img

গুলি লাগলে প্রথম ৩০ মিনিটে যা করবেন

প্রকাশিত :  ১১:৫৬, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

গুলি লাগলে প্রথম ৩০ মিনিটে যা করবেন

গায়ে গুলি লাগা মুহূর্তের মধ্যে জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান তৈরি করতে পারে। কোথায় গুলি লেগেছে, কী ধরনের গুলি, কত দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া গেছে—এসবের ওপর নির্ভর করে আহত ব্যক্তির জীবন ঝুঁকি বাড়ে বা কমে। তবে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিচে গুলিবিদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রথম ৩০ মিনিট বা হাসপাতালে পৌঁছার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত কী করা উচিত, কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের চিকিৎসা লাগে—সবই ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো।

প্রথমেই যা করবেন

যদি আপনি বা আশেপাশের কেউ গুলিবিদ্ধ হন, তবে প্রাথমিকভাবে তিনটি কাজ খুব জরুরি—

১.নিরাপদ স্থানে যান

গুলি লাগলে প্রথম ৩০ মিনিটে যা করবেন

দিনে বা সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত, যা বলছে বিজ্ঞান

আহত ব্যক্তি হাঁটতে বা দৌড়াতে পারলে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সাহায্য করুন।

২. অস্ত্র নিরাপদ করুন

দুর্ঘটনাবশত গুলিবিদ্ধ হলে নিশ্চিত করুন অস্ত্র আর কারও ক্ষতি করতে না পারে।

৩. ৯৯৯-এ ফোন করুন

নিরাপদে পৌঁছানোর পর সঙ্গে সঙ্গে জরুরি সেবায় ফোন দিন এবং অপারেটরের নির্দেশনা অনুসরণ করুন। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোই জীবন বাঁচানোর সবচেয়ে বড় উপায়।

রক্তপাত বন্ধ করা

গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে বাঁচাতে প্রথম কাজ হলো রক্তপাত থামানো। এজন্য রক্ত বের হচ্ছে এমন স্থানে শক্ত চাপ দিতে হবে। রক্তপাত বেশি হলে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরার মতো জোরালো চাপও প্রয়োজন হতে পারে।

ড্রেসিং ব্যবহার করুন

ক্ষতস্থানে পরিষ্কার কাপড়, গজ, তোয়ালে বা যেকোনো কাপড় চেপে ধরুন। এতে রক্ত জমাট বাঁধতে সুবিধা হবে।

টুর্নিকেট (সতর্কভাবে)

পেশাদার টুর্নিকেট থাকলে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ভুলভাবে লাগালে বিপদ বাড়তে পারে। টুর্নিকেট না থাকলে চাপ দেওয়ার ওপরই জোর দিন।

মনে রাখবেন, আহত ব্যক্তিকে কখনোই পানি, খাবার বা পানীয় দেবেন না। শকে গেলে বমি হতে পারে এবং খাবার-তরল শ্বাসনালিতে ঢুকে যেতে পারে।

পা বা মাথা উঁচু করবেন না

অনেকেই আহত ব্যক্তির পা উঁচু করে দেন, এটি ভুল। এতে বুক বা পেটের গুরুতর রক্তপাত বেড়ে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্টও তৈরি হতে পারে।

ব্যক্তি সচেতন থাকলে তিনি যেভাবে আরাম পান সেভাবে বসতে বা শুতে দিন। অচেতন হলে রিকভারি পজিশন-এ (কাত হয়ে, এক পা ভাঁজ করে) রাখুন।

শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগলে করণীয়

১. বুকে গুলি লাগলে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও প্রধান ধমনী গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।অনেক ক্ষেত্রে সাকিং চেস্ট উন্ড হয়, এই ক্ষত দিয়ে বাতাস ঢুকে ফুসফুস বসে যেতে পারে।

এই অবস্থায় ক্ষতটি প্লাস্টিক জাতীয় কিছু দিয়ে সিল করে দিন যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। শ্বাসকষ্ট বাড়লে সিলটি খুলে দিন।

