img

ঈদ যখন কাঁদে অভাবের কাছে: উৎসবের আলো আর অন্ধকারের গল্প

প্রকাশিত :  ০৫:৩০, ০৮ জুন ২০২৫

ঈদ যখন কাঁদে অভাবের কাছে: উৎসবের আলো আর অন্ধকারের গল্প

ঈদের নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোট ছোট শিশুর হাসিমাখা মুখ, নতুন জামার রঙ, বাজারের কোলাহল, সুগন্ধে ভরা রান্নাঘর আর পরিবারজুড়ে ভালোবাসার উষ্ণতা। মনে হয়, এ যেন এক মিলনের উৎসব, ভালোবাসার উৎসব—মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর এক মহা-উপলক্ষ।

কিন্তু একটু ভাবুন—এই উৎসব কি সবার জন্য একই রকম আনন্দ বয়ে আনে?

ঈদের পেছনের সেই নিঃশব্দ কান্না

আমরা অনেকেই ঈদের আগে বাজারে যাই, জামাকাপড় কিনি, খাবারদাবারে ঘর সাজাই, ছবি তুলে পোস্ট দিই—সবই স্বাভাবিক আনন্দের অংশ। কিন্তু আমাদের আশপাশেই এমন অনেক পরিবার আছে, যারা ঈদের আগের রাতে জানে না, পরদিন সকালে তাদের শিশুটি আদৌ কিছু খেতে পাবে কি না।

তারা ফেসবুকে অন্যদের ছবিতে ঈদের রঙ দেখে, ছেলেমেয়েদের হাসিমুখ দেখে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঈদের আমেজটা গায়ে মাখার চেষ্টা করে—কিন্তু মনে মনে ভেঙে পড়ে।

একজন মা যখন সন্তানের নতুন জামার আবদার শুনে চুপ করে থাকেন, চোখের জল আড়াল করতে রান্নাঘরে চলে যান—তখন ঈদের আনন্দ তার কাছে হয়ে ওঠে এক অদৃশ্য বোঝা।

তিনি বলেন, “কাল পাবে বাবা, কাল পাবে”—এই ‘কাল’ যে কবে আসবে, তিনি নিজেও জানেন না। তবু সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করাটাই যেন তার ঈদের একমাত্র প্রস্তুতি।

রিকশাচালক বাবার সন্ধ্যা

রিকশা চালানো মানুষটি ঈদের দিনেও রাস্তায় থাকেন—কারণ এই দিনটিতে একটু বেশি উপার্জনের সম্ভাবনা থাকে। সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফেরেন ক্লান্ত শরীরে, পকেট ফাঁকা, মুখে নিঃশব্দ বিষণ্ণতা।

বাচ্চা জিজ্ঞাসা করে, “বাবা, আমার জামা কই?”

তিনি মাথা নিচু করে বলেন, “এইবার না, পরেরবার।”

এই কথাটি বলার সময় তার বুকের ভেতর যে ঝড় বয়ে যায়—তা কেউ দেখে না, কেউ বোঝেও না।

শিশুর চোখে ঈদের রংহীনতা

ঈদ তো শিশুদের আনন্দের দিন—এমনটাই শুনে বড় হয় তারা। কিন্তু যেসব শিশু নতুন জামা পায় না, খেলনা পায় না, পেট ভরে খেতে পায় না—তারা কেমন করে ঈদ উদযাপন করে?

তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঈদ দেখে। এক ধরনের ঈর্ষা, অপমান আর অক্ষমতা মিশে তৈরি হয় তাদের জীবনের প্রথম ঈদের শিক্ষা—“ঈদ সবার জন্য নয়।”

এই শিক্ষা একটি শিশুকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাদের হৃদয়ে জন্ম নেয় অভিমান, সমাজব্যবস্থার প্রতি রাগ, ঈদের প্রতি ঘৃণা।

ঈদের আসল পাঠ—কোথায় হারিয়ে গেল?

ঈদের মূল শিক্ষা ছিল সহমর্মিতা, সমতা ও ভালোবাসা। কিন্তু আজকাল এই শিক্ষা অনেক সময় ফেসবুক পোস্ট আর ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। যাকাত-সদকা অনেকটাই লোক দেখানো কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে।

আসলে, একটি দরিদ্র শিশুকে জামা কিনে দেওয়া কোনো দয়া নয়—এটা তার ন্যায্য প্রাপ্য। একজন রিকশাচালককে ঈদের দিনে এক প্যাকেট বিরিয়ানি দেওয়া সহানুভূতি নয়, বরং ন্যূনতম মানবিক দায়িত্ব পালন।

হাজার টাকায় ফিরতে পারে একটি ঈদ

আপনার ঈদের খরচ যদি পঞ্চাশ হাজার টাকা হয়, তার মধ্যে মাত্র এক হাজার টাকা ব্যয় করলেই একটি পরিবারের মুখে ঈদের হাসি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

একটা জামা, একজোড়া জুতো, এক প্লেট বিরিয়ানি—এগুলো কোনো বিলাসিতা নয়। সামান্য সদিচ্ছা থাকলেই এই ছোট ছোট উপহারগুলো বহু মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারে।

ঈদ সবার হোক—তবেই পূর্ণতা

আমরা চাই না সবাই সমাজবিপ্লবী হোক। শুধু চাই—আপনার পাশের দরিদ্র শিশুটির জন্য একটি জামা কিনে দিন। রাস্তার সেই বৃদ্ধ মায়ের হাতে এক প্যাকেট মিষ্টি তুলে দিন।

এই ছোট ছোট ভালোবাসার কাজগুলোই ঈদকে সত্যিকার অর্থে সবার করে তোলে।

রাষ্ট্র কি পারত না পাশে দাঁড়াতে?

