img

‘স্বাধীন করিম চাচা’

প্রকাশিত :  ০৫:৩৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:১১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘স্বাধীন করিম চাচা’

রেজুয়ান আহম্মেদ


ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় একাকী বসবাস করেন করিম চাচা। বয়স ৭৫ হলেও, তার চলাফেরা ও চিন্তাভাবনায় এখনও তারুণ্যের ছাপ স্পষ্ট। করিম চাচা সারা জীবন অবিবাহিত ছিলেন। আশপাশের অনেকেই তাকে জিজ্ঞেস করেন, “চাচা, এই বয়সে একা একা থাকেন কীভাবে? একা থাকা তো অনেক কষ্টের!” করিম চাচা হাসেন, কিছু বলেন না। তার হাসির মধ্যেই যেন জবাব লুকিয়ে থাকে। একসময় কাছের মানুষরাও বুঝে যায়, করিম চাচার একা থাকার পেছনে রয়েছে এক গভীর তৃপ্তি।


শৈশব থেকে করিম চাচা ছিলেন স্বাধীনচেতা। তিনি কখনোই অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে চাননি। পড়াশোনার সময়ও তার মনোজগত ছিল অন্যরকম। তার চারপাশে বন্ধু ছিল, কিন্তু নিজের মতো করে বাঁচার ইচ্ছাটা সবসময় প্রাধান্য পেত। ছাত্রজীবনের শেষ দিকে এসে করিম চাচা উপলব্ধি করেন, সমাজ যাকে একাকিত্বের কষ্ট বলে, সেটা তার জন্য আসলে এক মহান মুক্তির অনুভূতি।


করিম চাচা ছোটবেলা থেকেই কাজ করতে ভালোবাসতেন। যখন তার বন্ধুরা খেলার মাঠে সময় কাটাত, তখন করিম চাচা ব্যস্ত থাকতেন নতুন নতুন কাজ শেখায়। তিনি কখনো সময় নষ্ট করেননি। কাজ তার জীবনের পরম সঙ্গী হয়ে ওঠে। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে করিম চাচা কখনোই ক্লান্ত হননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, একা থাকার মানে কষ্ট নয়; বরং এটি স্বাধীনভাবে নিজের কাজ এবং জীবনকে উপভোগ করার এক দুর্দান্ত সুযোগ।


করিম চাচার প্রতিদিনের রুটিন ছিল পরিপূর্ণ। তিনি ভোরে উঠে প্রার্থনা করতেন, এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়তেন নানা সৃষ্টিশীল কাজে। তার হাতে তৈরি পাখির ঘর কিংবা বাগানের নকশা ছিল এলাকার মানুষের মধ্যে বিখ্যাত। তিনি সব সময় নিজেকে কাজে নিমগ্ন রাখতেন, যাতে অন্য কোনো চিন্তা তাকে গ্রাস করতে না পারে। তার বাড়ির ছোট্ট বাগানে গাছের যত্ন নিতে নিতেই করিম চাচা নিজের সুখ খুঁজে পেতেন।


করিম চাচার একাকিত্ব তার জন্য কখনো কষ্টের ছিল না। তিনি বলতেন, "পিছুটান আমাকে থামিয়ে দিতে পারে না। আমি উন্মুক্ত পাখির মতো উড়তে চাই। কাজের মধ্যে ডুবে থাকা আমার আনন্দ, এবং এর মধ্যে আমি সত্যিকারের স্বাধীনতা খুঁজে পাই।"


প্রতিবেশীরা যখন তার সঙ্গে গল্প করতে বসতেন, তখন করিম চাচা তাদের বলতেন, “মানুষ ভাবে একা থাকা মানেই কষ্ট। কিন্তু আমি বলি, যারা একা থাকতে পারে, তারা নিজের জীবনের আসল মাস্টার। তুমি যখন একা থাক, তখন তোমার নিজের ভালো লাগার স্বাধীনতা থাকে। কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না, কারো পিছুটানে আটকে থাকতে হয় না। এই একাকিত্ব তোমাকে নতুন কিছু শিখতে, নতুন কিছু ভাবতে আর নিজের সৃষ্টিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।”


করিম চাচা বিশ্বাস করতেন, জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য হলো নিজের কাজের মধ্যে ডুবে থাকা, এবং সেই কাজের মাধ্যমে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল এক নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের প্রস্তুতি। তিনি কখনো থামেননি, কখনো কারো ওপর নির্ভর করেননি। কাজের মাঝে নিজেকে আরও বেশি করে খুঁজে পেয়েছেন।


একদিন এক তরুণ এসে করিম চাচাকে জিজ্ঞেস করল, “চাচা, আপনি তো কখনো বিয়ে করেননি, একা একা এত বছর কীভাবে কাটিয়েছেন?” করিম চাচা মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, “বিয়ে করা না করা জীবনের একটা ছোট অংশ। কিন্তু নিজের সঙ্গে সুখে থাকার ক্ষমতা থাকাটা সবচেয়ে বড় বিষয়। আমি কাজের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। আর জীবনের প্রতি মুহূর্তেই আমি তৃপ্ত।”


করিম চাচার জীবন আমাদের শেখায়, একা থাকা মানে নয় যে আপনি একা; বরং এটি আপনার নিজের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা, নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর ক্ষমতা এবং নিজের কাজের প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসার প্রতীক। সমাজ যাকে একাকিত্বের কষ্ট বলে, করিম চাচা সেটাকে দেখেছেন জীবনের মুক্তি হিসেবে।


তিনি তার জীবনের প্রতিটি দিন কাজ করে কাটিয়েছেন, আর সেই কাজই তার কাছে পরম শান্তি নিয়ে এসেছে। করিম চাচার জীবনের গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যারা নিজেদের জীবনের মাস্টার, তারা কখনোই একা নয়। বরং তারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়ায়, এবং তাদের কাজের মধ্যে খুঁজে পায় সত্যিকারের সুখ।


শেষ।

img

রূপে ভরা আশ্বিন

প্রকাশিত :  ০৮:১০, ২০ অক্টোবর ২০২৫

শিউলিতলায় শিউলি হাসে,

শুভ্র বকুল ঝরছে ঘাসে।

সকালবেলা তালের পিঠা,

খেতে লাগে বড়োই মিঠা।


নদীর তীরে কাশের মেলা,

নীল আকাশে মেঘের ভেলা।

বাবুই পাখির বাসা দূরে,

গাইছে বাবুই মধুর সুরে।


সবুজ মাঠে নবীন ধানে,

পুলক জাগায় চাষীর প্রাণে,

রূপে ভরা আশ্বিন মাসে,

সবুজ ঘাসে মুক্তা হাসে।