শ্রদ্ধাঞ্জলি

img

উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও সমাজ সংস্কারক ভূপেশ গুপ্ত

প্রকাশিত :  ১১:২৫, ০৫ আগষ্ট ২০২৫

উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও সমাজ সংস্কারক ভূপেশ গুপ্ত

সংগ্রাম দত্ত: ভাটি বাংলার এক কীর্তিমান পূরুষ ব্যারিস্টার ভূপেশ গুপ্ত । ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানা সদরে ২০শে অক্টোবর ১৯১৪ সালে এক সামন্ত ও জমিদার পরিবারে ভূপেশ গুপ্ত জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মহেশ চন্দ্র গুপ্ত।

তিনি কলিকাতা স্কটিশ চার্চ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন।ছাত্র অবস্থাতেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড জড়িয়ে পড়েন। বিপ্লবী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়।বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য ১৯৩০ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন।

১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বন্দী জীবন কাটান।কারাগারে অন্তরীণ অবস্থাতেই আইএ বিএ পাশ করেন।মুক্তি পেয়ে লন্ডন যান। সেখানে এলএল বি ডিগ্রি ও মিডল ট্যাম্পল থেকে ব্যারিস্টার পাশ করেন।।

১৯৫১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দমদম জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় রাজ্য সভার সদস্য নির্বাচিত হন।তিনি  বরাবরেই এই আসনের সদস্য ছিলেন।

১৯৫২ থেকে টানা ২২ বছর রাজ্য সভার সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৫৭ ১৯৬০ ১৯৬৯ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সন্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।তিনি কলিকাতা হাইকোর্টের ও আইনজীবী ছিলেন। তিনি শুধু আইনজীবীই ছিলেন না ছিলেন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান,সুলেখক,সাংবাদিক,সমাজ কর্মী এবং একজন স্হপতি।

১৯৬৬ সাল থেকে ভারতের নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক এবং দৈনিক স্বাধীনতার সম্পাদকীয় বোর্ডের সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।ভূপেশ গুপ্ত বাংলা ও ইংরেজীতে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ \" ফ্রিডম এন্ড দি সেকেন্ড ফ্রন্ট\" টেরার অব বেঙ্গল \" ফাইভ ইয়ারস প্লান \" এ ক্রিটিক বি-গ-লুট অন্যতম।

১৯৪৫ সালের ৮ এপ্রিল  পূর্ববঙ্গের নেত্রকোনায়  অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত( সর্বভারতীয়) কৃষক সন্মেলনে যোগদান করেন। 

৭০ একর জমির উপর প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছিল। লক্ষাধিক লোক সমাগম  হয়েছিল। পিসি যোশী এই সন্মেলনে সভাপতিত্ব  করেছিলেন।

জানা যায়, অনেক পূর্বেই ভূপেশ গুপ্তের পিতা মহেশ চন্দ গুপ্ত কিশোরগঞ্জ মহাকুমার ইটনায় একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার মনোবাসনা প্রকাশ করেছিলেন।  মহেশ চন্দ্র গুপ্তের সুযোগ্য পুত্র ইটনার কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার ভূপেশ গুপ্ত পিতার লালিত বাসনাকে বাস্তবায়িত করেন।

১৯৪৩ সালে নিজ আবাস ভূমে তাঁর স্বর্গীয় পিতা মহেশ চন্দ্র গুপ্তের নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেন ইটনা মহেশ চন্দ্র শিক্ষা নিকেতন। সূচিত হলো ইটনা মহেশ চন্দ্র শিক্ষা নিকেতনের সুবর্ণ ইতিহাস। এটিই হাওর অধ্যুষিত ইটনা থানার প্রথম হাইস্কুল।যার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন সিলুন্দ্যা গ্রামের ধীরু চৌধুরী। এই স্কুলটির মাধ্যমে গোটা ইটনা ও  মিঠামইন সহ সন্নিহিত ভাটি অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়।

বর্তমান প্রজন্মসহ এর আগের প্রজন্মের খুব বেশী মানুষ ভূপেশ গুপ্তকে জানেন না। এসব মনিষী সম্পর্কে যতই জানবো ততই আমাদের লাভ। তাই  ভাটি বাংলার কৃতি পূরুষদের স্মরণ করা ও তাঁদের জীবনী অনুসরণ করা প্রয়োজন।

