img

আলোর খোঁজে সালমান —একটি হেরে গিয়েও উঠে দাঁড়ানোর গল্প

প্রকাশিত :  ০৫:৩২, ২০ মে ২০২৫

আলোর খোঁজে সালমান —একটি হেরে গিয়েও উঠে দাঁড়ানোর গল্প

রেজুয়ান আহম্মেদ

ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ১৫৬ নম্বর বাড়িটি বাইরে থেকে দেখতে খুবই সাধারণ। পুরোনো ধাঁচের, দেয়ালে সাদা রঙের ছোপ ছোপ মলিনতা। কেউ পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে হয়তো একবার তাকিয়েও দেখবে না। অথচ এই শান্ত, চুপচাপ দেয়ালের আড়ালেই প্রতিদিন এক যুদ্ধ চলে—এক তরুণের নিজের সঙ্গে লড়াই, নিজের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা।

তরুণটির নাম সালমান। বয়স তিরিশের কাছাকাছি। মুখে সাদামাটা চেহারা, চোখে চশমা, আর কপালে এমন এক চিন্তার ভাঁজ—যা দেখে বোঝা যায়, জীবনের হিসাব যেন কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না।

তার শুরুটা হয়েছিল স্বপ্ন দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অর্থনীতির ক্লাসে একদিন এক শিক্ষক বলেছিলেন, “তুমি একদিন নিজের কোম্পানি খুলবে, তোমার নামেই কেস স্টাডি পড়ানো হবে।” কথাটি তার মনে গেঁথে গিয়েছিল। ভাবত, একদিন ‘সালমান ইনোভেশনস লিমিটেড’ হবে দেশের সেরা কোম্পানিগুলোর একটি।

কিন্তু স্বপ্নের পথ যে এত কণ্টকময়, তা কে জানত?

বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বাবার অবসরভাতা আর নিজের সামান্য সঞ্চয় নিয়ে সালমান ঝাঁপিয়ে পড়ে শেয়ারবাজারে। শুরুতে সব ঠিকঠাক চলছিল—লাভ হচ্ছিল, আত্মবিশ্বাস বাড়ছিল। মনে হচ্ছিল, “আমি তো বুঝি বাংলাদেশের ওয়ারেন বাফেট!”

এরপর এল করোনা, অর্থনৈতিক টানাপড়েন, আর নিজের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত। একের পর এক শেয়ারের দাম পড়ে যেতে লাগল। লাভের জায়গায় দাঁড়াল লোকসান। ধীরে ধীরে বাবার শেষ সঞ্চয়টুকুও হারিয়ে গেল।

চারপাশের মানুষ ফিসফিস করে বলত, “বড় ভাব দেখাতো, এখন দেখো কী হাল!” কিছু বন্ধু তো সরাসরি মুখের ওপর বলেই ফেলল, “ভাই, এসব বড়লোকদের খেলা। তুমি না এলেই ভালো করতে।”

একসময় কাজ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সালমান। কোনো অফিসই নিতে চায় না। অনেকেই ভাবে, “একে নিলে অফিসটাই বুঝি বিপদে পড়বে।” ঘরের মানুষরাও মুখে কিছু না বললেও চোখে চোখে বলে দেয়, “তুমি ব্যর্থ।”

রাতগুলো তখন বিষাদের নামতা পড়ে। শোবার ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে সে ভাবে, “এই আমি, যার স্বপ্ন ছিল দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার, আজ আমি এক নিঃসঙ্গ ফ্যান গুণছি?”

তবুও, হেরে যাওয়ার মানুষ ছিল না সালমান। তার ভেতরে একটা ছোট্ট আগুন ছিল—যা একেবারে নিভে যায়নি।

এক রাতে, সব ঘুমিয়ে গেলে সে ছাদে উঠে যায়। হালকা শীতের হাওয়া, আকাশে ঝলমলে তারা। এমন মুহূর্তে মনে পড়ে এক সেমিনারের বক্তার কথা, “পতন মানেই শেষ নয়। সাহসী মানুষ আবার উঠে দাঁড়ায়।” সেই মুহূর্তে যেন আকাশের তারা চোখ টিপে তাকে বলে যায়, “তুই পারবি!”