একটি রাষ্ট্র চাইলে ঈদের দিনে কোনো পরিবার না খেয়ে থাকবে না—এটা নিশ্চিত করা কঠিন কিছু নয়। ঈদের সময় একটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি চালু করে দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া যেত—এটা হতে পারত এক নতুন দৃষ্টান্ত।

সরকারি খাদ্য সহায়তা, জামা বিতরণ, শিশুবান্ধব উপহার কার্যক্রম—এসব শুরু হলে ঈদ আর কারো জন্য অন্ধকার হয়ে থাকত না।

ঈদ হোক ভালোবাসার নাম

আমরা যতই বলি ঈদ মানে আনন্দ, ততদিন তা খালি বুলি হিসেবেই থাকবে—যতদিন না আমরা সেই আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতে শিখি।

এই ঈদে আসুন আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিই—একটি মুখে হাসি ফোটাব, একটি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে বলব: “তোমরা একা নও।”

এই ছোট ছোট ভালোবাসার স্পর্শগুলোই ঈদকে ঈদ বানায়। নামাজ শেষে কোলাকুলি করার আগে যদি একটু ভাবি—আমার চারপাশে কেউ কি আজও না খেয়ে আছে? কারো সন্তানের মুখ কি আজও শুকনো?

কারণ ঈদ শুধু নামাজের উৎসব নয়। ঈদ হলো হৃদয়ের উৎসব—যেখানে সকল শ্রেণি, সকল মানুষ একসাথে বলে, “আমরা একসাথে।”

ঈদ হোক সেই ভালোবাসার গল্প—যা শুরু হয় একজন মানুষের হাসি দিয়ে, আর ছড়িয়ে পড়ে হাজারো হৃদয়ে।

img

প্রথম সপ্তাহেই জমজমাট ইসলামী বইমেলা

প্রকাশিত :  ০৯:৪৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শুরুতেই জমে উঠেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা । সাধারণত প্রথম সপ্তাহে মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতার ভিড় তুলনামূলক কম থাকে, কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। শুরু থেকেই পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো, ফলে মেলায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ছুটির দিনে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল উপচেপড়া। কেউ বই দেখেছেন, কেউ কিনেছেন, আবার কেউ লিটলম্যাগ কর্নারে বসে আড্ডা দিয়েছেন তরুণ লেখক ও পাঠকদের সঙ্গে। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানও হয়েছে।

গার্ডিয়ান পাবলিকেশনসের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল হুদা জানান, এবারের মেলায় শুরু থেকেই পাঠকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মেলা শুরু হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে, এর মধ্যেই পাঠকদের আনাগোনা বেড়েছে। এবারের বইমেলা নিয়ে প্রচারণাও বেড়েছে। শুরু থেকেই মূলধারার গণমাধ্যমে মেলার খবর প্রকাশ হওয়ায় পাঠকের আগ্রহও বেড়েছে।’

এখন পর্যন্ত সীরাত ও শিশু বিষয়ক বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বেশি বলে জানান তিনি। শুক্রবার ছুটির দিনে বেচাবিক্রিও তুলনামূলক বেড়েছে।

সমকালীন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আরিফুল হক জানান, এবারের বইমেলা একেবারেই ভিন্ন। প্রথমবারের মতো বিদেশি প্রকাশনী অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্য দিনের তুলনায় আজ বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। সামনে বিদেশি প্রকাশনীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে ইনশাআল্লাহ।’

মেলায় ঘুরতে আসা তাশরীফ মাহমুদ নামে এক পাঠক বলেন, ‘এখনো ঘুরে ঘুরে বই দেখছি, আড্ডা দিচ্ছি। আজ বই কিনবো না, সামনের সপ্তাহ থেকে পছন্দের বই কেনা শুরু করবো।’

প্রতি বছরের মতো এবারও রবিউল আওয়াল মাস উপলক্ষে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এবারের মেলায় ১৯৯টি স্টল বসানো হয়েছে। এতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দেশের স্বনামধন্য ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও পুস্তক ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি মিশর, লেবানন ও পাকিস্তানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও অংশগ্রহণ করেছে।

এ ছাড়া মেলায় রয়েছে লেখক কর্নার, ফুড কর্নার, আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আয়োজন। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এবং ছুটির দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।