
কিশোরগঞ্জে জমে উঠেছে পাঁচ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট

সংগ্রাম দত্ত: শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলায় জমে উঠেছে প্রায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট। একে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশে ভিড় করছেন দর্শনার্থী, পূজা উদ্যোক্তা ও ঢাকির দলগুলো। ঢাকের তালে তালে কাঁসর, সানাই, বাঁশি আর করতালের মাদকতাময় সুরে মুখরিত হয়ে উঠেছে কটিয়াদীর পুরান বাজার এলাকা।
ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা
প্রতিবছর দুর্গাপূজা শুরুর আগের দুই দিনব্যাপী এ হাট বসে কটিয়াদী পৌর এলাকার প্রেসক্লাব সংলগ্ন পুরাতন বাজারে। এ বছর শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া হাট চলবে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলবল নিয়ে হাজির হয়েছেন ঢাকিরা। বাজনার ঝংকারে তারা যেন দর্শকদের কাছে উৎসবের আনন্দ আগাম পৌঁছে দিচ্ছেন।
ঢাকিদের নাচ–গান ও দাম
ঢাকিরা শুধু বাজনাই নয়, সাথে নিয়ে আসেন ঢোল, কাঁসর, সানাই, খঞ্জরি ও বাঁশি। তারা দলবদ্ধভাবে নেচে–গেয়ে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শন করেন। পূজা আয়োজকরা মন ভরে শুনে সেরা দল বেছে নেন। দাম উঠছে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকারও বেশি। পরে দর–কষাকষি শেষে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঢাকিদের দল পূজামণ্ডপের উদ্দেশে রওনা দেয়।
ইতিহাসের গল্প
জনশ্রুতি রয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কটিয়াদীর চারিপাড়া গ্রামে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকিদের সমাবেশ ঘটান। ঢাকার বিক্রমপুর পরগনার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) ঢাকিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি নৌপথে তাদের যাত্রাঘাটে একত্র করেন। সেখানে রাজা নিজে দাঁড়িয়ে ঢাকের বাজনা শোনেন এবং সেরা দলকে পুরস্কৃত করেন। সেই আয়োজন থেকেই যাত্রাঘাটে ঢাকের হাটের সূচনা। পরে এ হাট স্থানান্তরিত হয়ে কটিয়াদীর পুরান বাজারে বসতে শুরু করে এবং আজও তা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে।
উৎসবমুখর পরিবেশ
আয়োজকরা জানান, দেশের একমাত্র ঢাকের হাট এটি। পুলিশ প্রশাসন ঢাকিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। উৎসবপ্রেমী মানুষদের পদচারণায় এবং ঢাকির দলগুলোর তালে–তালে পুরো কটিয়াদী এখন আনন্দঘন পরিবেশে ভাসছে।