সকালে উঠে সালমান শুরু করে নতুন করে। চায়ের কাপ হাতে পুরোনো নোটবুক খুলে বসে। ইউটিউব থেকে সব ‘লোভনীয়’ ভিডিও আনসাবস্ক্রাইব করে দেয়। শুরু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের রিপোর্ট, কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাব আর বিএসইসির গাইডলাইন পড়া। বলে, “এবার শিখে করব। আর কোনো বোকামো নয়।”

আস্তে আস্তে সে ঘুরে দাঁড়ায়। এখন আর ঝুঁকির পেছনে ছোটে না, বিনিয়োগ করে স্থির কোম্পানিতে। লাভ কম, কিন্তু নিরাপদ। আর সবচেয়ে বড় কথা—আবার নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরে পায়।

একদিন বন্ধুদের ডেকে বলে, “চলো, একটা ইনভেস্টমেন্ট ক্লাব খুলি। মানুষকে শেখাই—শেয়ারবাজার মানেই জুয়া নয়, এটা জ্ঞান আর ধৈর্যের জায়গা।”

বন্ধুরা প্রথমে হেসে খুন! “তুই নিজেই তো ডুবলি, এখন শেখাবি?”

সালমান শান্ত গলায় বলে, “আমি ডুবেছিলাম কারণ জানতাম না। এখন শিখেছি। এবার অন্যদের শেখাব, যাতে তারা না ডোবে।”

এইভাবেই গড়ে উঠল ‘উৎসাহ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাব’। ছোট ছোট কর্মশালা, কলেজে ক্লাস, ফেসবুক লাইভে আলোচনা—একটার পর একটা আয়োজনের মাধ্যমে মানুষকে বোঝাতে শুরু করল সালমান আর তার দল।

একদিন এক সেমিনারে এলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ড. হাফিজুর রহমান। সালমান তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “স্যার, আমাদের শেয়ারবাজার কি কখনো ঘুরে দাঁড়াবে?”

ড. হাফিজুর হেসে বললেন, “তুমি যা করছো, এটাই শুরু। বিনিয়োগকারীদের সঠিক জ্ঞান দিতে পারলে বাজার শুধু ঘুরে দাঁড়াবে না—নতুন অর্থনীতির ভিত গড়ে উঠবে।”

সালমানের মনে বজ্রপাতের মতো বাজল কথাটা। বুঝল, এটা শুধু তার একার জার্নি নয়, এটা পুরো প্রজন্মের পরিবর্তনের ডাক।

এক বছর না যেতেই ‘উৎসাহ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাব’ হয়ে উঠল দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফিন্যান্স প্ল্যাটফর্ম। পত্রিকায় ছাপা হলো সালমানের গল্প—“হার না মানা সৈনিক”, “ফাইন্যান্স নিনজা”! হাজারো তরুণ তার কর্মশালায় আসতে লাগল, যারা একসময় শেয়ারবাজার মানেই ভয় পেত, এখন সেখানে দেখে সম্ভাবনা।

আর সালমান?

সে এখনো রাত হলে ছাদে যায়। আকাশ দেখে। কিন্তু চোখে আর হতাশার ছায়া নেই। এবার তার চোখে আলো। হৃদয়ে শান্তি। কারণ সে জানে—আলো খোঁজে যারা, তারা হার মানে না।

আজকের সালমান কেবল একজন ব্যক্তি নয়—সে এক অনুপ্রেরণা।

তার গল্প যেন হাজারো তরুণকে বলে যায়, “তুমি হেরে যেতে পারো, কিন্তু উঠেও দাঁড়াতে পারো। সাহস আর জ্ঞান থাকলে অন্ধকার কেটে যায়।”

হ্যাঁ, এটা শুধু সালমানের গল্প নয়—এটা আমাদের সবার গল্প। কখনো না কখনো আমরা সবাই সালমান হই—ভাঙি, হারাই, আবার গড়ে উঠি।

ভোর আসেই

img

নজরুল-চিন্তা ও আগামীর বাংলাদেশ

প্রকাশিত :  ১৯:০৪, ০৪ জুলাই ২০২৫

জয়দ্বীপ রায়

আমি মাঝে মাঝে ভাবি—আজ যদি কবি নজরুল ইসলাম জীবিত থাকতেন, তবে তিনি কী করতেন? যদিও এই প্রশ্নটি স্থান, কাল ও পাত্রের সূচকগুলোকে বিবেচনায় না নিয়েই করা হচ্ছে, তারপরও কিছু আকাঙ্ক্ষা মনের গভীর থেকে উঠে আসে, যা প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু সত্য উপলব্ধির ফসল।

আমার মতে, এটি একটি যুক্তিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক মতও বটে যে নজরুল ইসলাম, একজন ধর্মপরায়ণ পরিবারের সন্তান হয়েও ধর্মের মূল উদ্দেশ্য—মানবকল্যাণ—উপলব্ধি করেছেন জ্ঞান, যুক্তি ও ঈশ্বর-চেতনার মাধ্যমে। তাইতো তিনি লিখেছেন:

“খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে,

প্রলয়-সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে, প্রভু নিরজনে...”

