বেশি না হয়। তারাবির পরেও  একটু হাঁটতে পারেন। শরীর রিল্যাক্র রাখতে যোগব্যায়াম করতে পারেন। সেই সাথে ইয়োগো ও সহজ কার্ডিওগুলো করতে পারেন এই রমজান মাসে। অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম যা শরীরের জন্য ক্লান্তিকর হতে পারে এসব ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন। 

ঘুমের নিয়ম ঠিক রাখুন : বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়, যা ওজন বাড়িয়ে দেয়। রাতে ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং দুপুরে ৩০  মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিন। 

রমজানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি, হালকা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

 এই রমজানে সংযমের চর্চার পাশাপাশি সুস্থ জীবনধারার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে শরীর ভালো থাকে এবং ইবাদত করা সহজ হয়।


img

হার্ট অ্যাটাক কেন হয়, লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

প্রকাশিত :  ০৯:৫৩, ২৪ মার্চ ২০২৫

হার্ট অ্যাটাক একটি প্রাণঘাতী মেডিকেল ইমার্জেন্সি। দ্রুত এর চিকিৎসা না করালে মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে কিছু পূর্ব লক্ষণ আগেভাগে বুঝতে পারলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।  

হার্ট অ্যাটাকের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ 

১. বুকব্যথা  

গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের শিকার রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশের অনেক আগেই বুকব্যথার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। অনেকে সামান্য ব্যথাকে গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এটি হার্ট অ্যাটাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।  

২. বুকে ভারবোধ  

৪৪ শতাংশ রোগী হার্ট অ্যাটাকের আগে বুকে ভারী অনুভূতি বা চাপ অনুভব করেছিলেন। বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রম, সিঁড়ি ওঠা বা দ্রুত হাঁটার পর যদি বুকে চাপ অনুভূত হয়, তবে এটি সতর্ক সংকেত হতে পারে।  

৩. বুক ধড়ফড় করা  

৪২ শতাংশ রোগী বুক ধড়ফড় বা হার্টবিট অনিয়মিত হওয়ার মতো অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ হার্টবিট মিস হওয়ার কথাও বলেন। এটি হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।  

৪. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপিয়ে যাওয়া  

শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই যদি শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয় বা হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, তবে এটি হার্টের কার্যক্রম দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশ্রামের সময়ও এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  

৫. বুক জ্বালাপোড়া  

অনেকে বুক জ্বালাপোড়া অনুভব করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মনে করেন এবং গ্যাসের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। তবে যদি গ্যাসের ওষুধেও উপশম না হয়, তাহলে এটি হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।  

৬. দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ  

দীর্ঘদিন ধরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি থাকলে সেটি অবহেলা করা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি হার্টের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।  

অন্যান্য লক্ষণ  

বুক ব্যথা ছাড়াও হার্ট অ্যাটাকের সময় মাথা ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অনিদ্রা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, পা ফোলা বা ভারী লাগার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে এসব লক্ষণের উপস্থিতি পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।  

হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন  

১. আতঙ্কিত হবেন না  

হার্ট অ্যাটাক হলে বা উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিন। আতঙ্কিত হয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।  

২. দ্রুত চিকিৎসা নিন  

অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, তত বেশি বিপদ এড়ানো সম্ভব।  

৩. অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ান  

লম্বা শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এতে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়বে এবং হৃৎপিণ্ড কিছুটা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবে।  

৪. কাশির মাধ্যমে সাপোর্ট দিন  

হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে ঘন ঘন কাশি দিতে বলা হয়। প্রতিবার কাশি দেওয়ার আগে গভীর শ্বাস নিতে হবে। এতে হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিকভাবে রক্ত সঞ্চালনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।  

৫. অ্যাসপিরিন বা নাইট্রোগ্লিসারিন নিন  

যদি রোগীর আগে থেকে হার্টের সমস্যা থাকে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাসপিরিন বা নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকে, তবে তা দ্রুত গ্রহণ করুন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে ওষুধ নেওয়া ঠিক নয়।  

৬. রোগীকে শুইয়ে দিন  

রোগীকে সমতল স্থানে শুইয়ে দিন এবং যদি সম্ভব হয়, পা কিছুটা উঁচুতে রাখুন। এতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করবে।  

৭. আশেপাশের কাউকে জানিয়ে দ্রুত সাহায্য নিন  

হার্ট অ্যাটাক হলে নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা না করে আশপাশের কাউকে জানিয়ে দ্রুত সাহায্য নিন।  

হার্ট অ্যাটাক একটি ভয়াবহ সমস্যা, তবে আগেভাগে লক্ষণ চিনতে পারলে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিলে প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাবার গ্রহণ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।