ব্যারিস্টার ভূপেশ গুপ্ত চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায়  মস্কোতে ৬ই আগস্ট ১৯৮১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

বর্তমান বাংলাদেশে তাঁর জন্মভিটা গুপ্ত বাড়িটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যে বাড়িটিকে ঘিরে চারদিকের মানুষ আশায় থাকতো খাবার, চিকিৎসা, শিক্ষা,সুবিচারের তীর্থস্থান হিসাবে দেখতো ইটনার সকল ধর্মের মানুষ। বর্তমানে একশ্রেণীর প্রভাবশালী মহল নানা কৌশলে গুপ্ত বাড়ি ও হাওরের বিশাল সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্যারিস্টার ভূপেশ গুপ্তের জন্মভিটা গুপ্ত বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নিয়ে সংস্কার করা এবং তাঁর নামে বাড়িটিতে একটা জাদুঘর করা হলে কিছুটা হলেও তাঁর কাছ থেকে নেয়া বিশাল ঋণের বোঝা একটু হলেও শোধ হবে। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে বিপ্লবী ভূপেশ চন্দ্র গুপ্তকে। 

ইটনায় প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী ভূপেশ চন্দ্র গুপ্ত স্মৃতি সংসদ ইটনা কিশোরগাঞ্জ, এর নেতারা ইটনা পুরান বাজারের কর্মচারী কল্যাণ ক্লাব হতে গুপ্ত বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি “কমরেড ভূপেশ চন্দ্র গুপ্ত সড়ক” নামে নামকরণ সহ তার জন্মভিটা ঐতিহাসিক গুপ্ত বাড়িকে সংস্কার করে সরকারি ভাবে সংরক্ষণের জোর দাবি জানায়।


img

প্রথম সপ্তাহেই জমজমাট ইসলামী বইমেলা

প্রকাশিত :  ০৯:৪৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শুরুতেই জমে উঠেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা । সাধারণত প্রথম সপ্তাহে মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতার ভিড় তুলনামূলক কম থাকে, কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। শুরু থেকেই পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো, ফলে মেলায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ছুটির দিনে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল উপচেপড়া। কেউ বই দেখেছেন, কেউ কিনেছেন, আবার কেউ লিটলম্যাগ কর্নারে বসে আড্ডা দিয়েছেন তরুণ লেখক ও পাঠকদের সঙ্গে। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানও হয়েছে।

গার্ডিয়ান পাবলিকেশনসের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল হুদা জানান, এবারের মেলায় শুরু থেকেই পাঠকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মেলা শুরু হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে, এর মধ্যেই পাঠকদের আনাগোনা বেড়েছে। এবারের বইমেলা নিয়ে প্রচারণাও বেড়েছে। শুরু থেকেই মূলধারার গণমাধ্যমে মেলার খবর প্রকাশ হওয়ায় পাঠকের আগ্রহও বেড়েছে।’

এখন পর্যন্ত সীরাত ও শিশু বিষয়ক বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বেশি বলে জানান তিনি। শুক্রবার ছুটির দিনে বেচাবিক্রিও তুলনামূলক বেড়েছে।

সমকালীন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আরিফুল হক জানান, এবারের বইমেলা একেবারেই ভিন্ন। প্রথমবারের মতো বিদেশি প্রকাশনী অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্য দিনের তুলনায় আজ বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। সামনে বিদেশি প্রকাশনীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে ইনশাআল্লাহ।’

মেলায় ঘুরতে আসা তাশরীফ মাহমুদ নামে এক পাঠক বলেন, ‘এখনো ঘুরে ঘুরে বই দেখছি, আড্ডা দিচ্ছি। আজ বই কিনবো না, সামনের সপ্তাহ থেকে পছন্দের বই কেনা শুরু করবো।’

প্রতি বছরের মতো এবারও রবিউল আওয়াল মাস উপলক্ষে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এবারের মেলায় ১৯৯টি স্টল বসানো হয়েছে। এতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দেশের স্বনামধন্য ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও পুস্তক ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি মিশর, লেবানন ও পাকিস্তানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও অংশগ্রহণ করেছে।

এ ছাড়া মেলায় রয়েছে লেখক কর্নার, ফুড কর্নার, আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আয়োজন। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এবং ছুটির দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।