এই উপলব্ধি কোথা থেকে এসেছে? আমার ধারণা, ঈশ্বরের করুণা ব্যতিরেকে এমন চিন্তা সম্ভব নয়। তবে এটাও আমার বিশ্বাস—সারাক্ষণ ঈশ্বরচিন্তা করলেও তাঁর করুণা সবসময় নাও আসতে পারে। এখানে গ্রন্থগুলোতে ঈশ্বর যেখানে মানুষের মানবতাকে মূল্য দিয়েছেন, সেই ধর্মীয় উপলব্ধির গভীরতাই নজরুলকে অনন্য করে তোলে।

নজরুল এক অনন্য মাত্রায় ঈশ্বর ও মানবতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি সব ধর্মের প্রতি সম্মান রেখেছেন এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নিজের জীবনে ধারণ করেছেন। তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়, বরং অসীম ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিনীত নিবেদন ও আনুগত্য, যেখানে তিনি সকল ধর্মের ঈশ্বরের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে ইসলামি ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তিনি যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা একজন অমুসলিম পাঠকের মনেও ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম—যেমনটি দুই বাংলাতেই আমাদের বাঙালি মননে অনেকের মধ্যেই ঘটেছে।

নজরুলের এই সাহিত্য-শক্তির কারণেই তাঁর ধর্ম, নানান সংস্কৃতি ও বিশ্বময় বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করে। তিনি এতটাই বৈচিত্র্যে আকৃষ্ট সাহিত্যিক ছিলেন, যিনি সারা পৃথিবীর বৈচিত্র্যকে তাঁর সৃষ্টিতে ও জীবনবোধে এক বৈশ্বিক রূপ দিয়েছেন। যেখানে ছিল না কোনো গণ্ডি ও সংকীর্ণতা। একজন কবি এত দারিদ্র্য ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও কোনো অভিযোগ ছাড়াই কী রকম মুক্তমন নিয়ে নিজেকে বিকশিত করেছিলেন, আর বাঙালি মননকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় শুদ্ধ করেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে নজরুলের মতো করে শ্যামাসঙ্গীত, ভজন বা সনাতন ধর্মীয় গানে মৌলিক অবদান আর কেউ রাখেননি। এই বৈচিত্র্যই তাঁকে তুলনার ঊর্ধ্বে স্থাপন করে। সাহিত্যের প্রতিটি শাখা স্বতন্ত্র—এখানে কারও সাথে কারও তুলনা হয় না, কারণ এই ক্ষেত্রটি বিশাল, যার কোনো কোলকিনারা নেই। এখানে নানান সাহিত্য উপাদান বা কনটেন্ট উপস্থাপনাই গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প ও সাহিত্যের বিজ্ঞানের নিয়মের বিচারে একেক জনের সৃষ্টি একেক জনকে অনন্য সাধারণ হিসেবে স্থান করে দিয়েছে।

উপনিবেশিক রাজনীতির সংকীর্ণ প্রয়োজনে যখন হিন্দু-মুসলমান বিভাজন সমাজে প্রকট হয়ে উঠল—যা মুঘল আমলেও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় ছিলই না—তখন নজরুল হয়ে উঠলেন জাতির বিবেক। তিনি শুধু কবিই ছিলেন না, ছিলেন সাম্যবাদী চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী। বিপ্লবী রাজনীতিবিদদের সাংস্কৃতিক মানের প্রশ্নে তিনি তাদেরকে তাঁর সাহিত্যরস দিয়ে পরিচালিত করেছেন, শক্তি জুগিয়েছেন।