২. পেটে গুলি লাগলে তীব্র রক্তপাত,অঙ্গ ক্ষতি এবং অন্ত্র বা পাকস্থলীর ফুটো হয়ে সংক্রমণ হতে পারে। তাই ক্ষতস্থানে শক্ত চাপ দিন। যদি পেট দ্রুত ফুলে যায়, তবে ক্ষত ছোট মনে করে ভুলবেন না। সাধারণত এই ক্ষেত্রে জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।

৩. হাত-পায়ে গুলি লাগলে রক্তনালী কেটে যাওয়া, স্নায়ু ক্ষতি এবং হাড় ভেঙে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আহত অঙ্গ নাড়ানো উচিত নয়। শুধু রক্তপাত থামানোর ওপর জোর দিন।

৪. ঘাড়ে বা মেরুদণ্ডে গুলি লাগলে পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে।তাই রোগীকে কখনোই নড়াবেন না। এতে স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘাড়ের সামনে গুলি লাগলে রক্তপাত বন্ধে চাপ দিন।

গুলি লাগলে কেন ক্ষতি ভয়াবহ হয়?

বুলেট শুধু একটি ফুটোর মতো ক্ষত তৈরি করে না, শরীরের ভেতরে লাফিয়ে, ঘুরে আরও অনেক স্থানে আঘাত করতে পারে।ক্ষতি নির্ভর করে, গুলির অবস্থান, বুলেটের আকার এবং বুলেটের গতির ওপর।

চিকিৎসা ও সুস্থ হতে কত সময় লাগে?

সহজ গুলিবিদ্ধ ক্ষত (যেখানে অঙ্গ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি) ১০ দিনের মধ্যেও সেরে উঠতে পারে। কিন্তু জটিল আঘাতে সময় অনেক বেশি লাগে। অন্যদিকে মানসিক ধাক্কা ভয়, দুঃস্বপ্ন, খিদে না পাওয়া, অস্থিরতা—দীর্ঘদিন থাকতে পারে। এসব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আলোচ্য বিষয়গুলো প্রাথমিক করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে। মূল চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

সূত্র : ভেরি ওয়েল হেলথ


img

স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তির ৫ উপায়

প্রকাশিত :  ০৭:১৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

দিন শুরু থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত অনেকে স্মার্টফোনের হাতে বন্দী থাকে! অথচ এই প্রযুক্তিনির্ভরতা আমাদের জীবন থেকে কেড়ে নিচ্ছে মূল্যবান সময়, মনোযোগ ও সম্পর্কের গভীরতা। মার্কিন সাংবাদিক ও লেখিকা ক্যাথরিন প্রাইস ‘হাউ টু ব্রেকআপ উইদ ইউর ফোন’ নামে বইয়ে তুলে ধরেছেন, কীভাবে ধাপে ধাপে প্রযুক্তির আসক্তি থেকে বেরিয়ে এসে জীবনকে আরও প্রাণবন্ত করা যায়।

ক্যাথরিন প্রাইসের বই থেকে ৫টি সহজ ধাপ রইল পাঠকদের জন্য।

নিজের উদ্দেশ্য ঠিক করুন

শুধু সময় কমানোই নয়, কেন আপনি মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমাতে চান, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করাটা জরুরি। আপনি কিসে সময় দিতে চান? পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বই পড়া, হাঁটা বা আপনার পছন্দগুলোকে আগে ঠিক করতে হবে। একটি চিঠি লিখে আপনার মোবাইল ফোনকে ‘ব্রেকআপ লেটার’ হিসেবে দিতে পারেন। এতে আপনার ক্ষোভ, কষ্ট আর আশা স্পষ্টভাবে উঠে আসবে।

যেমন ‘প্রিয় ফোন, তোমার কারণে নিজের চিন্তাগুলো আলাদা করতে পারি না। আমি আমার সন্তান ও পরিবারকে বেশির ভাগ সময় দিতে চাই। আমি আগের মতো সব ফিরে পেতে চাই।’ এভাবে লিখতে পারেন। কিংবা আপনার সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে আরও ভালো করতে পারেন সেই চিঠি।