সম্প্রতি নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কিছু সমসাময়িক রাজনৈতিক নেতা তাঁকে স্মরণ করে বাণী দিয়েছেন। এটি প্রশংসনীয়। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম—সাম্য, বিদ্রোহ, শোষণবিরোধিতা ইত্যাদি—সব শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে, শুধু “অসাম্প্রদায়িকতা” শব্দটি নেই। কেন? এই শব্দ ব্যবহার করলে কি বেশিরভাগ সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন মানুষগুলোর বিশ্বাসে আঘাত আসতে পারে? এই বিশ্বাস কি তার ধর্মীয় চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক? না তার অজ্ঞানতা বা না বোঝার ফলে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে আজ সংক্রামিত হয়েছে? আমার মতে, এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কবি নজরুলকে বোঝা খুবই গুরুত্ব বহন করবে।

অসাম্প্রদায়িকতা কি সাম্যের অংশ নয়? অন্য ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সম্মান, নারীর সমমর্যাদা, ধর্মভিত্তিক বৈষম্য রোধ—এগুলো কি সাম্যের পরিপূরক নয়? তাহলে নজরুলের সাম্যের দর্শনে এই বিষয়গুলো কি অনুপস্থিত থাকবে, যারা এই শব্দগুলো ব্যবহার করছেন?

আমরা সবাই জানি, নজরুল ভারতের কবি হলেও বাংলাদেশ তাঁর শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকার পেয়েছে। এই পাওয়া আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া, কিন্তু ভারতের অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষদের ক্ষোভ আছে এই বিষয়ে। এই অমূল্য রত্নকে যদি শুধু রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করি—সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে কেবল দলীয় ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যাত করি—তাহলে আমরা আসলে কী শিখছি? ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকেও কি এমনটাই শেখাব?

এই প্রশ্নগুলোর সাথে ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জাতিসত্তাভিত্তিক বাংলাদেশের ভাগ্য জড়িত। তথাকথিত \"বহুত্ববাদ\"ও এই প্রশ্নগুলোর সাথেই সম্পর্কিত।

বহুত্ববাদ মানে শুধু কারও ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায় শুধরে দেওয়া নয়—বরং সকল মত, জাতি ও ধর্মের সহাবস্থান নিশ্চিত করা। নিজের বিশ্বাসকে অন্যের ওপর চাপিয়ে না দেওয়ার সহিষ্ণুতা। এই বহুত্ববাদই বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। এই ভূখণ্ডে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান—সবাই যুগে যুগে ধর্ম প্রচার করেছেন, আবার সহঅবস্থানেরও দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

সভ্যতা এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে, পেছনে ফিরে যাওয়াকে কখনো উৎসাহ দেয় না। তাই বাঙালির প্রকৃত পরিচয়—বৈচিত্র্য-বিশ্বাসী ও পরমত সহিষ্ণু জাতি—যদি জোর করে চেপে ধরা হয়, তবে প্রকৃতি একদিন এর প্রতিক্রিয়া দেবে—যা আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে না।

এটাই সামাজিক বাস্তবতা।

গণতন্ত্রে বিশ্বাস যদি সত্যিই কেউ করে, তাহলে তা কখনোই সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে অবজ্ঞা করে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুইজারল্যান্ড মাত্র কয়েক হাজার ইতালিয়ান ভাষাভাষীর জন্য রোমানশ ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। আমরা ইউরোপে থাকি, কিন্তু ইউরোপ থেকে কী শিখছি? দেশে কী ফিরিয়ে নিচ্ছি? নজরুলের কথা বলছি, কিন্তু তাঁকে বুঝে? না না বুঝে?

যুক্তরাজ্য থেকে আইনে ডিগ্রি নিয়ে ব্যারিস্টার হয়ে অনেকেই দেশে রাজনীতি করছেন বা করবেন, কিন্তু দেশে গিয়ে বিদেশের সোনা লোহা হয়ে যায় কেন? এটা সামাজিক বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণ করে অস্বীকার করা নয়, যুক্তির কষ্ঠিপাথরে থেকেও নিজের সাথে প্রতারণা করে অবিশ্বাস করা।

আগামী দিনে যারা রাজনীতি করবেন, তাদের নৈতিকতাবোধ কি বিবেচনায় আসবে না? যদি না আসে, তাহলে কি আমরা একই বৃত্তে ঘোরপাক খাবো? আগাবো না?

এই প্রশ্নগুলো আজকের বিশ্বায়িত রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির যুগে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


জয়দ্বীপ রায়: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংস্কৃতি কর্মী, লন্ডন।