একবার চিন্তা করে দেখুন, প্রতিদিন যদি আপনি ৪ ঘণ্টা মোবাইল ফোনে কাটান, তাহলে বছরে প্রায় ২ মাস আপনি শুধু স্ক্রিনের পেছনে কাটিয়ে দিয়েছেন! এই সময়গুলো কিন্তু আসলে আপনার জীবনেরই অংশ।

বাস্তব জীবনের আনন্দ খুঁজে নিন

আমরা অনেক সময় একাকিত্ব বা একঘেয়ে সময় থেকে মুক্তি পেতে মোবাইল ফোনে ঢুকে পড়ি। কিন্তু তাতে কাটানো সময়ের পর আমাদের আরও একা লাগতে পারে। এর বদলে এমন কাজ খুঁজুন, যা আপনাকে আনন্দ দেয়। আপনি কী করতে ভালোবাসেন? নতুন কী কী শিখতে চান? কাদের সঙ্গে সময় কাটাতে চান—এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করুন।

১০ মিনিট সময় নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করুন। নিজে বা পরিবারের সঙ্গে বসে মজার পরিকল্পনা করুন। যেমন নতুন রেসিপি, পছন্দের বই পড়া, হাঁটতে যাওয়া বা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা।

মোবাইল ফোনকে একঘেয়ে করে ফেলুন

আপনার ফোনে থাকা অ্যাপগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করুন—

১. প্রয়োজনীয় ও সহায়ক অ্যাপ (যেমন ঘড়ি, মানচিত্র, ব্যাংক অ্যাপ)

২. সময় নষ্ট করে এমন অ্যাপ (যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, শপিং, গেমস)

প্রথম ধাপ, সময় নষ্টকারী অ্যাপগুলো ডিলিট করুন। ফোনে ঢুকে পড়ার অভ্যাস ঠেকাতে হোমস্ক্রিনে কেবল দরকারি অ্যাপ রাখুন। আরও ভালো হয় যদি আপনার ফোনটি সাদা-কালো মুডে চালান। তাতে চোখের আকর্ষণ কমে যাবে। স্ক্রিন টাইম কমানোর জন্য অ্যাপ-ব্লকারও ব্যবহার করতে পারেন।

ফোন ব্যবহারের নিয়ম তৈরি করুন

ফোন ব্যবহারে কিছু নিয়ম তৈরি করলে পরিবারে সময় কাটানো আরও অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে। যেমন খাবারের সময় সবাই মিলে ফোন এক পাশে রেখে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ বাড়বে, সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে। ঘরে একটি ‘কথার টুকরো’র বাটি রাখতে পারেন, যেখানে পরিবারের সবাই ছোট ছোট প্রশ্ন বা গল্প লিখে রাখবে, যা খাবারের সময় আলোচনা করা যাবে। সপ্তাহ শেষে পেছন ফিরে তাকালে দেখবেন, এসব ছোট আনন্দই অনেক বড় হয়ে উঠেছে।

দিন শুরু ও শেষ হোক নিজের মতো করে

সকালে ঘুম থেকে উঠে বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় আমরা যে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাই, তা আমাদের মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। চেষ্টা করুন মোবাইল ফোনকে শোয়ার ঘরের বাইরে রাখতে। প্রয়োজনে ঘরে আলাদা অ্যালার্ম ক্লক ব্যবহার করুন, ঘুমানোর আগে বিছানার পাশে পছন্দের বই রাখুন।

নিজের জীবনকে যন্ত্রের দখল থেকে ফিরিয়ে আনতে চাইলে একটু সাহস আর সচেতনতা দরকার। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে। তবে সেটাই যদি জীবনের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে, তাহলে আপনার থামার সময় এসে গেছে। তাই মোবাইল ফোন থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তব জীবনটা উপভোগ করুন।

সূত্র: নেক্সট বিগ আইডিয়া ক্লাব